বাড়িতে শরীরচর্চা করার জন্য কী ধরনের কেট্লবেল কিনবেন? ছবি: সংগৃহীত।
জিমে যাওয়ার সময় নেই। অথচ দ্রুত রোগা হতে হবে। তাই ইউটিউব দেখে বাড়িতেই নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। কিন্তু পুজো তো একেবারে দরজায় কড়া নাড়ছে! এ ক’দিনের মধ্যে ফিট হতে চাইলে খালি হাতে ব্যায়াম করলে চলবে না। বন্ধুদের পরামর্শ হল, এর সঙ্গে একটু-আধটু ওজনও তুলতে হবে।
সমাজমাধ্যম ঘাঁটলে নিত্য দিনই নানা রকম ‘রিল’ চোখে পড়ে। অভিনেত্রী করিনা কপূর, মালাইকা অরোরা থেকে হালের তৃপ্তি ডিমরি— সকলেই তাঁদের শরীরচর্চার ভিডিয়ো পোস্ট করেন। কখনও জিমে গিয়ে, কখনও আবার বাড়িতে কেট্লবেল নিয়ে ‘স্কোয়াট্স’, ‘লাঞ্জেস’ বা ‘শোল্ডার প্রেস’-এর মতো ব্যায়াম করে থাকেন।
সেই সব ব্যায়াম আপনিও করেন। আর যদি ওজন তোলার কথা বলা হয়, তা হলে রোজই তো স্নানঘরে জলভর্তি বালতি তোলেন। তাতে কি মেদ ঝরে? উল্টে বেকায়দায় লাগলে তার ব্যথা দিন পনেরো ভোগাতে পারে। শরীরচর্চা করার হরেক রকম জিনিস অনলাইনে পাওয়া যায়। সব ধরনের সামগ্রী আবার প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধান ছাড়া ব্যবহার করাও যায় না। তাই অনেক গবেষণা করে ইন্টারনেট ঘেঁটে এক জোড়া কেট্লবেল ‘শপিং কার্ট’-এ ফেলে রেখেছেন। মুশকিল হল, কেট্লবেল তো বিভিন্ন ওজনের হয়। কোনটি আপনার জন্য ভাল, বুঝবেন কী করে?
অনলাইনে বা শরীরচর্চার সামগ্রী কিনতে পাওয়া যায়, এমন দোকানে খোঁজ করলেই দেখতে পাবেন ২ কেজি থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন ওজনের এবং আকারের কেট্লবেল বিক্রি হচ্ছে। তবে ওজন এবং আকারই সব নয়। যেগুলি প্রতিযোগিতার কাজে ব্যবহার করা হয়, তার ধরন আলাদা। সেগুলি সাধারণত স্টিলের তৈরি। হাতলগুলি চারকোনা। অন্য দিকে, কাস্ট আয়রন দিয়ে তৈরি কেট্লবেলের ধরাবাঁধা কোনও আকার বা ওজন নেই। এগুলি স্টিলের কেট্লবেলের তুলনায় খানিক সস্তাও হয়।
যাঁরা ওজন তোলার বিষয়ে একেবারে আনাড়ি, আগে কখনও এই ধরনের ব্যায়াম করেননি, তাঁদের জন্য সবচেয়ে কম ওজনের কেট্লবেল ভাল। ওজন এবং শারীরিক সক্ষমতা বুঝে পুরুষদের ১০ থেকে ১৫ কেজি এবং মহিলাদের ২ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত ভার তোলার পরামর্শ দেন প্রশিক্ষকেরা। কিন্তু যাঁরা ওজন তুলতে অভ্যস্ত, ওয়েট ট্রেনিং সম্পর্কে ধারণা রয়েছে, ওজন তোলার সময়ে দেহের ভঙ্গি কেমন হবে, সে সম্পর্কে সচেতন তাঁরা সহজেই ২০ কেজি পর্যন্ত ভার তুলে ফেলতে পারেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে তা অনায়াসেই ১০ থেকে ১৫ কেজি হতে পারে।
কার ক’টি কেট্লবেল প্রয়োজন, তা নির্ভর করবে প্রশিক্ষণের ধরন কেমন, তার উপর। চাইলে কেউ দু’টির বদলে একটি মাত্র কেট্লবেল নিয়েও ব্যায়াম করতে পারেন। শারীরবিদ্যার ভাষায় যাকে ‘ইউনিল্যাটারাল ট্রেনিং’ বলা হয়। এই ধরনের ট্রেনিং শরীরের একটি পাশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য বলছে, পেশির ভারসাম্য রক্ষা করতে এই ধরনের ব্যায়াম বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
কেট্লবেল দিয়ে কেন এবং কী ভাবে শরীরচর্চা করবেন?
১) কাঁধের জোর বাড়িয়ে তুলতে:
ছবি: সংগৃহীত।
কাঁধের গঠন ভাল না হলে অফ শোল্ডার ব্লাউজ় বা পোশাক, কোনওটিই দেখতে ভাল লাগবে না। দিন পনেরো নিয়ম করে কেট্লবেল নিয়ে ‘শোল্ডার প্রেস’ অভ্যাস করুন। তফাত নজরে পড়বে। প্রথম দিকে কাঁধের পেশিতে ব্যথা হলেও কিন্তু পরে আরাম পাবেন।
কাঁধ যতটা সম্ভব প্রসারিত করে দুই হাতে দু’টি কেট্লবেল নিন। এ বার কেট্লবেল-সহ দুই হাত মাথার উপর থেকে এক বার উপরে তুলুন। তার পর কনুই ভাঁজ করে হাত নীচে নামাতে হবে। খেয়াল রাখবেন, হাত যেন কাঁধের সঙ্গে সমান্তরাল অবস্থানে থাকে। একই ভাবে হাতে একটি মাত্র কেট্লবেল নিয়েও এই ব্যায়াম করা যেতে পারে। প্রথমেই খুব বেশি বার এই ব্যায়াম করা যাবে না। পাঁচ বার করে দু’টি সেট করা যেতে পারে। খুব বেশি ওজন তোলার চেষ্টা না করাই ভাল। দু’হাতে ২ কেজি করে ৪ কেজি ওজন তোলাই যায়।
২) দেহের ভারসাম্য ঠিক রাখতে:
ছবি: সংগৃহীত।
দেহের ওজন বেড়ে গেলে অনেক সময়ে ‘ব্যালান্স’ হারিয়ে যায়। সেই কারণেই বয়সকালে কারণে-অকারণে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে ‘লাঞ্জেস’। দুই হাতে কেট্লবেল নিয়ে এই ব্যায়াম অভ্যাস করলে শরীরে তার প্রভাব পড়বে ভাল।
প্রথমে দুই পা ফাঁক করে দাঁড়ান। কাঁধ যতটা চওড়া, ততখানি ব্যবধান রাখলেই হবে। এ বার এক পা সামনের দিকে বেশ খানিকটা প্রসারিত করে হাঁটু ভাঁজ করুন। অন্য পা-ও ভাঁজ করে হাঁটু মাটিতে স্পর্শ করুন। চাইলে এক হাতে একটি চার কেজি কিংবা দু’হাতে দু’কেজি করে দু’টি কেট্লবেল নিতে পারেন। এই ভাবে পাঁচ বার বাঁ পায়ে, পাঁচ বার ডান পায়ে ‘লাঞ্জেস’ অভ্যাস করতে পারেন।
৩) পেট, কোমর এবং পায়ের পেশি মজবুত করতে:
ছবি: সংগৃহীত।
কাঁধের পাশাপাশি পেট, কোমরের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। ‘স্কোয়াট্স’ অভ্যাস করলে কোমর, পেট এবং পায়ের পেশি মজবুত হয়। সঙ্গে হাতে যদি একটি কেট্লবেল ধরে রাখতে পারেন, কাজ হবে দ্রুত।
যে ভাবে হাঁটু ভাঁজ করে স্কোয়াট্স করেন, সে ভাবেই করবেন। শুধু হাতে রাখতে হবে চার বা পাঁচ কেজি ওজনের একটি কেট্লবেল। এই ভাবে হাতে ওজন নিয়ে এক বার উঠবেন। আবার হাঁটু ভাঁজ করে অর্ধেক বসবেন। পাঁচ বার করে দু’টি সেট অভ্যাস করতে হবে।