দীর্ঘ সময়ে এক ভাবে বসে থাকলে বা শুয়ে থাকলে ঘাড়ে পিঠে অসহ্য ব্যথা হয়ে যায় এই রোগে। ছবি: সংগৃহীত
অনেক বাঙালিই স্পন্ডিলাইটিসে ভোগে। দীর্ঘ সময়ে এক ভাবে বসে থাকলে বা শুয়ে থাকলে ঘাড়ে পিঠে অসহ্য ব্যথা হয়ে যায় এই রোগে। নিত্য জীবনে নানা রকম নিয়ম মেনে এবং সঠিক পদ্ধতিতে কিছু বিশেষ ব্যায়ামের সাহায্যে এই রোগের সঙ্গে লড়া সম্ভব। তবে স্পন্ডিলাইটিসেরও বিশেষ কিছু ধরন রয়েছে। সবচেয়ে মারাত্মক ধরনগুলির মধ্যে অন্যতম অ্যাঙ্কিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস। অনেকেই অবশ্য এই রোগের বিষয়ে সে ভাবে জানেন না। তাই হাড়ের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই রোগ কিছু প্রশ্ন করল আনন্দবাজার অনলাইন।
এই রোগের মূল কারণ কী?
কোমড়ের হাড়ের প্রদাহ থেকেই মূলত অ্যাঙ্কিলোজিং স্পন্ডালাইটিস হয়ে থাকে। শিরদাঁড়ার হাড় এতে জুড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনের অনেক ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। এমনকি, পোশাক পরতেও অসুবিধা হতে পারে রোগীর। অনেক গবেষণা করেও এই রোগের কারণ সে ভাবে ধরা পড়েনি। তবে অনেকেই মনে করেন জিন মিউটেশনে এমন হতে পারে। ধূমপান, শরীরচর্চার অভাব, দূষণ এবং অতিরিক্ত জাঙ্কফুড খাওয়া এই রোগ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
জীবনযাপনে বদল আনলে কী এই রোগ এড়ানো সম্ভব?
কোনও ভাবেই এই রোগ এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। তবে এই রোগ হলে তার মারাত্মক ব্যথা বেদনা থেকে মুক্তি হালকা ব্যায়াম, সাঁতার, যেগাভ্যাস, সাইকেল চালানো বা ব্যাডমিন্টনের মতো কোনও খেলা খেলা যেতে পারে। সঠিক ভঙ্গিতে বসে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে এমন খাবার বেশি করে খেতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার, তৈলাক্ত খাবার, ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে যদি এই রোগ ধরা পড়ে।
কী ভাবে বুঝবেন আপনি এই রোগে আক্রান্ত?
অনেকেই এই রোগের ব্যথা চট করে ধরতে পারেন না। পেশির ব্যথা না হাড়ের তা বোঝার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। সঠিক চিকিৎসায় এই রোগের বৃদ্ধি আটকানো সম্ভব। যদি দেখেন অনেকক্ষণ ঘুমানোর পর ব্যথা করছে এবং সেই ব্যথা একটু হাঁটাচলা করে কমছে, তা হলে তা অ্যাঙ্কিলোজিং স্পন্ডালাইটিসের লক্ষণ। হাড়ের চিকিৎসকের সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করুন।
স্পন্ডিলাইটিসেরও বিশেষ কিছু ধরন রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
কোন বয়সে এই রোগ হতে পারে?
বেশির ভাগ হাড়ের সমস্যা বার্ধক্যে দেখা দিলেও এই রোগ ১৫-২০ বছরের মধ্যে হয়। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে তা আরও মারাত্মক রূপ নেয় চিকিৎসা না করালে।
এই রোগ ধরা পড়লে কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
জীবনযাপনে কিছু বদল তো আনতেই হবে যেমন আগেই বলা হয়েছে। তা ছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে যাতে চোট না পান। বাড়িতে কোথাও পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না দেখে নিন। কোনও তার বা দড়িতে পা জড়িয়ে যাতে পড়ে না যান সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। গাড়িতে সব সময়ে সিট বেল্ট ব্যবহার করবেন। পিছনের সিটে বসলেও।
এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কী মাথায় রাখতে হবে?
খুব বেশি দেরিতে চিকিৎসা শুরু করলে এই রোগ সামলানো মুশকিল। শরীরে এই রোগ দানা বাঁধার ৬ বছরের মধ্যে যদি ধরা পড়ে এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যায় তাহলে খুব অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে নিয়মগুলি ঠিক মতো মেনে চলতে হবে। অনেকে ব্যথার জন্য মাঝেমাঝেই ওষুধ খেয়ে ফেলেন। মাথায় রাখতে হবে অতিরিক্ত পেনকিলার কিডনির সমস্যা ডেকে আনতে পারে।