শাহরুখ-কন্যা সুহানা খান। ছবি: সংগৃহীত।
জ়োয়া আখতারের নতুন সিরিজ় ‘দি আর্চিজ়’ ছবিতে বলিউডে অভিষেক করবেন অভিনেত্রী হিসাবে অভিষেক হবে শাহরুখ-কন্যা সুহানা খানের। কলাকুশলীদের সঙ্গে এখন ছবির প্রচারে ব্যস্ত তিনি। এই মুহূর্তে সুহানা একটি নামজাদা প্রসাধনী সংস্থার প্রচারের মুখও বটে।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ-কন্যা বলেন, শরীরের দিকে নজর দিতে নয়, বরং মন-মেজাজ ভাল রাখতেই নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তিনি। সাক্ষাৎকারে সুহানা বলেন, ‘‘ছোট ছোট কথাতেই খুব বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ি, সারা ক্ষণ মনের ভিতর অজানা উদ্বেগ কাজ করে। মন ভাল করতে আমি জিমে গিয়ে ঘণ্টা খানেক সময় কাটাই, তার পরেই যেন সব ঠিক হয়ে যায়।’’
সুহানার বয়স ২৩ বছর। বাবা শাহরুখ খান বলে ছোট থেকেই তাঁর উপর অনেকের কড়া নজর। তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, কার সঙ্গে দেখা করছেন— সবই যেন ব্রেকিং খবর। শাহরুখের মেয়ে কী করছেন, সেই খবরে সকলেরই কমবেশি আগ্রহ থাকে। সুহানা অবশ্য সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেননি কী নিয়ে তাঁর এত উদ্বেগ।
তবে উদ্বেগ এখন অনেকেরই সমস্যা। মনোবিদ দেবশীলা বসু আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘বয়স ১৯, ২০ পার করার পর বিভিন্ন কারণে উদ্বেগ কাজ করতে পারে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় একের পর এক সিঁড়ির ধাপগুলি আমাদের জানা থাকে। তবে কলেজের পর কী করব, সেটা ভেবেই শুরু হয় চিন্তা, উদ্বেগ, মানসিক টানাপড়েন। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তাগিদ থাকে মনে, তবে পথ আমাদের কাছে ততটাও স্পষ্ট থাকে না। এই বয়সে প্রেম হওয়াটা স্বাভাবিক, তবে এখনকার দিনের তরুণ সমাজের বেশির ভাগই মানসিক ভাবে ততটা পরিণত নন। তাই প্রেমের সম্পর্ক সামাল দিতে গিয়েও নানা রকম সমস্যা হয়। সেই থেকেও উদ্বেগ বা়ড়ে। অনেকের ক্ষেত্রেই পারিবারিক নানা রকম সমস্যা থাকে, সে কারণেও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে।’’
কী ভাবে বুঝবেন উদ্বেগ গ্রাস করছে ধীরে ধীরে?
সাধারণত ঘুম না আসা, অকারণ রেগে যাওয়া, মাঝেমধ্যেই হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অকারণ ঘাম হওয়া উদ্বিগ্ন হওয়ার অন্যতম উপসর্গ। এই উপসর্গ যদি ঘন ঘন দেখা দিতে শুরু করে, তা হলে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া, অনেকের ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হলে পেটের গোলমাল শুরু হয়, চোখের তলায় কালি পড়তে শুরু করে, মনোসংযোগ বিঘ্নিত হয়।
কী ভাবে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব?
১) এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে মূলত শরীরচর্চা, ধ্যান, যোগাসন করা যেতে পারে।
২) এই সমস্যা থাকলে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। ধরুন কোন বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষা করলে কাজ পেতে সুবিধা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেকেই ভুল করে বসেন, এর জন্য প্রয়োজন যে বিষয় নিয়ে এগোনোর কথা ভাবছেন, সেই বিষয় অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। অনেকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে গিয়ে আপনার সমস্যা বাড়বে, সঙ্গে চিন্তাও বাড়বে।
৩) এ সময়ে সম্পর্কে জড়ালে আগেই নিজের চাহিদা, ইচ্ছে, ভাবনাগুলি নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলে নিন। আবেগে ভাসার আগে বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করুন। সম্পর্কের জটিলতা বাড়লে নিজেদের মধ্যে কথা বলুন।
৪) এই বয়সে নতুন নতুন অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়। নতুনদের সময় দিতে গিয়ে পুরনো সম্পর্কগুলিতে মরচে রড়তে শুরু করে। পুরনো বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অজান্তেই দূরত্ব তৈরি হয়। তবে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লে আপনার পাশে দাঁড়াতে সবার আগে এগিয়ে আসবে এই কাছের লোকজনই। মাঝরাতে কোনও সমস্যায় পড়লে বা মন খারাপ হলে ছেলেবেলার বন্ধুকে ফোন করতে যেন কোনও দ্বিধাবোধ না হয়, সেই পথ নিজেকেই খোলা রাখতে হবে। কাছের মানুষদের জন্য আলাদা করে সময় বার করুন।
৫) আগের তুলনায় এখন মানুষ তবুও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। খুব বেশি সমস্যা হলে মনোবিদের সাহায্য নিন। খোলাখুলি তাঁর সঙ্গে কথা বললে, তিনি আপনাকে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখাতে পারবেন। লোকে কী বলবে, সেই কথা না ভেবে, নিজের স্বাস্থ্যের কথা আগে ভাবুন।