মিষ্টি খাই খাই ভাব মানেই কি ডায়াবিটিস? ছবি: শাটারস্টক।
পেট ভরে খাওয়াদাওয়া করলেও অনেকে অজান্তেই সারা ক্ষণ খাই খাই করেন। চলতি কথায় এটাকে বলা হয় চোখের খিদে। আবার কখনও কখনও এমনটা হয় যে, কোনও একটা বিশেষ খাবার খেতে খুব ইচ্ছে করছে। সকাল হোক কিংবা বিকেল, ওই বিশেষ খাবারের দিকেই মনটা পড়ে থাকে সব সময়। কোন খাবার খেতে ইচ্ছে করছে তা আসলে নির্ভর করে আমাদের শরীরের উপর। ব্যাপারটা মোটেও চোখের খিদে নয়। প্রতিটা বিশেষ স্বাদের সঙ্গেই যোগ রয়েছে আমাদের শরীরের কোনও না কোনও অঙ্গের। অনেক সময় দেখা যায়, খুব বেশি মানসিক চাপে থাকলে আমাদের অনেকের মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তবে সারা ক্ষণ যদি মিষ্টি খাই খাই করি তা কিন্তু মোটেই স্বাভাবিক নয়। পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরে বিশেষ কিছু পরিবর্তন এলে আমাদের কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। জেনে নিন সেগুলি কী কী।
১) ঘুমের অভাব: দিনে সাত ঘণ্টা নিশ্চিন্তে ঘুমোলেই শরীরে বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। লেপটিন নামক হরমোন শরীরে ঠিক কোন খাদ্যটা কতটা প্রয়োজন, কোন খাদ্যটা আর খেতে ইচ্ছে করছে না— এই সবের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে এই হরমোনের উৎপাদন মাত্রা কমে যায়। ফলে ভাজাভুজি, মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
২) প্রোটিনের ঘাটতি: শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলেও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ে। প্রোটিনের অভাব হলে শরীর শক্তি উৎপাদনের জন্য বিকল্পের খোঁজ করে। টিস্যু তৈরি, মাস্ল তৈরি, হরমোনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণের জন্য শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ গ্রাম থেকে ১.২ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। আর পর্যাপ্ত প্রোটিন না পেলেই শরীর কার্বোহাইড্রেট থেকে শক্তি তৈরির চেষ্টা করে, তাই মিষ্টি, ভাত, আলু খাওয়ার প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়।
৩) মানসিক চাপ: মানসিক উদ্বেগ ও চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই হরমোন ইনসুলিনের ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করে। তাই চিনিজাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছে হয়। পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি খনিজের অভাব ঘটলেও মিষ্টি খাওয়ার প্রতি ঝোঁক বাড়ে।
কী ভাবে মিষ্টি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করবেন?
যখন মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে করবে, তখন এক গ্লাস জল খেয়ে নিতে পারেন। ছবি: শাটারস্টক।
১) যখন মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে করবে তখন এক গ্লাস জল খেয়ে নিতে পারেন। জল খেলে পেট ভরে যায়, মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কমে।
২) নিয়মিত মাল্টিভিটামিন খেলে শরীরে জরুরি পুষ্টিগুণের ঘাটতি হবে না। তা হলে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতাও কমে যাবে। তবে ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩) অল্প মাত্রায় বারে বারে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। খালি পেটে থাকবেন না। খিদের মুখে সামনে মিষ্টি দেখলে বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়।
৪) প্রোটিন বেশি করে খান। মাছ, মাংস, ডিম, ড্রাই ফ্রুটস খেলে অনেক ক্ষণ পেট ভরা থাকে। খিদেও কম পায়।
৫) মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হলে খেজুর, স্ট্রবেরি, কমলালেবু, আঙুর বা মোসাম্বির মতো মিষ্টি ফল খেলে আর চিনি খেতে ইচ্ছে করবে না।