ধ্যান করার নিয়ম আছে, ধাপে ধাপে জেনে নিন। ছবি: ফ্রিপিক।
ঘরে-বাইরে চিন্তার পাহাড়। অফিসে কাজের চাপ, সংসারের নানা দায়-দায়িত্ব সামলাতে সামলাতে মনে দুশ্চিন্তার মেঘ জমছে। হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাচ্ছেন, আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে ঠেকেছে, ঘুম আসছে না, বিছানায় এ পাশ-ও পাশ করেই রাত কাবার। মানসিক চাপ ধীরে ধীরে অবসাদের বীজ বপন করে। তাই সময় থাকতেই মনের চাপ কমাতে হবে। সে জন্য জরুরি মনের ব্যায়াম। আর তার জন্য মেডিটেশন বা ধ্যান খুব কার্যকরী হতে পারে।
রোজ মাত্র ১০ মিনিট ধ্যান করলেই অশান্ত মন শান্ত ও সুস্থির হবে। শরীর ও মনের অনেক জটিল অসুখবিসুখও সারবে। এমনটাই দাবি করা হয়েছে গবেষণায়। দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, প্রতি দিন অন্তত ১০ মিনিটও যদি কেউ সঠিক পদ্ধতিতে ধ্যান করেন, তা হলে তাঁর মস্তিষ্কে নানা বদল আসবে। ‘ম্যাগনেটিক রেজ়োন্যান্স ইমেজিং’ (এমআরআই) করে দেখা গিয়েছে, মেডিটেশন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মজবুত করে, প্রদাহজনিত সমস্যাও কমায়। ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কেবল তা-ই নয়, শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমাতে পারে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাজনিত যাবতীয় মানসিক অসুখের ঝুঁকিও কমাতে পারে।
ধ্যান করবেন কী ভাবে?
নিরিবিলি-শান্ত জায়গা খুঁজে নিন। খুব বেশি কোলাহল থাকলে সেখানে ধ্যান করা যাবে না।
সুতির হালকা পোশাক পরে ধ্যান করতে পারলে ভাল। যে আসনে বসে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন, সে রকম জায়গা বেছে নিন। বজ্রাসন বা সুখাসনে বসে মেডিটেশন করতে পারেন।
যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্যের কথায়, চোখ বুজে প্রথম ২ মিনিট শ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে। নাক দিয়ে গভীর ভাবে শ্বাস টেনে ধরে রাখতে হবে। মনে মনে ৬ গুনে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে। ২ মিনিট টানা এমন করতে হবে আগে। এতে মনের চঞ্চলতা কমবে অনেকটাই।
প্রথম প্রথম চোখ বুজলেই দেখবেন মনে নানা চিন্তা আসছে। যদি চিন্তা একেবারে দূর করতে না পারেন, তা হলে খারাপ চিন্তা দূরে ঠেলে সুন্দর অভিজ্ঞতা মনে করতে হবে। অতীতের সুন্দর স্মৃতি চোখের সামনে দেখার চেষ্টা করুন। এতেও মনের নেতিবাচক ভাবনা দূর হবে। টানা ৩ মিনিট এই অভ্যাস করতে হবে।
পরের ৩ মিনিট আবার শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর জোর দিতে হবে। গভীর ভাবে শ্বাস টেনে ছাড়তে হবে।
শেষ ২ মিনিট চারপাশের পরিবেশকে অনুভব করার চেষ্টা করতে হবে। চারপাশের অতি সূক্ষ্ম শব্দ, গন্ধ অনুভব করার চেষ্টা করুন। এতেও মনের চাপ অনেকটাই কমে যায়।
প্রথম প্রথম ১০ মিনিট করে শুরু করে, পরে সময় বাড়ানো যেতে পারে। ধ্যানের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরি। দু’দিন ধ্যান করার পর আবার বিরাম নিলেন, তেমন করলে চলবে না। অল্প সময়ের জন্য হলেও রোজ ধ্যান করলে উপকার পাওয়া যাবে।