বয়সজনিত বেশ কিছু অসুখে ভুগছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত
কলকাতা থেকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে সোমবার সকালে ভুবনেশ্বর উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সেখানকার এমস পার্থের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানিয়ে দিল, তাঁর শরীরে পুরনো কিছু সমস্যা আছে বটে, তবে তা তেমন মারাত্মক কিছু নয়। এ জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে সোমবার সন্ধ্যার মধ্যেই এমস থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
আদালতের নির্দেশ মেনেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পার্থের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়েছে ভুবনেশ্বরের এমস। সোমবার বিকেলে এমসের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর আশুতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওঁর চার-পাঁচ রকমের রোগ রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে উনি অনেক ওষুধ খাচ্ছেন। তাঁর অসুস্থতা ‘সিরিয়াস’ নয়। আমরা তাঁকে দ্রুত ছেড়ে দেব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কিছু নিয়মিত সমস্যায় ভুগছেন উনি। ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। তবে হাসপাতালে ভর্তি রাখার দরকার নেই।’’ পার্থের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত রিপোর্ট এমসের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ, ইডি এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীর হাতে।
কত দিন কোনও রোগে ভুগলে তাকে ক্রনিক রোগ বলে?
কোনও রোগে যদি তিন মাসের বেশি সময় ধরে কেউ ভোগেন, তাকে ‘ক্রনিক’ বা দীর্ঘ রোগ বলা যেতে পারে। সাধারণত এই ধরনের রোগ বছর খানেক কিংবা তারও বেশি সময় ধরে ভোগায়। এবং সঠিক চিকিৎসা না করালে ধীরে ধীরে এই ধরনের রোগের অবনতি হতে থাকে। যা ডেকে আনে অন্য অনেক শারীরিক জটিলতা। যেমন কারও যদি ডায়াবিটিস থাকে, তা হলে তার প্রভাবে চোখের সমস্যা, স্থূলতা, হৃদ্রোগের মতো নানা অন্য সমস্যাও হতে পারে।
এমস ভুবনেশ্বর
বয়সজনিত কোন রোগগুলি বেশি দেখা যায়?
সাধারণত বয়সের সঙ্গে কিছু কিছু রোগ বেশি বাসা বাঁধে শরীরে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন, হৃদ্রোগ, ক্যানসার, ডায়াবিটিস, আর্থারাইটিসের মতো রোগ বেশি দেখা যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি অবং শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়ে পড়াও খুবই স্বাভাবিক।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এমসের কোন কোন বিভাগের চিকিৎসক দেখলেন?
প্রথমেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ওজন, উচ্চতা এবং পাল্স রেট দেখা হয়। তার পর তাঁর কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয় তিনি কোন কোন রোগের জন্য কী কী ওষুধ দীর্ঘ দিন ধরে খাচ্ছেন। সেই অনুযায়ী চার জন চিকিৎসকের একটি দল তাঁর যাবতীয় শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে জানান, হাসপাতালে ভর্তি থাকার কোনও প্রয়োজন তাঁর আপাতত নেই।
চার জন চিকিৎসকের মধ্যে ছিলেন কার্ডিয়োলজি, নেফ্রোলজি, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এবং রেস্পিরেটরি/মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে পার্থকে একাধিক বার দেখা গিয়েছে বুক হাতে থাকতে। তাই হৃদ্রোগ বা কার্ডিয়োলজি বিভাগের চিকিৎসক তাঁর হৃদ্যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখেন। কিডনির কোনও দীর্ঘ বা জটিল সমস্যা থাকলে সাধারণত নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নেন সকলে। তবে যাঁদের দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবিটিস রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে কিডনি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। মেডিসিন বা রেস্পিরেটরি বিভাগের চিকিৎসক সাধারণত ফুসফুস এবং বাকি শারীরিক পরীক্ষা করে দেখেন। শরীরের যে হরমোনগুলি আমাদের খিদে-তৃষ্ণা, রক্তচাপ, বিপাক হার, কোলেস্টেরল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সেই হরমোনের কোনও তারতম্য রয়েছে কি না, তা দেখেন। এবং প্রয়োজন মতো চিকিৎসা করেন। ডায়াবিটিস থাকলে শরীরে নানা হরমোনের গোলমাল থাকা স্বাভাবিক। তাই এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ জরুরি হয়ে পড়ে।