চোখের ক্লান্তি দূর হবে ওষুধ বা আই ড্রপ ছাড়াই, সহজ কিছু কৌশল জেনে রাখা ভাল। ছবি: ফ্রিপিক।
দিনের অনেকটা সময়ই কেটে যায় কম্পিউটার বা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে। তার উপরে মোবাইলে স্ক্রল করা চলছে অনবরত। দিনের শেষে দেখবেন, দু’টি চোখ মনে হয় আর খুলে রাখা যাচ্ছে না। চোখের ক্লান্তি এতটাই বাড়ছে যে দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে যায় অনেক সময়ে। চোখে যন্ত্রণা, জল পড়া, চোখ লাল হয়ে ওঠার সমস্যা তো আছেই। ইদানীং কালে চোখের ক্লান্তি মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। শীতের সময়ে শুষ্ক চোখের সমস্যা ভোগায়। তার উপরে চোখের ক্লান্তি বাড়লে তা আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে। কী ভাবে এই সমস্যা দূর করবেন?
চক্ষু চিকিৎসকেরা বলেন, কাজের চাপে চোখ দু’টিই অবহেলিত হয় সবচেয়ে বেশি। বৈদ্যুতিন যন্ত্রের নীল আলো রেটিনার উপর এমন প্রভাব ফেলে, যে চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়। তখন চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়া, চোখে ব্যথা এমনকি মাথাযন্ত্রণাও ভোগাতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘আই স্ট্রেন’ বা ‘অ্যাস্থেনোপিয়া’। তা ছাড়া যাঁদের ঘুম কম বা বিছানায় শুয়ে অন্ধকারে দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইলে চোখ রাখেন, তাঁদের চোখ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন চোখের চারপাশ জুড়ে বলিরেখা দেখা দেয়, চোখের নীচে পুরু কালির ছাপ পড়ে।
চোখের ক্লান্তি দূর হবে কী উপায়ে?
পলক ফেলুন বার বার
এখন পলক ফেলতে ভুলে যাচ্ছেন মানুষজন। কারণ একনাগাড়ে কম্পিউটার বা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। ফলে চোখের আর্দ্রতা নষ্ট হচ্ছে। যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্যের কথায়, চোখ থেকে যে জল বার হয়, যাকে অশ্রু বলা হয়, তা আসলে চোখ পরিষ্কার করে। কিন্তু এখন মোবাইল বা ল্যাপটপের নীল আলো চোখের জলই শুকিয়ে দিচ্ছে। তাই একটানা কাজের মাঝে চোখের পলক ফেলুন বার বার। এতে চোখের ক্লান্তি কম হবে।
‘আই বল রোলিং’
মাথা সোজা রেখে চোখের মণি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরাতে হবে। এক বার ঘড়ির কাঁটার দিকে ও এক বার ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে। গোটা পদ্ধতিটি তিন বার করে করতে হবে সময়ান্তরে। গোটা চোখের ব্যায়াম হয় এই পদ্ধতিতে। চোখের শুষ্ক ভাব কেটে যায়।
সানগ্লাস পরতেই হবে
শীতের দিনেও বাইরে বেরোলে সানগ্লাস পরতেই হবে। সূর্যের অতিবেগনি রশ্মিও কিন্তু চোখের ক্ষতি করে। এমন সানগ্লাস বেছে নিন যাতে চোখের পাশ, বাইরের দিক ঢাকা থাকে।
ঘরোয়া টোটকা
চোখের উপর প্রথমে তুলো দিয়ে অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন। ৫ মিনিট রেখে এ বার তার উপরে ঠান্ডা টিব্যাগ চোখের উপরে বেশ কিছু ক্ষণ চেপে ধরে থাকুন। এতে চোখ আরাম পাবে।
চোখের আর্দ্রতা
চোখের উপরে গোল করে কাটা শশা বা আলু রেখে শুয়ে থাকুন। নিয়মিত করলে চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবেই। চোখের নীচে কালির ছাপও দূর হবে। সেই সঙ্গেই পর্যাপ্ত জল খেতে হবে।
কপাল ও চোখের ব্যায়াম
মাথা সোজা রেখে কপাল কুঁচকে তাকান। কপালের পেশি এক বার সঙ্কোচন আর এক বার প্রসারণ করতে হবে। বার বার করলে চোখের পেশিরও ব্যায়াম হবে। অনেক ক্ষণ কাজ করার পরে এই ব্যায়াম করলে চোখে রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে। চোখের ক্লান্তি কাটবে।
সহজ যোগ
অন্ধকার ঘরে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে তার শিখার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে হবে। পলক না ফেলে তত ক্ষণ চেয়ে থাকুন যত ক্ষণ না চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। চোখের ক্লান্তি দূর করতে পারে এই ব্যায়াম। নিয়মিত অভ্যাসে দৃষ্টিশক্তিও উন্নত হয়, মনঃসংযোগও বাড়ে।