প্রাতর্ভ্রমণ উপকারী, কিন্তু বেলাতেও কি হাঁটা যায়? ছবি: সংগৃহীত।
সুস্থ থাকতে হাঁটাহাটি জরুরি, বলেন চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদেরা। শরীরচর্চা, যোগব্যায়াম করতে না পারলেও সারা দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটলে শরীর সুস্থ রাখা যায়। কিন্তু হাঁটবেন কখন? কেউ বলেন, সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা যায়। কেউ বলেন, রাতে খাওয়ার পর খানিক হাঁটলেও হজম ভাল হয়, শরীর ভাল থাকে। কিন্তু সত্যিই কি হাঁটার কোনও উপযুক্ত সময় আছে?
ফিটনেস কোচ মিতেন কাকিয়া বলছেন, ‘‘হাঁটাহাটির কোনও ঠিক বা ভুল সময় নির্বাচন করা যায় না। শুধু দেখা দরকার, ঘড়ি ধরে হাঁটা যেন জীবনে বাড়তি চাপের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।’’ তাঁর কথায়, হাঁটাহাটি করার জন্য নিজের সুবিধামতো সময় বার করা যেতেই পারে।
সকালে হাঁটার উপকারিতা: সুস্থ থাকার জন্য প্রাতর্ভ্রমণ, অর্থাৎ ভোরবেলা হাঁটার কথাই বেশির ভাগ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মনে ভাসে। এর একাধিক উপকারিতা রয়েছে। মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, “সকালের পরিবেশ শুধু শরীর নয়, মনোজগতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভোরের আলো ও হাওয়া গায়ে লাগলে মন আপনা থেকেই ভাল হয়ে যায়।’’ গরমের দিনে সকাল ৫টা-সাড়ে ৫টা থেকে ছ’টা বা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত, নরম রোদ্দুর আর ঠান্ডা হাওয়া বেশ আরামদায়ক থাকে। যা দিনের অন্য সময়ে চট করে পাওয়া যায় না। ভিটামিন ডি সংশ্লেষেও গায়ে এই রোদ লাগা জরুরি। শীতকালে একটু বেলার দিকে হাঁটা গেলেও গরমকালে রোদের তাপের জন্যই সকালে সাড়ে ছ’টা-৭টার বেশি হাঁটাহাটি করা যায় না।
কিন্তু যাঁদের সকালে কাজ থাকে বা যাঁরা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন, তাঁরা কি হাঁটবেন না?
বিষয়টা তেমন নয়। বেলা করে উঠেও কেউ হাঁটতেই পারেন। আসলে দিনের যে সময়েই হাঁটা হোক না কেন, উপকারিতা একই থাকে। তবে ফিটনেস কোচ কাকিয়া বলছেন, হাঁটাহাটি হোক বা শরীরচর্চা, তা যেন ক্লান্তিকর বা কষ্টদায়ক না হয়ে পড়ে। রোদের তাপ কম থাকলে, মৃদুমন্দ হাওয়ায় হাঁটতে যেমন ভাল লাগে, তেমনই সহজে ক্লান্তি আসে না। আবার চড়া রোদে হাঁটতে গেলে দ্রুত যে কেউ হাঁপিয়ে যেতে পারেন। মানুষের শরীর সার্কাডিয়ান ছন্দে চলে। ঘড়ির মতোই এটি। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শরীরও ক্রমশ সক্রিয় হয়। তবে ভরদুপুরে নয়, সূর্য ডোবার পর বা বিকেল পাঁচটার পর হাঁটাহাটি করা ভাল। শিশু বা বয়স্কেরা যদি ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটতে পারেন, তা হলে তা শরীর পক্ষে আরও ভাল হয়।
উপকারিতা: তবে দিনের যে কোনও সময় কাজের প্রয়োজনে হাঁটলেও তার উপকারিতা থাকে। ওজন কমাতে, হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, মাংসপেশি মজবুত করতে, হজম ভাল করতে সাহায্য করে হাঁটাহাটি। হাঁটলে মানসিক অবসাদও কমে। তবে হাঁটার উপকারিতা পেতে গেলে সে জন্য কিছুটা প্রস্তুতি দরকার। ফিটনেস প্রশিক্ষকেরা বলছেন, সকালে হাঁটা নিঃসন্দেহে ভাল। তবে তা যেন জোর করে হাঁটতে হবে বলে না হয়। বরং যে সময় হাঁটতে যাবেন তার অন্তত আধ ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে ওঠা জরুরি। হাঁটতে যাওয়ার আগে গা-গরম করার জন্য হালকা শরীরচর্চা করে নিলে আরও ভাল হয়।