রাত জেগে কাজ করলে কী ক্ষতি হবে? ছবি: সংগৃহীত।
তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘ভোর’ জিনিসটা অনেকটা মরীচিকার মতো। নামে আছে, কিন্তু কাজে নেই!
সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে শুনলে আগের রাত জেগেই কাটিয়ে দেন অনেকে। ‘নাইট শিফ্ট’ থাকলে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সেই সংস্থা অগ্রাধিকার পায়। পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, স্বেচ্ছায় ‘মর্নিং শিফ্ট’ নিতে চাওয়া লোকজনের সংখ্যাও হাতেগোনা। তবে এই অভ্যাস ভাবী বাবা-মায়েদের ক্ষেত্রে কতটা সাংঘাতিক হয়ে উঠতে পারে, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। সে বিষয়ে সতর্ক করছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা।
বন্ধ্যত্ব বিষয়ক সমস্যার চিকিৎসক ভারতী ধোরপাতিল বলেন, “রাত জেগে কাজ করার অভ্যাসে ‘সার্কাডিয়ান রিদ্ম’ বা শরীরের নিজস্ব যে ছন্দ তা নষ্ট হয়। যার প্রভাব পড়ে স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলির উপর। তার মধ্যে প্রজনন অন্যতম।”
মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ, শারীরবৃত্তীয় এই প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে ঋতুচক্রের যোগ রয়েছে। রাতের পর রাত ঘুম না হওয়ায় শারীরবৃত্তীয় কাজে সাহায্যকারী বিভিন্ন হরমোন— যেমন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনেরও হেরফের হয়। ভারতীর মতে, “এই কারণে সন্তানধারণের সমস্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেড়ে চলেছে গর্ভপাতের মতো অনভিপ্রেত ঘটনা।”
পুরুষদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অন্য রকম। প্রজননের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ঘুম কম হলে হরমোনের হেরফেরে আবার শুক্রাণুর সংখ্যা এবং মান, দুই-ই নষ্ট হতে পারে। ভারতী বলেন, “সার্কাডিয়ান রিদ্ম নষ্ট হলে পুরুষ শরীরে শুক্রাণু উৎপাদনের যে স্বাভাবিক ক্ষমতা, তা হ্রাস পায়। প্রজননে সাহায্যকারী পুরুষ হরমোনের মাত্রাও বিঘ্নিত হয়।”
রাত জেগে কাজ করলে সন্তানধারণের ক্ষেত্রে মহিলাদের কী কী সমস্যা হতে পারে?
১) দীর্ঘ দিন ধরে ‘নাইট শিফ্ট’ করার অভ্যাসে ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে পড়ে। যা গর্ভধারণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
২) ‘সার্কাডিয়ান সাইকেল’ বা শরীরের নিজস্ব ছন্দ নষ্ট হলে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়তে থাকে। ফলে ডিম্বাশয়ে সংরক্ষিত ডিম্বাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে।
৩) হরমোনের হেরফেরে প্রাথমিক ভাবে ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে পড়ে। সঠিক চিকিৎসা না হলে তা বন্ধ্যত্বের দিকে মোড় নেয়।
৪) অল্পবয়সিদের মধ্যে ‘পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম’ বা ‘পিসিওএস’-এর সমস্যা দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে সেখান থেকেও বন্ধ্যত্ব আসতে পারে।