মোমো, ডিমসাম আর ডাম্পলিং-এর স্বাদ কিন্তু আলাদা। ছবি: ফ্রিপিক।
ফিনফিনে পুঁটলির আড়ালে শোভা পাচ্ছে লোভনীয় রংবেরঙের সাজ। মুখে দিলেই নরম তুলতুলে ময়দার আবরণে মাংসের পুর মুখের ভিতর মিলিয়ে যাবে। কলকাতার রাস্তায় এখন প্রায় জলভাত চিনা, তিব্বতি খাবার। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা যে কোনও মরসুমেই বাঙালি চেটেপুটে খাচ্ছে মোমো, ডাম্পলিং কিংবা ডিমসাম। টগবগিয়ে ফুটছে সুপ, মোমো থেকে উঠছে ধোঁয়া, ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে লাল লঙ্কার ঝাল চাটনি, আর তা-ই মজা করে খাচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজারে সকালবেলা গেলে এই দৃশ্য খুবই পরিচিত। মোমো, সুপ, ডাম্পলিং, ওয়ানটন, সসেজের গন্ধে ভরপুর থাকে গোটা চত্বর। এখন কথা হল মোমো, ডিমসাম আর ডাম্পলিং কিন্তু এক জিনিস নয়। দেখতে এক রকম মনে হলেও এদের উৎস ও স্বাদ কিন্তু ভিন্ন।
মোমো হল তিব্বতি খাবার। সিকিম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নেপালেও মোমোর বেশ চল। ময়দার ঠুলিতে মাংস, পেঁয়াজ বা বাঁধাকপির পুর ভরে ভাপে সিদ্ধ করা মোমো লাল লঙ্কার চাটনি বা সস্ এবং স্যুপের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। মোমো অবশ্য শুধু ভাপে সিদ্ধ নয়, মুচমুচে ভাজাও হয়। ফ্রায়েড মোমো সসের সঙ্গেই পরিবেশন করা হয়।
মোমো। ছবি: ফ্রিপিক।
কিন্তু ডিমসাম হল আদ্যোপান্ত চিনা খাবার। হংকং-এও খুব জনপ্রিয়। গোল গোল ময়দার পুঁটলিতে বিভিন্ন রকম মাংসের পুর ভরে দেওয়া হয়। তবে ডিমসাম শুধু গোল নয়, নানা আকৃতির হতে পারে। ঝাল ঝাল সয় সস্, ভিনিগার ও চিলি অয়েলের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। মোমো আর ডিমসামের মধ্যে তফাত বুঝতে পারেন না অনেকেই। মোমো ময়দা দিয়ে তৈরি হয়, কিন্তু ডিমসামে যে কোনও রকম স্টার্চ ব্যবহার করা হয়। সে চালের গুঁড়ো, আটা বা ময়দা হতে পারে। আর ডিমসাম কিন্তু কখনওই ডুবো তেলে ভাজা হয় না, সব সময়েই সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। চিনারা চায়ের সঙ্গেই ডিমসাম খেতে বেশি পছন্দ করেন। ক্যান্টনিজ ভাষায়, এক ধরনের টুকিটাকি টাকনা এই ডিমসাম। তিব্বতিরা যাকে মোমো বলেন, তার মাধ্যমেই এই ডিমসামের সঙ্গে আলাপ আমবাঙালির।
ডিমসাম। ছবি: ফ্রিপিক।
ডাম্পলিংও চিনা খাবার। ফিনফিনে ময়দার পর্দায় ভরে দেওয়া হয় মাংস, নানা রঙের সব্জি। মূলত গোল বা লম্বাটে দেখতে হয়।
ডাম্পলিং। ছবি: ফ্রিপিক।
সুস্বাদু হবে, অথচ খুব বেশ তেল থাকবে না— এই যদি আপনার চাহিদা হয়, তা হলে ডাম্পলিং খেতে পারেন নির্দিদ্ধায়। মাংসের সঙ্গে বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, স্প্রিং অনিয়ন, ধনেপাতা মিহি করে কুচিয়ে ওয়ানটন র্যাপারে ভরে সিদ্ধ করা হয় ডাম্পলিং। গায়ে অবশ্য হালকা তেল বুলিয়ে নেওয়া হয়। স্যুপ ও সস্ সহযোগে খাওয়া হয় ডাম্পলিং।