জলবসন্ত নিয়ে বেশ কিছু কুসংস্কার আছে ছবি: সংগৃহীত
ত্বকে লাল রঙের ছোট ছোট ফোস্কার মতো উপসর্গ দেখে সহজেই চেনা যায় জলবসন্ত বা ‘চিকেন পক্স’। সাধারণ ভাবে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও অন্তঃসত্ত্বা ও ‘ইমিউনো কম্প্রোমাইজড’ ব্যক্তিদের পক্ষে এই রোগ খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। জলবসন্তকে কেন্দ্র করে একাধিক ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তার কিছু কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখা থাকলেও অধিকাংশই কুসংস্কার। তাই দ্রুত আরোগ্যলাভের জন্য এই বিষয়গুলি সম্পর্কে অবগত থাকলে উপকার মিলতে পারে।
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
১। বসন্ত শুধু বসন্তকালেই হয়
শুধু বসন্তকালে নয়, বছরের যে কোনও সময়েই এই রোগ হতে পারে। তবে বছরের প্রথম পাঁচ-ছ’মাস অর্থাৎ, জানুয়ারি থেকে মে-জুন পর্যন্ত এই রোগের আশঙ্কা বেশি থাকে। মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তনই এর কারণ।
২। ওলাওঠা
গ্রাম বাংলায় এক সময়ে বসন্ত রোগে বহু মানুষের মৃত্যু হত। চলতি ভাষায় রোগটিকে বলা হত ওলাওঠা। কিন্তু সেটি ছিল গুটিবসন্ত বা ‘স্মল পক্স’। টিকাকরণের ফলে এই রোগটি এখন প্রায় নির্মূল হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে যে রোগটি দেখা যায়, তাতে সাধারণ ভাবে প্রাণের ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
৩। মশারি টাঙালে রোগ ছড়ায় না
এটি একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটির নাম ‘ভ্যারিসেল্লা জস্টার’। আক্রান্তের হাঁচি, কাশির আণুবীক্ষণিক অংশ বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আক্রান্তের থুতু কিংবা ফোস্কার মধ্যে যে রস থাকে তা থেকেও ছড়াতে পারে সংক্রমণ।
৪। ত্বকের শুকনো খোসা রোগের উৎস
অনেকেই ভাবেন জলবসন্তে তৈরি হওয়া ত্বকের ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ার পর সেই শুকনো খোসা রোগ ছড়ায়। কেউ কেউ এই খোসা পুড়িয়ে ফেলারও পরামর্শ দেন। চিকিৎসকরা কিন্তু বলছেন, ত্বকের ক্ষত কাঁচা অবস্থাতেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
৫। মাছ-মাংস খাওয়া একেবারেই উচিত নয়
মাছ-মাংসের উপর নিষেধাজ্ঞা অন্যতম মুখ্য একটি কুসংস্কার। বরং এই রোগে যেহেতু শরীর দুর্বল হয়ে যায়, তাই এই সময়ে আরও বেশি করে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। বিশেষ করে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেতে হবে বেশি পরিমাণে। তবে মাছ-মাংস খেলেও তা সহজপাচ্য হতে হবে। রান্নায় বেশি তেল-মশলা দেওয়া চলবে না।
৬। নখ কাটা চলবে না
এটিও একেবারেই ভ্রান্ত একটি ধারণা। বরং হাতে নখ থাকলে তা বিপত্তি বাড়াতে পারে। অনেক সময়ে বেখেয়ালে ক্ষত স্থান চুলকিয়ে ফেলেন কেউ কেউ। এই সময়ে হাতে নখ থাকলে তা অন্য কোনও সংক্রমণ ডেকে আনতে পারে। তাই বসন্তে আক্রান্ত রোগীর নখ কেটে ফেলা উচিত। ক্ষতস্থান কোনও মতেই চুলকানো যাবে না।
৭। সুতির জামা পরা উচিত
এটি কিন্তু কুসংস্কার নয়। সত্যি সত্যিই জলবসন্তে আক্রান্ত রোগীর ভারী পোশাক এড়িয়ে হালকা সুতির পোশাক পোশাক পরা ভাল। এতে ক্ষতগুলিতে ঘর্ষণের আশঙ্কা কমে।
৮। ডাবের জল ছাড়া স্নান করা উচিত নয়
এই ধারণা একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। এমনকি অনেকেই রোগীকে স্নান করতে নিষেধও করে থাকেন। চিকিৎসকদের মতে, জলবসন্ত হলে স্নান করতে আদৌ কোনও নিষেধ নেই। কিন্তু সমস্যা হল, স্নানের পর গা মোছার সময়ে ফোস্কা বা ক্ষততে ঘষা লেগে বিপত্তি বাধতে পারে। স্নান না করলেও পরিছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।