‘পুষ্পা ২’ ছবির একটি গানের দৃশ্যে রশ্মিকা মান্দানা এবং অল্লু অর্জুন (ডান দিকে)। ছবি : সংগৃহীত।
নায়িকাকে আদরের আতিশয্যে কোলে তুলে নিচ্ছেন নায়ক— এমন তো সিনেমার পর্দায় হামেশাই দেখা যায়। আবার সিনেমার ‘দুষ্টু’ লোকেদের নায়িকাকে কাঁধে তুলে অপহরণ করতেও দেখা যেত একটা সময়ে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘পুষ্পা টু’ ছবিতেও একটি গানের দৃশ্যে নায়িকা রশ্মিকা মন্দনাকে কোলে তুলতে দেখা যাচ্ছে নায়ক অল্লু অর্জুনকে। রশ্মিকা জানিয়েছেন, ওই দৃশ্যে শুটিং করতে গিয়ে তাঁর মারাত্মক ভয় লেগেছিল। কারণ কেউ তাঁকে উঁচুতে তুললে তাঁর আতঙ্ক হয়!
রশ্মিকার ‘ফোবিয়া’
যে গানের দৃশ্যের কথা বলেছেন রশ্মিকা, সেটি ‘পুষ্পা ২’-এর ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় গান ‘পিলিংস’। সেই গানের দৃশ্যে পর্দায় নেচেছেন রশ্মিকা এবং অল্লু দু’জনেই। নাচের সময়ে বহু বার রশ্মিকাকে উঁচুতে তুলতে দেখা গিয়েছে অল্লুকে। রশ্মিকা নিজেও লাফিয়ে উঠেছেন অল্লুর কোলে। পর্দায় বিষয়টি সহজ দেখালেও পর্দার আড়ালে তাঁর অভিজ্ঞতা কী ছিল, সেই কথাই জানিয়েছেন রশ্মিকা। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে গানের একটি দৃশ্য শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘আমার অভিনয় জীবনের কঠিনতম কাজ ছিল পিলিংসের শুটিং। অল্লু অর্জুন স্যর সাহায্য না করলে ওই গানের শুটিং করা আমার পক্ষে সম্ভবই হত না। উঁচুতে তুললে মারাত্মক ভয় লাগে আমার। অল্লু স্যর অনেক বুঝিয়ে সেই ভয় ভাঙিয়েছেন।’’ চিকিৎসকেরা অবশ্য বলছেন, রশ্মিকার ওই ভয়ের একটা নাম আছে। এটি উচ্চতার ভয় বা অ্যাক্রোফোবিয়া কিংবা পড়ে যাওয়ার ভয় বাসোফোবিয়ারই একটি দিক। মানসিক সমস্যা থেকেই ওই ভয় তৈরি হতে পারে। তবে তা কাটানোর উপায়ও আছে।
যে গানের দৃশ্যের কথা বলেছেন রশ্মিকা, সেটি ‘পুষ্পা ২’-এর ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় গান ‘পিলিংস’। ছবি: সংগৃহীত।
ভয়ের বিচার
নানা জটিল মানসিক পরিস্থিতি থেকে ওই ধরনের ভয় তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন মনোরোগ চিকিৎসক রাজেশ কুমার। নয়াদিল্লির উদগম মানসিক রোগ চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক তিনি। রাজেশ জানাচ্ছেন, উচ্চতার ভয় বা পড়ে যাওয়ার ভয় আদতে গভীর উদ্বেগের প্রকাশ। যা তৈরি হয় দুর্বল মানসিক স্থিতি অথবা কোনও কিছু নিয়ন্ত্রণে না থাকার বা নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় থেকে। আবার পুরনো কোনও ‘ট্রমা’ বা আতঙ্কের অভিজ্ঞতাও এর কারণ হতে পারে। রাজেশ বলছেন, ‘‘ওই ভয়টা শুধু শারীরিক নয়, ওর সঙ্গে আমাদের আবেগ এবং গভীর মানসিক যন্ত্রণা জড়িয়ে আছে। এমনও হতে পারে অনেক আগে আপনি হয়তো উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। সেই সময়ের যে ভয়, তা এখনও ভিতরে রয়ে গিয়েছে। এই ধরনের সমস্যাকে বলা হয় পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডার, সংক্ষেপে পিটিএসডি।’’
কী কী সমস্যা?
চিকিৎসক বলছেন, কারও এমন সমস্যা থাকলে রশ্মিকার মতো ভয় হতেই পারে। অনেকেই ওই ভয়ের কারণে, খাদের ধারে দাঁড়ালে বা লিফ্টে উঠলে বা কেউ কোলে তুলে নিলে মাথা ঘোরে, গলা শুকিয়ে যায়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় বা শিরশিরানি অনুভূতি হয়, গা গুলোতেও পারে। অনেকেরই হৃদ্স্পন্দন দ্রুত লয়ে হতে থাকে। কারও আবার দমবন্ধ হয়ে আসে। ওই ধরনের ভয় মারাত্মক জায়গায় পৌঁছতে পারে।
রশ্মিকার ভয়টা শুধু শারীরিক নয়, ওর সঙ্গে আবেগ এবং গভীর মানসিক যন্ত্রণা জড়িয়ে আছে, বলছেন চিকিৎসক। —ফাইল চিত্র।
কী ভাবে সাহায্য
মানসিক চিকিৎসাই ওই ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারে। চিকিৎসক রাজেশ বলছেন, ‘‘যে কোনও ফোবিয়ার আদর্শ চিকিৎসা হল কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি বা সিবিটি। ওই থেরাপি সাধারণত মনের অযৌক্তিক ভয় বা ভাবনাগুলোকে দূর করতে সাহায্য করে। রোগী নিজের ভয় বা আতঙ্ককে সামলাতে শেখেন ওই থেরাপির মাধ্যমে।’’ তবে তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে যে কেউ গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করতে পারেন, বা ভাবনাচিন্তাকে অন্য পথে চালিত করে কোনও সুখস্মৃতির কথা মনে করতে পারেন। জল খেতে পারেন।