ছবি: প্রতিনিধিত্বমূলক।
খাঁটি, নিখুঁত ৬-৭ ঘণ্টার ঘুম। শেষ কবে সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে অন্তত চার দিন এমন ঘুমিয়েছেন? মনে করে বলতে পারবেন? ভাবছেন এ আবার কি প্রশ্ন! এ যুগে এমন প্রশ্ন করার কথা মাথায় আসেই বা কী করে! তা হলে বরং প্রশ্নটা আরও সহজ করে দেওয়া যাক— সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন খাঁটি ৬ ঘণ্টার ঘুম হয় কি? উত্তর কী হতে চলেছে তা মোটামুটি জানা। কারণ, সমীক্ষা বলছে ভারতের ৬১ শতাংশ মানুষই দিনে ৬ ঘণ্টা ঘুমোতে পারেন না। অন্তত বিগত ১২ মাসে পারেননি। প্রতি দিন ৬ ঘণ্টা ঘুমোনোর সুযোগ পেয়েছেন কেবলমাত্র ৩৯ শতাংশ ভারতীয়। অনুপাতটা দু’বছর আগেও ছিল ৫০-৫০। অর্থাৎ, দু’বছরে ভারতীয়দের মধ্যে অনিদ্রা বেড়েছে ১১ শতাংশ! এই পরিস্থিতিতেই গত কয়েক দিনে আচমকা একটা শব্দ হইচই ফেলে দিয়েছে পৃথিবী জুড়ে— ‘স্লিপম্যাক্সিং’। যা নিদ্রাপ্রেমীদের ঘুম নিয়ে জাগিয়ে তুলেছে!
কী এই স্লিপম্যাক্সিং?
নামেই বোঝা যায়— এমন কিছু, যা ঘুমের সময় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বা ঘুমকে আরও ভাল এবং গভীর করে। ঘুমপাড়ানি সেই সব পদ্ধতি নিয়েই সম্প্রতি আলোচনা-বিলোচনা শুরু হয়েছে সমাজমাধ্যমে। ছবি, ভিডিয়ো, রিলে সর্বত্রই শুরু হয়েছে ভাল ঘুমের রহস্যোদ্ঘাটন। স্বাভাবিক ভাবেই ‘ভাইরাল ট্রেন্ডে’ পরিণত হয়েছে ‘স্লিপম্যাক্সিং’। কিন্তু ‘স্লিপম্যাক্সিং’ বা ঘুমের মান বৃদ্ধি কি এত সহজ? কয়েকটি নিয়ম মানলেই কি পৌঁছে যাওয়া যায় ঘুমের স্বর্গরাজ্যে? ‘স্লিপম্যাক্সিং’য়ের জন্য ঠিক কী কী পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে?
ভারতের ৬১ শতাংশ মানুষই দিনে ৬ ঘণ্টা ঘুমোতে পারেন না। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
স্লিপম্যাক্সিংয়ের পরামর্শ
খাঁটি ঘুমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমন সমস্যা দূর করার চেষ্টা করা হয় স্লিপম্যাক্সিংয়ে। আর যাঁরা এই পরামর্শ দেন, তাঁদের বলা হচ্ছে স্লিপম্যাক্সার।
১। মাউথ টেপ: এই ধরনের টেপ মুখে আটকানো হয় মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া বন্ধ করার জন্য। সাধারণত নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া ঘুমোনোর জন্য ভাল। এতে শরীরে অক্সিজেন সঞ্চালনও হয় বেশি।
২। ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ তেল: স্লিপম্যাক্সারদের দাবি, এই তেল ঘুমের গভীরতা বৃদ্ধি করে।
৩। স্লিপ ট্র্যাকার: ঘুম কতটা গভীর হচ্ছে, কত ক্ষণ গভীর ঘুম, কত ক্ষণই বা হালকা ঘুম হচ্ছে, তার হিসাব রাখতে সাহায্য করে স্লিপ ট্র্যাকার। স্লিপম্যাক্সারদের বক্তব্য, সমস্যা বুঝলে তবেই না সমাধান হবে!
৪। জ’ স্ট্র্যাপ: নাক ডাকার সমস্যা থাকলে এই স্ট্র্যাপ সাহায্য করে। পাশাপাশি স্লিপম্যাক্সাররা বলছেন, ঘুমোনোর সময় মুখ বন্ধ রাখতে সাহায্য করে বলে, ফুসফুসে অক্সিজেন সঞ্চালন বেশি হয়।
৫। রেড লাইট থেরাপি: ইনসমনিয়া থাকলে রেড লাইট থেরাপি ঘুমে সাহায্য করতে পারে, বলছেন স্লিপম্যাক্সারেরা।
৬। মেলাটোনিন : ঘুমোতে সাহায্য করে মেলাটোনিনও।
৭। অশ্বগন্ধা: নিয়মিত অশ্বগন্ধা খেলেও গভীর ঘুমের সময় বাড়ে বলে দাবি।
খাঁটি ছ’ঘণ্টার ঘুম আজকাল এতটাই বিরল যে মানুষ সেটুকু পাওয়ার জন্য যে কোনও কিছুকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সত্যিই কি কাজ করে?
চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রত্যেকটি পদ্ধতিরই কেনও না কোনও ভাল দিক আছে। তবে এটাও ঠিক যে, শুধু কয়েকটি পদ্ধতি মানলেই ভাল ঘুম হবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। যেমন ম্যাগনেশিয়াম তেলকে অনেকেই বলে থাকেন ঘুমের জন্য উপকারী। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই সেটি সমান কার্যকরী কি না সে ব্যাপারে আরও গবেষণা প্রয়োজন। একই ভাবে ‘মাউথ টেপিং’ কারও কারও ক্ষেত্রে সহায়ক হলেও সবার ক্ষেত্রে উপযোগী নয়।
চিকিৎসক শঙ্কর এস বিরাদর আবার বলছেন, ‘‘আসলে খাঁটি ছ’ঘণ্টার ঘুম আজকাল এতটাই বিরল যে মানুষ সেটুকু পাওয়ার জন্য যে কোনও কিছুকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। যে সমস্ত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তার বেশ কয়েকটি অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে। এটা যেমন ঠিক, তেমনই এটাও ঠিক যে, কাজ করবে কি না তা কিছু কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে।’’
তবে মনোরোগ চিকিৎসক স্নেহা শর্মা বলছেন, ‘‘গতির যুগে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ, বেহিসাবি জীবনযাত্রা, কম্পিউটার বা মোবাইলের পর্দার দিকে দীর্ঘ ক্ষণ তাকিয়ে থাকার ফলেও ক্রমশ ঘুমের মাত্রা এবং মান কমছে। সেটা যেমন সমস্যা, তেমনই ঘুম নিয়ে অতি কাতর হওয়ার ফলে হিতে বিপরীতও হচ্ছে।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ঘুম কেমন হচ্ছে না হচ্ছে, তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ঘুম না হলেও তৈরি হচ্ছে মানসিক চাপ। যাকে বলে ‘অর্থোসমনিয়া’। ‘স্লিপম্যাক্সিং’ করতে গিয়ে সেই সমস্যায় পড়ে গেলে আবার মুশকিল।