চুল পেকে যাওয়া এবং চুল ঝরাও এর উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ হতে পারে। প্রতীকী ছবি।
উচ্চ কোলেস্টেরল বা হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া জনমানসের কাছে একেবারে অপরিচিত বিষয় নয়। এই রোগে রক্তপ্রবাহে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল দেখা যায়। এই বাড়তি কোলেস্টেরল রক্তপ্রবাহের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা দেয়। হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হদ্রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া লিপিড ডিজ়অর্ডার বা হাইপারলিপিডেমিয়া নামেও পরিচিত। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, শহরে ২৫-৩০ শতাংশ মানুষের উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে।
শরীরে কোলেস্টেরল বেড়েছে কি না, তা বোঝা যায় বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখে। চিকিৎসকরা জানান, চোখে ফুটে ওঠে এর লক্ষণ। এ ছাড়া হাত-পা ফুলে যাওয়াও উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক কালের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, দ্রুত চুল পেকে যাওয়া এবং চুল ঝরাও উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ হতে পারে।
‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট জানাচ্ছে, উচ্চ কোলেস্টেরল চুলের ক্ষতি করে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে কমবয়সেও ধূসর হতে পারে চুল।
কোলেস্টেরল থাকলে রক্তবাহী ধমনীগুলিতে চর্বি জমা হয়। যে কারণে রক্তপ্রবাহে বহু সমস্যা দেখা দেয়। রক্ত চলাচল সচল থাকে না। রক্ত স্বাভাবিক ভাবে প্রবাহিত হতেও পারে না। ধমনীগুলিতে চর্বি জমতে জমতে এক সময় একটা পুরু স্তর তৈরি হয়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক না থাকলে মূলত তার প্রভাব পড়ে ত্বক এবং চুলে। সেই কারণে চুল ঝরতে শুরু করে। চুলে পাক ধরে এই একই কারণে।
ইঁদুরের উপর এই গবেষণাটি চালানো হয়েছিল। কিছু ইঁদুরকে ফ্যাট বেশি, এমন খাবার দেওয়া হয়েছিল। আর এক দল ইঁদুরকে উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার দেওয়া হয়। কয়েক দিন পর লক্ষ করে দেখা যায়, উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার খেয়েছিল যে ইঁদুরগুলি, তাদের শরীরের লোম ঝরে গিয়েছে। পরে মানুষের উপরেও গবেষণাটি করা হয়েছিল। সেখানেও একই ফলাফল দেখা যায়। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, এখনও বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা বশে না রাখলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোন উপায়ে নিয়ন্ত্রণে রাখবে কোলেস্টেরল?
১) অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া এবং বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা উচ্চ কোলেস্টেরলের অন্যতম কারণ। শুধু কোলেস্টেরল বলে নয়, কী খাচ্ছেন এবং কখন খাচ্ছেন, সে দিকেও খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবুজ শাকসব্জি, মরসুমি ফল বেশি করে খাওয়া জরুরি। তবে যখন-তখন খেলে হবে না। খেতে হবে সময়মতো।
২) উচ্চ কোলেস্টেরল জব্দ করতে নিয়ম করে শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। শুধু ওজন কমানো ছাড়াও শরীরচর্চার অভ্যাস ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের মতো ক্রনিক সমস্যাও কমিয়ে দিতে পারে। রোজ অল্প সময়ের জন্য হলেও শরীরচর্চা করুন। শারীরিক কসরত করতে জিমেই যেতে হবে এমন নয়। বাড়িতেও সকালে উঠে যোগাসন করতে পারেন। কোলেস্টেরলের রোগীদের সুস্থ থাকতে শরীরচর্চা জরুরি একটি অভ্যাস।
৩) কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করা প্রয়োজন। ধূমপান শরীরে ভাল কোলেস্টেরল ‘এইচডিএল’-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। উল্টে খারাপ কোলেস্টেরল ‘এলডিএল’-এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মদ্যপানের অভ্যাসও ঠিক একই কাজ করে। দীর্ঘ দিন সুস্থ থাকতে এই দু’টি অভ্যাস ত্যাগ করুন।