কী এই রোগ, কেন হয়? ছবি: ফ্রিপিক।
প্রাত্যহিক জীবনে যাঁদের পায়ে অত্যন্ত চাপ পড়ে, তাঁদের পায়ের শিরায় এক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে পায়ের শিরা ফুলে গিয়ে গাঢ় নীলচে রঙের রেখা চামড়ার উপরে ফুটে ওঠে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রোগকে বলা হয় 'ভেরিকোজ় ভেন'। সাধারণত মহিলারাই বেশি ভোগেন এই রোগে। এর ফলে পা ফুলে যাওয়া, পায়ের পেশিতে টান ধরে যাওয়া, তা ছাড়া পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা, চুলকানির মতো সমস্যাও দেখা দেয়।
এই বিষয়ে সিউড়ির সরকারি হাসপাতালের অস্থিরোগের চিকিৎসক সুব্রত গড়াই জানাচ্ছেন, মহিলারা বেশির ভাগ সময়েই পা মুড়ে বসে কাজ করেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রান্নাও করেন অনেকে। কাজেই পায়ে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিরা ফুলে নীল হয়ে গিয়েছে। বাতের ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস ভেবে এড়িয়ে যান অনেকে। পরে গিয়ে যন্ত্রণা আরও বাড়ে। তখন পা অসাড় হয়ে যেতে শুরু করে।
ভেরিকোজ় ভেন আসলে কী? চিকিৎসক জানাচ্ছেন, পায়ের শিরাগুলি সাধারণত দু’টি সারিতে বিভক্ত থাকে। এই শিরাগুলিতে যে রক্তজালক থাকে সেখানে রক্তের প্রবাহ একমুখী হয়। রক্ত প্রবাহের সময়ে, কোনও কারণে যদি শিরার মধ্যে থাকা রক্তজালিকা ঠিকমতো কাজ না করে, তখন রক্ত বিপরীত দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে শিরাগুলির উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে ও শিরা ফুলে উঠে। ত্বকের উপর দিয়েও শিরা খুব স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। এই রোগকেই বলা হয় ভেরিকোজ় ভেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে শিরাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।
এই রোগের অনেক উপসর্গ রয়েছে। সুব্রত বলছেন, পা ফুলে গেলেই অনেকে ভাবেন, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা হচ্ছে। যদি দেখা যায়, ত্বকের উপরে গাঢ় বেগনি বা নীল রঙের শিরা ফুটে উঠেছে, তখন বুঝতে হবে সমস্যা অন্য। তা ছাড়া ভেরিকোজ় ভেন হলে পায়ের মাংসপেশিতে টান অনুভব হয়। হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়। সব সময় অস্বস্তি হতে থাকে পায়ে, গোড়ালি ফুলে যায়, পায়ের ত্বকে বাদামি দাগছোপ পড়তে থাকে। পায়ের পাতায় সংক্রমণ, ফোঁড়া, চুলকানি হতেও দেখা যায় অনেকের।
ভেরিকোজ় ভেন সারতে সময় লাগে। চিকিৎসক বলছেন, আগে থার্মাল অ্যাবলেশন পদ্ধতিতে ভেরিকোজ় ভেনের চিকিৎসা হত। সেই পদ্ধতি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ছিল। এখন কাটাছেঁড়া ছাড়াই বিশেষ রকম ইঞ্জেকশন পায়ের শিরায় ফুটিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে রোগী খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।