মুঠো মুঠো ওষুধ খাওয়ার বিপদ। নিজস্ব চিত্র।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই একটি অম্বলের ওষুধ সটান পেটে চালান করেন? না কি দেদার ভাজাভুজি, মশলা দেওয়া খাবার খেয়েই অম্বলের ওষুধ খেয়ে নেন? অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ সাময়িক ভাবে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থেকে রেহাই দেয় বটে, কিন্তু এগুলি ঘন ঘন খাওয়া কি ঠিক? চিকিৎসকেরা বলেন, খেয়ে উঠেই অম্বলের ওষুধ খেয়ে ফেলা স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভাল নয়। এতে সাময়িক ভাবে গলা-বুক জ্বালা কমলেও হজমের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যাবে। তখন ওষুধ না খেলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আর খাবার হজমই হবে না।
গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় আমরা খুঁজি চটজলদি সমাধান ৷ তারই ফলে এই জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার শুরু হয়েছে ৷ জিনট্যাক, র্যানট্যাক জাতীয় ওষুধের বিক্রি তো নিষিদ্ধই হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, এই সব অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধে এমন রাসায়নিক উপাদান আছে, যা বেশি মাত্রায় শরীরে গেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। হঠাৎ অম্বলে সবচেয়ে ভাল ওষুধ লিকুইড অ্যান্টাসিড৷ কিন্তু মানুষজন খাওয়ার ওষুধই খেয়ে নেন। কী ডোজ়ে ও কত দিন খেতে হবে তা না জেনেই এবং চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই এমন ওষুধ খাওয়া শুরু করে দেন। এর গুরুতর প্রভাব পড়ে লিভার ও কিডনিতে।
জীবনযাপনের অনিয়ম, মদ্যপান এবং প্রায় রোজই বাইরের খাবার খেতে অভ্যস্ত যাঁরা, তাঁদের গ্যাস-অম্বলের সমস্যা লেগেই থাকে। আর অম্বল হলে ঘরোয়া উপায়ে তা কমানোর বদলে ওষুধেই ভরসা রাখেন বেশির ভাগই। অথচ একসময়ে মা-ঠাকুমারা পরামর্শ দিতেন, কী ভাবে খাবার খেলে অম্বল হবে না। যেমন বেশি ঝালমশলা দেওয়া খাবারের পর জল খেতে নেই। পেট ভরে মাছ, মাংস বা ভাজাভুজি খাওয়ার পরে নরম পানীয় খেলে তা শরীরের জন্য বিষ। কিন্তু এই ভুলগুলিই বেশি হয়। বিরিয়ানি খেয়েই নরম পানীয়ে চুমুক না দিলে ভাল লাগে না। আবার লুচি-মাংস খেয়েই দই বা আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন অনেকে। কোন খাবারের পর কোনটি খেতে নেই, সে জ্ঞান না থাকার কারণেই অম্বলের সমস্যা বাড়তে থাকে। আর তা কমানোর জন্যই অ্যান্টাসিডের খোঁজ পড়ে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, খাওয়ার পর রোজ রোজ যদি অম্বলের ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস করা হয়, তা হলে তার অনেক প্রভাব পড়বে শরীরে। পাকস্থলীর উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলি নষ্ট হবে। আর উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষতি মানেই দেখা দিতে পারে স্থূলতা এবং ডায়াবিটিস। ফলিক অ্যাসিড, ক্যালশিয়াম, আয়রন হজমে সমস্যা হবে। ফলে অচিরেই অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা দেখা দেবে। তখন পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড খাদ্যনালি দিয়ে উপরে উঠে আসতে থাকবে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হজম না হলেই এমন হবে। তখন ওষুধ না খেলে আরাম হবে না।
কাজেই ওষুধ না খেয়ে জীবনযাপনে সংযম ও কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। যেমন খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা বাদে জল খান, খিদে না পেলে কোনও মতেই খাওয়া চলবে না। অনেকেই বারে বারে বিস্কুট খান। বিস্কুটের বদলে কলা, ছোলা, মুড়ি, বাদাম খেতে পারেন। যথেষ্ট পরিমাণে জলপান করা দরকার। বাইরের খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। ধূমপান, মদ্যপান ও বেশি চিনি দেওয়া পানীয় খাওয়া বন্ধ করতে হবে।