রোজের কোন অভ্যাস একেবারেই বাদ দিলে চলবে না। —প্রতীকী ছবি।
মুখ ও গলার ক্যানসারে কি বেশি ভুগছেন মহিলারা? আমেরিকার নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় এমনটাই দাবি করা হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ধূমপানই একমাত্র কারণ নয়। সকালের কিছু অভ্যাস বাদ দেওয়ার কারণেই মুখ ও গলার ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন মহিলারা।
কী কী সেই অভ্যাস? নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ক্যানসার চিকিৎসক টড রসের কথায়, নিয়মিত দাঁত মাজা ও মুখ পরিষ্কার রাখার অভ্যাস এখনকার কমবয়সিদের মধ্যে বিশেষ দেখা যায় না। তাই সে দেশের সাম্প্রতিক প্রজন্মের মেয়েরাই মুখের ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আমেরিকায় অন্তত লাখখানেক মহিলাকে নিয়ে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে কমবয়সিরা বেশির ভাগই সকালে উঠে দাঁত মাজেন না অথবা মুখ ভাল করে পরিষ্কার করেন না। বাসি মুখেই খাবার বা চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে বেশির ভাগেরই। ফলে দাঁতের কোনায়, মাড়িতে জীবাণু জমে তা নানা রকম অসুখবিসুখের কারণ হয়ে ওঠে।
গত ১৫ বছর ধরে এই গবেষণা চালিয়েছেন নিউ ইয়র্কের বিজ্ঞানীরা। ২৩৬ জন মহিলার থুতু ও লালার নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাঁরা ‘স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’য় আক্রান্ত। ওই মহিলাদের লালায় অন্তত ১৩-১৫ রকম সংক্রামক ব্যাক্টেরিয়ার খোঁজও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
মুখ ও গলার ক্যানসারের মধ্যে প্রধানত মুখগহ্বর, গলা, নাক, ঘাড়, জিভ, গলার গ্রন্থির ক্যানসার পড়ে। মুখ ও গলা-ঘাড়ের ক্যানসারে আক্রান্তদের একটা বড় অংশের বয়স ৩০ থেকে ৬০। ১৮-২৫ বছরের ছেলেমেয়েদেরও এই রোগ হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্যানসারের লক্ষণ ধরা পড়ে দেরিতে। গলায় ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড, খাবার খেতে সমস্যা, ঢোক গিলতে কষ্ট, ঘন ঘন কাশি এবং কাশির সঙ্গে রক্ত বার হলে তা মুখ ও গলার ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। নাক, কান, মুখ, গলা— শরীরের যে কোনও অঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। জিভ নাড়াতে অসুবিধা হওয়া কিংবা কথা বলার সময় সমস্যা হওয়াও কিন্তু মুখের ক্যানসারের লক্ষণ। এই ক্যানসারের অনেকগুলি পর্যায় আছে। শুরুটা হয়তো জিভে বা গলায় হল, ধীরে ধীরে লসিকা গ্রন্থিগুলিতে ছড়িয়ে পড়বে, তার পর ফুসফুস অবধি ছড়াবে ক্যানসার। যত দেরি করে ক্যানসার ধরা পড়বে, ততই সম্ভাবনা কমবে নিরাময়ের।
গবেষকরা বলছেন, দাঁত, মাড়ি ভাল রাখার আদি এবং অকৃত্রিম পন্থা হল ঘুম থেকে উঠে এবং শুতে যাওয়ার আগে দাঁত মাজা। খাওয়ার পর খাবারের ছোট ছোট অংশ থেকে যায় দাঁতের খাঁজে। সেগুলি সারা দিন, সারা রাত মুখের মধ্যে থেকে পচে গেলে দাঁত এবং মাড়ি— দুইয়েরই ক্ষতি করতে পারে। তাই প্রতি বার খাওয়ার পর না হলেও সারা দিনে অন্তত পক্ষে দু’বার দাঁত মাজার চেষ্টা করতেই হবে।