Wellbeing tips

চারপাশে বিষাদের ছায়া, ব্যক্তিগত পরিসরে সুখ-দুঃখের টানাপড়েন, পুজোয় কোন জাদুকাঠিতে ভাল থাকবে মন?

মেঘলা মনে পুজোর আনন্দ গুটিকয়েক বুদবুদের মতোই ভেসে বেড়াচ্ছে। তা-ও সব কিছু সামলে ভাল থাকতেই হয়। চারপাশের মানুষজনকেও ভাল রাখতে হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১০:১৭
Share:

আড়ম্বর নয়, মন ভাল রাখার অন্য উপায়ও আছে, পরামর্শ দিলেন মনোবিদেরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শরতের মেঘের আনাগোনা দেখেও মন শান্ত হচ্ছে না। চারদিকে বিষাদের ছায়া। এ বারের পুজোয় মেতে ওঠার মানসিকতা অনেকেরই নেই। ওই শামিলটুকু হওয়া মাত্র। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি মনের আঙিনায় বড় বড় আঁচড় কেটে রেখেছে। সেই ক্ষতের দাগের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিসরের মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। মেঘলা মনে পুজোর আনন্দ গুটিকয়েক বুদবুদের মতোই ভেসে বেড়াচ্ছে। তা-ও সব কিছু সামলে ভাল থাকতেই হয়। চারপাশের মানুষজনকেও ভাল রাখতে হয়। তাই পুজোর ক’টা দিন মন ভাল রাখার উপায় কী কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন রকম মতামতই দিলেন মনের দুই চিকিৎসক।

Advertisement

মন তো আর কম্পিউটার নয়, যে ‘ডিলিট’ বোতাম টিপলে সব মুছে যাবে! তবুও মনকে সামলে রাখার এবং একঘেয়েমি কাটানোর চেষ্টা করা উচিত বলেই মত মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকারের। তিনি বলছেন, “পুজোর আনন্দে মেতে উঠতে পারব না, কিন্তু ক’টা দিন মন ভাল রাখতেই হবে। বর্তমান পরিস্থিতি, অফিসে কাজের চাপ, সংসারের দায়দায়িত্বের বোঝা সামলাতে গিয়ে মন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তাকে ঠিক রাখতে গেলে ইতিবাচক চিন্তা ও ইতিবাচক কাজকর্ম করাই উচিত।” শর্মিলার পরামর্শ, সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করুন, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করুন বাড়িতে, তাতেও মন ভাল হবে। পুজোর ক’টা দিন বাড়িতে কাজকর্ম মিলেমিশে করুন, ছোটদেরও কাজের দায়িত্ব দিন। এতে তাদেরও মন ভাল হবে।

গল্প-উপন্যাস, রান্নার বই, হালকা ম্যাগাজ়িন, কবিতা— যা ভাল লাগে, পড়তে শুরু করুন। বই পড়লে মনঃসংযোগ বাড়ে, সৃষ্টিশীলতার অনুশীলন হয়। টিনটিন, নন্টে ফন্টে— খানকতক ছোটদের বই পড়েই দেখুন না, বুকের পাথর অনেকটা নেমে যাবে। মন ভাল না থাকলে সাজগোজের ইচ্ছে হয় না। বিষয়টাকে উল্টে দিন। সুন্দর কিছু পোশাক পরুন, কিনুন। নখ ফাইল করুন, নেলপলিশ বদলান। পেডিকিয়োর কিট আনিয়ে বাথসল্ট দিয়ে পা ঘষে পরিষ্কার রাখুন। অনেকটা ভাল লাগবে। রোজকার যাপনে বৈচিত্র আনুন। বিছানায় নতুন চাদর পাতুন বা কার্পেটটা বদলে ফেলুন। এইটুকুতেও মনের গ্লানি অনেকটাই কেটে যায়। আর এ সব কাজে শরীর ও মন, দুই-ই সচল থাকে। শর্মিলা বলছেন, ঘরেই যোগাভ্যাস করুন। রক্তসঞ্চালন হলে মন ভাল করার হরমোনের ক্ষরণ হবে। তাতেই মন ঝলমল করবে।

Advertisement

শপিং, সাজগোজ, হুল্লোড়ে মেতে ওঠা ছাড়াও মন ভাল রাখা যায়। যাঁরা এই সব থেকে অনেক দূরে, তাঁদের মন ভাল রাখার উপায় বাতলে দিলেন মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “পাশে থাকাও কিন্তু আনন্দের উৎস হতে পারে। বাড়ির খুদে সদস্যটিকে সময় দিন। ওদের মন ভাল রাখলেই বাড়ি আনন্দে ভরে উঠবে। বয়স্কদের পাশে থাকুন। রোজের কর্মব্যস্ততায় দু’দণ্ড কথা হয় না যাঁদের সঙ্গে, তাঁদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিয়েই দেখুন না। তাতেও তো আনন্দ।”

এ বছর দামি পোশাক আর শখের প্রসাধনীতে যদি সাজতে না চান, তা হলে মন সাজান অন্য ভাবে। ক’টা দিন মেলামেশা বাড়ান। মন বেশি ক্লান্ত থাকলে, একটু প্রত্যন্ত জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন। অনিন্দিতা জানাচ্ছেন, প্রত্যন্ত গ্রামের পুজোয় এত আড়ম্বর থাকে না। সামান্য সাজসজ্জায় সকলে মিলে যে আনন্দ, তাতে শামিল হয়ে দেখতে পারেন। ভোরের শিশির আর কাশফুল দেখলেও মন ভাল হয়ে যাবে। তখন কে কতটা কেনাকাটি করল বা করছে, কারা হুল্লোড় করছে আর কারা নয়, সে চিন্তাও থাকবে না। মনোবিদ বলছেন, “এমন অনেক প্রবাসীই আছেন যাঁরা বর্তমান পরিস্থিতি জেনেও পুজোয় কলকাতায় ফিরছেন। বাড়ি ফেরা, সকলের সঙ্গে দেখা করা এবং সকলের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁদের আনন্দ। মনের গ্লানি যদি কাটাতে হয়, তা হলে এই আনন্দই দরকার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement