বাড়তি তাপমাত্রাই নয়, আর্দ্রতাও প্রভাব ফেলে শরীরের উপর। ছবি: শাটারস্টক।
শুধু কি গরমেই ক্লান্ত হয় শরীর? গ্রীষ্মে ও বর্ষার মাসগুলিতে বেশি শরীর খারাপ হয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য। তার সঙ্গেই থাকে আর্দ্রতা। আর্দ্র আবহাওয়াও অনেকটাই প্রভাব ফেলে শরীরের উপর। কখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, তো কখনও রোদের তীব্রতার জেরে বাড়ির বাইরে বেরোনো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতা যত বাড়ে, ততই বেশি ঘাম হয়। শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। আর ঘিরে ধরে ক্লান্তি।
কথায় কথায় তাপমাত্রার প্রসঙ্গই বেশি ওঠে। কিন্তু জানেন কি, বাতাসের আর্দ্রতা কী ভাবে প্রভাব ফেলে শরীরের উপর?
বাতাসে ভাসমান জলীয় বাষ্প থেকেই আর্দ্রতা অনুভূত হয়। এই আর্দ্রতার কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ ঘামের সাহায্যে বার হয়ে যেতে পারে না। চিকিৎসক শুভম সাহা বললেন, ‘‘বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকলে ঘাম বাতাসে মিশতে পারে না। ঘাম বেরিয়ে গেলে শরীর ঠান্ডা হয়। ঘাম বসলে শরীর ভিতর থেকে গরম হয়ে ওঠে, আরও বেশি করে ঘাম বেরোয়। বেশি ঘাম ত্বকের উপরের স্তরে জমে গিয়ে অস্বস্তি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে।’’
চিকিৎসক অদ্রিজা রহমান মুখোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে অনেকটা নুন বেরিয়ে যায়। শুধু জল খেলে কিন্তু সেই ঘাটতি পূরণ হয় না। ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রায় হেরফের হলে পেশিতে টান ধরতেই পারে। ক্লান্ত লাগতে পারে। আমরা যাকে ‘হিট এগজ়রশন’ বলে থাকি। নুন-চিনির জল বা ওআরএস খেলে এই পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেওয়া যায়।”
বাতাসে আর্দ্রতা বেশি হলে ঘাম হওয়ার পাশাপাশি শ্বাসনালিগুলি সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। এই রকম পরিস্থিতি কিন্তু হাঁপানি ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়ে (সিওপিডি) আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে।
বায়ু যত বেশি মাত্রায় আর্দ্র হয়, ততই অস্বস্তি হয় শরীরে। যে দিন বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, সে দিন ঘাম শুকোতে সময় নেয়। দিনভর চটচটে ভাব যেন সর্বত্র। এ দিকে, দিনভর ঘাম না শুকোলে শরীরও শীতল হয় না। শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। শরীর অচল হয়ে যায়। সে কারণেই বাতাসের আর্দ্রতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলেন চিকিৎসকরা।
আর্দ্র পরিবেশে কী ভাবে শরীরের খেয়াল রাখবেন?
১) শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা শরীর চাঙ্গা রাখতে জলপানের সঙ্গে কোনও রকম আপস করা চলবে না। ঘাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দিনে বার বার ঠান্ডা জলে চুমুক দিতে পারেন। ঠান্ডা জল খেলে শরীরের তাপমাত্রা কমে, ফলে ঘামের প্রবণতাও কমে।
২) অতিরিক্ত শরীরচর্চা কিন্তু এই সময় বিপদের কারণ হতে পারে। শরীর চাঙ্গা রাখতে হালকা ব্যায়াম, যোগাসন করতেই পারেন। তবে, এই সময় ‘হেভি ইনটেন্স’ ওয়ার্কআউট এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অতিরিক্ত ঘাম হয়, এমন যে কোনও কাজ এড়িয়ে চলাই ভাল।
অতিরিক্ত শরীরচর্চা কিন্তু এই সময় বিপদের কারণ হতে পারে। ছবি: শাটারস্টক।
৩) বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় হালকা রঙের পোশাক পরুন। খুব বেশি মোটা কাপড় কিংবা ঘাম বেশি হয়, এমন পোশাক এড়িয়ে চলুন। কেবল গরমেই নয়, বর্ষাতেও হালকা সুতির পোশাকের বিকল্প হয় না। অফিস হোক কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সিনেমা দেখা— সুতি, লিনেন, মলমলের মতো হালকা কাপড়ের পোশাক পরুন, যাতে শরীরে সহজেই হাওয়া-বাতাস খেলতে পারে এবং ঘাম কম হয়। গায়ের সঙ্গে আঁটসাঁট পোশাক একদম চলবে না। অন্তর্বাসের ক্ষেত্রেও সুতিকেই বেছে নিন, সিন্থেটিক কাপড়ের অন্তর্বাস না হয় শীতের জন্যই তোলা থাক।
৪) যাঁরা অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান করেন, তাঁদের ঘাম হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই ঘামের সমস্যা কমাতে ধূমপান ও মদ্যপানে রাশ টানতে হবে।
৫) ঘামের সমস্যা মেটাতে কী খাচ্ছেন, সে দিকেও খেয়াল রাখাও প্রয়োজন। কিছু খাবার হজম হতে দেরি হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই অতিরিক্ত ঝাল, তেল-মশলাদার খাবার ছেড়ে হালকা খাবার খাওয়াই ভাল। ঘামের দুর্গন্ধ অনেক সময় খাবার থেকেই হয়। ক্যাফিনও হাত-পা ঘামিয়ে দেয়। তাই অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থেকে মুক্তি চাইলে বেশি চা, কফি খাবেন না।