—প্রতীকী চিত্র।
ইদানীং টিনএজারদের মধ্যে কিডনি স্টোনের সমস্যা বাড়ছে। আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগেও হয়তো টিনএজারদের মধ্যে কিডনি স্টোন সচরাচর এত দেখা যেত না। কিন্তু এখন এই সমস্যা কেন বাড়ছে? কী ভাবে গোড়াতেই এই সমস্যা রুখবেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকরা
কেন হচ্ছে কিডনি স্টোন?
নেফ্রোলজিস্ট ডা. ললিত অগরওয়ালের কথায়, “এর অনেকটাই জেনেটিক। যখন জিন ডিফেক্টিভ হয়, তখন তার কার্যকারিতাও ঠিক থাকে না। তা থেকেই মূলত কিডনি স্টোন হওয়ার প্রবণতা থাকে। তবে তাকে মদত দেয় চারপাশের পরিস্থিতি অর্থাৎ সেই ব্যক্তির খাওয়াদাওয়া। এখন বেশির ভাগ টিনএজার নিয়মিত ফাস্ট ফুড খায়। প্রত্যেক দিন চিপস, প্যাকেজড ফুড খাওয়ার অভ্যেসও বাড়ছে। অন্য দিকে ঠিক মতো জল খায় না তারা। আর ফাস্ট ফুড, প্যাকেজড ফুডে অত্যধিক সোডিয়াম থাকে। ক্যালশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফেট... এগুলো শরীরে জমতে জমতে সেডিমেন্ট তৈরি করে। আর পর্যাপ্ত জল পান না করলে সেটা খুব তাড়াতাড়ি ক্রিস্টালাইজ় হয়ে যায়। তৈরি হয় স্টোন।” এই কারণেই টিনএজারদের মধ্যে কিডনি স্টোনের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
এই স্টোনের আকার বালির দানা থেকে বড় বলের মতোও হতে পারে। স্টোন ছোট হলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বার করে দেওয়া সহজ হয়। কিন্তু এই পাথরই বড় হয়ে গেলে প্রস্রাবে বাধা তৈরি করে, কিডনির কাজও বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন নানা রকম উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে।
উপসর্গ চিনতে হবে
অনেক সময়ে কিডনি স্টোন তৈরি হলেও তার কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। সেটা যখন ইউরেটার দিয়ে ইউরিনারি ট্র্যাক্টের মাধ্যমে নীচের দিকে নামতে শুরু করে, তখন উপসর্গ দেখা যায়। যেমন:
এই প্রসঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বললেন, “বিশেষত স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা টয়লেটে যেতে চায় না। অনেকেরই ধারণা স্কুলের টয়লেট থেকে ইউটিআই ছড়ায়। কিন্তু বিষয়টা উল্টো। টয়লেটে যাওয়ার ভয়ে সেই ছাত্রীটি হয়তো স্কুলে গিয়ে জল খাওয়া কমিয়ে দেয়। টয়লেট চেপে রাখে। এর থেকেই কিন্তু ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়ে। আর এই গরমে জল না খেয়ে দীর্ঘক্ষণ থাকলে ক্যালশিয়াম, ফসফেট, সোডিয়ামের মতো মিনারেলস যা আমাদের কিডনিতে সেডিমেন্টের মতো গিয়ে জমা হয়, তা বেরোতে পারে না। জলের অভাবে বরং সহজে তা পাথরে পরিণত হয়। তাই স্কুলজীবন থেকেই নিয়মিত পরিমাণ মতো জল খেতে হবে, টয়লেটেও যেতে হবে।” প্রয়োজনে কিছু টয়লেট স্যানিটাইজ়ার সঙ্গে রাখা যায়।
চিকিৎসাপদ্ধতি
ডা. অগরওয়াল বলছেন ওষুধের সাহায্যেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি স্টোন বার করে দেওয়া হয়। তবে সেই পাথর যদি বড় হয়ে যায়, কিডনির কাজে বাধা দেয়, ইনফেকশন হতে থাকে... তখন অস্ত্রোপচার করে কিডনি স্টোন বাদ দিতে হতে পারে। ডা. ললিত অগরওয়াল কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অ্যালক্যালাইন ডায়েট মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
খাবারের অভ্যেস বদলালেই এই ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয় না। টিনএজারদের সামনে পড়াশোনা, কেরিয়ার তৈরিতে মনোযোগ দেওয়ার সময়। তাই শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সতর্ক থাকা দরকার।
মডেল: রাইমা গুপ্ত; মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত; ছবি: অমিত দাস