শরীরের ব্যথা-বেদনা কি ফোম রোলার ব্যবহারের ফলে কমে? ছবি: সংগৃহীত।
যতই হৃতিক রোশন বা ভিকি কৌশলের নাচের ভিডিয়ো দেখুন, সকালে ঘুম থেকে উঠে জিমে আপনি যেতে পারবেন না। বাড়ির পাশেই তরুণ সঙ্ঘ। সেখানকার প্রায় সব প্রবীণ সদস্যই সকাল-বিকেল হাঁটতে বেরোন। এ দিকে, পুজো আসতে বাকি আর মাত্র ১১ দিন। এক রকম লজ্জার মাথা খেয়ে জোর করে ঘুম থেকে উঠে সেই প্রবীণদের সঙ্গে পা মিলিয়ে ক’দিন হাঁটতে গিয়েছিলেন। সকলে এমন ভাবে তাকালেন যেন কী অপরাধটাই না করে ফেলেছেন। কিন্তু শরীরের ব্যথা-বেদনা তো আর বয়স দেখে আসে না। বাড়ি বসে এমন কোন মন্ত্রবলে তাকে বশে আনবেন? শরীরচর্চা মানেই যে ভারী ভারী ওজন তোলা, এমন তো নয়। হালকা অথচ দেহের বিভিন্ন অংশের জন্য কাজের এমন অনেক সামগ্রী রয়েছে, যেগুলি দিয়ে বাড়িতেই শরীরচর্চা করা যায়। তেমন একটি জিনিস হল ফোম রোলার।
ফোম রোলার কী?
ফোম রোলিং হল শরীরচর্চার বিশেষ একটি পদ্ধতি। ফোম রোলারের সাহায্যে এই ব্যায়াম করতে হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘সেল্ফ-মায়োফ্যাসিয়াল রিলিজ় টেকনিক’ বলা হয়। জিম তো বটেই, ফিজিয়োথেরাপিতেও এই ফোম রোলারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
ফোম রোলার দিয়ে ব্যায়াম করতে খুব বেশি কসরত করার প্রয়োজন পড়ে না। পেশির ব্যথা, প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এই বস্তুটি। দেহের বিভিন্ন অস্থিসন্ধির নমনীয়তা বৃদ্ধি করতেও এই ফোম রোলারের সাহায্য নেওয়া যায়। বয়স্কদের জন্যও এই জিনিসটি দারুণ কাজের।
যাঁরা জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করেন, তাঁদের কাছে এই বস্তুটি একেবারে ‘জলভাত’-এর মতো। কিন্তু যাঁরা নতুন, তাঁদের কয়েকটি বিষয় জেনে নিতে হবে। তা ছাড়া ‘ফোম রোলিং ফর বিগিনার্স’ লিখে ‘গুগ্ল বাবা’-কে জিজ্ঞাসা করলে সে-ও তার পরামর্শের ঝুলি উপুড় করে দেবে।
ফোম রোলার ব্যবহার করবেন কেন?
১) ফোম রোলার শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে। পেশির প্রদাহ নিরাময় করে। বেশি নয়, কাজ থেকে ফিরে মাত্র মিনিট পনেরো দেহের নীচে ফোম রোলার রেখে বিশেষ পদ্ধতিতে গড়িয়ে নিতে পারলেই অনেকটা আরাম মিলবে।
২) শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে ফোম রোলারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। জিমে শরীরচর্চা বা যোগাসন করার পর ব্যথা হলে ফোম রোলারের সাহায্যে একটু স্ট্রেচিং করতে পারেন।
৩) দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, রক্তবাহিকা, হাড় এবং স্নায়ুর ফাইবারের উপর এক ধরনের পাতলা আস্তরণ থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘ফ্যাসিয়া টিস্যু’ বলা হয়। বিশেষ ধরনের ফোম রোলার ‘ফ্যাসিয়া’ টিস্যুগুলি নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।
৪) একটানা চেয়ার-টেবিলে সোজা হয়ে বসে পিঠ, কোমরে ব্যথা হয়েছে? ফোম রোলার কিন্তু এই ধরনের ব্যথা-বেদনায় দারুণ কাজ করে।
৫) শরীরচর্চা না করে ঘাড়, পিঠ, কোমরের পেশি শক্ত হয়ে যায়। সহজে নাড়াচাড়া করা যায় না। ফোম রোলারের সাহায্য একটু স্ট্রেচ করতে পারলে আরাম পেতে পারেন।
ফোম রোলার কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
১) কোয়াড্স:
প্রথমে ম্যাটের উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই হাত ভাঁজ করে এবং পায়ের পাতা দিয়ে মাটিতে ভর দিন। মাটি থেকে দেহ খানিকটা তুলে ধরুন। এ বার ঠিক ঊরুর তলায় ফোম রোলার রাখুন। দেহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রোলার ঘুরিয়ে হাঁটু পর্যন্ত নিয়ে যেতে চেষ্টা করুন। গোটা শরীরটাই রোলারের সঙ্গে এক বার উপরের দিকে উঠবে এবং এক বার নীচের দিকে নামবে। ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত এই ব্যায়ামটি অভ্যাস করতে পারেন। পরে সময় বৃদ্ধি করানো যেতে পারে।
২) হিপ ফ্লেক্সর:
অনেক ক্ষণ এক ভাবে বসে থাকলে কোমরে ব্যথা হয়। নিতম্ব অবশ হয়েও যেতে পারে। এই ধরনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফোম রোলারের সাহায্যে এই ব্যায়ামটি করাই যায়।
এই ব্যায়াম করতে গেলে কোয়াডসের ভঙ্গিতেই শুতে হবে। শুধু একটি পা ভাঁজ করে রাখতে হবে দেহের এক পাশে। অর্থাৎ, অন্য পায়ের ঊরু দিয়ে রোলারটি রোল করতে হবে। এটিও ৩০ সেকেন্ড মতো অভ্যাস করতে পারেন। তার পর আবার একই ভাবে অন্য পায়ে এই ব্যায়ামটি করতে হবে।
৩) কাভ্স:
দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বা হাঁটাচলা করে পায়ের ‘কাফ’ পেশিতে ব্যথা হয়েছে?
প্রথমে ম্যাটের উপর পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। এ বার দুই পায়ের কাফ পেশির তলায় ফোম রোলার রাখুন। দুই হাতের সাহায্যে ভর দিয়ে শরীরটা ধীরে ধীরে তুলতে চেষ্টা করুন। খেয়াল করবেন পা, ঊরু এবং নিতম্ব মাটির উপরে থাকবে। এ বার এই অবস্থানে থেকে ধীরে ধীরে রোলারটি ঘোরাতে হবে। এই ব্যায়ামটি ৩০ সেকেন্ডই যথেষ্ট।
৪) পিঠ:
দীর্ঘ ক্ষণ ঘাড় গুঁজে কাজ করতে হয়?
ঘাড় এবং পিঠের কাছে ফোম রোলার রাখুন। এ বার হাঁটু ভাঁজ করে মাটিতে ভর দিয়ে কোমর, নিতম্ব তুলে ধরুন। ধীরে ধীরে রোলারটি ঘোরাতে থাকুন। ৩০ সেকেন্ড ধরে এই ব্যায়ামটি অভ্যাস করুন।
৫) ল্যাট্স:
পাখির ডানা চোখে দেখা যায়। কিন্তু চলতি কথায় মানবদেহের যে অংশটিকে ডানা বলা হয়, তা হল পিঠ, কাঁধের সঙ্গে হাতের সংযোগস্থল এবং বাহুমূলের তলায় বেশ খানিকটা অংশ। ঘাড় গুঁজে কাজ করলে কিংবা কাঁধে ভারী ব্যাগ নিলেও এই অংশে ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে ফোম রোলার।
ম্যাটের উপর বাঁ পাশ ফিরে শুয়ে পড়ুন। বাঁ হাত মাথার উপর প্রসারিত করুন। অন্য হাতটি দিয়ে মাটিতে রেখে দেহের সঙ্গে ভারমাস্য রাখতে চেষ্টা করুন। এ বার হাতের তলায় ফোম রোলার রেখে ধীরে ধীরে ঘোরাতে থাকুন। ৩০ সেকেন্ড পর একই ভাবে অন্য হাতে এই ব্যায়ামটি অভ্যাস করুন।