না খেয়ে বা কম খেয়ে থাকছেন, কী ক্ষতি হচ্ছে? ছবি: ফ্রিপিক।
সঠিক সময়ে খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই নেই। তাড়াহুড়োয় সকালের জলখাবার না খেয়ে, সারা দিন ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকেন অনেকেই। অফিসে কাজের ফাঁকে দেদার চা-কফি খেলেও সুষম খাবার খাওয়া হয় না। তার পর বিকেল পাঁচটা বাজতেই ‘খাই-খাই’ ভাব। পিৎজ়া, বার্গার, পেস্ট্রির জন্য মন আনচান। এটাই যদি হয় রোজের রুটিন, তা হলে কিন্তু ভাবার সময় এসেছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ ক্ষণ খালি পেটে থাকা, সুষম খাবার না খাওয়ার প্রভাব পড়ে হার্টের উপর। দিনের পর দিন এমন অভ্যাস চলতে থাকলে হৃদ্রোগের আশঙ্কাও বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
হার্টের চিকিৎসক দিলীপ কুমার জানাচ্ছেন, প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর সামান্য কিছু খাওয়া উচিত। একবারে অনেকটা না খেয়ে, বারে বারে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। দিনে ছ’টি মিল খুবই জরুরি। এর অন্যথা হলেই নানান রোগ দেখা দেবে। এখন কমবয়সিরা না খেয়ে বা অতিরিক্ত কম খেয়ে ওজন ঝরানোর নানা কায়দা রপ্ত করছেন। এতে যেমন হার্টের স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ছে, তেমনই ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে।
চিকিৎসকের কথায়, শরীরের বিপাকক্রিয়া নির্দিষ্ট ছন্দে চলে। খাবার জারিত হয়েই শক্তি তৈরি হয়। এর ব্যতিক্রম হলেই শরীর বিকল্প উপায় খুঁজে নেবে। যদি অনেক ক্ষণ ধরে খালি পেটে থাকেন, তা হলে শরীর অনেক বেশি প্রোটিন ও ফ্যাট তৈরি করবে শক্তি তৈরির জন্য। পাশাপাশি, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের ক্ষরণও বেড়ে যাবে। বাড়বে রক্তে শর্করার মাত্রাও। যার প্রভাব পড়বে হৃদ্যন্ত্রের উপরে।
এখনকার তরুণেরা বেশির ভাগই অফিসে থাকাকালীন চা, কফি খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেলেন। তার পর খিদে সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে গেলে তখন ভাজাভুজি, জাঙ্ক ফুড খেতে শুরু করেন এবং তার পরিমাণও হয় অনেকটা বেশি। এর কারণেই শরীরের ভিতর ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ বাড়তে থাকে। ‘ডায়েট ইনডিউস্ড থার্মোজ়েনেসিস’ বা ক্যালোরি দহনের প্রক্রিয়া পিছিয়ে পড়ে, ফলে ওজন স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তে থাকে। কিন্তু যদি সময় ধরে বারে বারে খান, তা হলে যত বার খাবেন, তত বারই থার্মোজেনেসিস ঘটবে। অর্থাৎ, খাবার জারিত হবে। ফলে ক্যালোরিও পুড়বে অনেকটা, ওজনও কমতে থাকবে।
এ বার প্রশ্ন, কী খাবেন? দিন শুরু করতে পারেন ফল দিয়ে। প্রাতরাশে উপমা, ইডলি, পোহা, ফলের রস, দোসা বা দুধ-কর্নফ্লেক্স খেতে পারেন। দুপুরে রুটি-তরকারি, বা ভাত, ডাল, তরকারি, দই খাওয়া যেতে পারে। রাতে রুটি, তরকারি বা ডাল, সঙ্গে এক টুকরো চিকেন বা মাছ খেতে পারেন। কাজের ফাঁকে খেতে পারেন নানা ধরনের বাদাম, দই, ছোলা সেদ্ধ, সয়া মিল্ক বা প্রোটিন শেক। নানা রকম মরসুমি ফল মিশিয়ে ফ্রুট স্যালাড বানিয়েও সঙ্গে রাখতে পারেন।