চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
সর্ব ক্ষণ মাথায় গিজগিজ করে হাবিজাবি চিন্তা? অল্পেই উদ্বেগ বাড়ে? মন সারা ক্ষণই চঞ্চল, অস্থির? অহেতুক দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত উদ্বেগ কেবল মানসিক চাপই বাড়ায় না, মারাত্মক মানসিক রোগের কারণও হয়ে উঠতে পারে। তাই মানসিক চাপ থেকে রেহাই পাওয়া খুব জরুরি। সংসার, পেশা সামলাতে সামলাতে মন ভাল থাকে না অনেক সময়েই। সামান্য বিষয় নিয়েও তখন উৎকণ্ঠা শুরু হয়। আর দুশ্চিন্তার সময় এমন কিছু হরমোনের নিঃসরণ হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ঘুমেরও বারোটা বেজে যায়। মনমেজাজ ঠিক রাখতে নিয়ম করে যোগাসন অভ্যাস করতে পারেন। কেবল রোগা হতেই নয়, নানা রকম রোগবালাই ঠেকিয়ে রাখতেও নিয়ম করে যোগাসন করা একান্ত প্রয়োজন। অবশ্য সঠিক নিয়ম মেনে যোগাসন করলে তবেই মিলবে ফল। শরীর চাঙ্গা রাখতে কোন কোন আসন অভ্যাস করতে পারেন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন। রইল আসন আসান করার পদ্ধতির হদিস। আজকের ব্যায়াম পর্বতাসন।
নামেই মালুম, স্কুলবেলায় আঁকা পাহাড়ের আকৃতির মতো দেখতে এই আসন। এই আসনটি খুবই প্রচলিত। নিয়মিত এই আসন অভ্যাস করলে ক্লান্তি দূর হয়ে সহজেই পুনরুজ্জীবিত হওয়া যায়, শরীরের পাশাপাশি মানসিক ক্লান্তিও দূর হয়।
কী ভাবে করবেন?
• হাঁটু ভাঁজ করে ম্যাটের উপর বসুন। দুই হাত কাঁধের সোজাসুজি সামনে রাখুন। দেখবেন, কনুই যেন ভাঁজ না হয়।
• এ বার হাত ও নিতম্বের সোজাসুজি হাঁটুতে ভর দিয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গি করুন। এই অবস্থান দেখতে লাগবে অনেকটা টেবিলের আকৃতির। এটিই হল আসন শুরুর ভঙ্গি।
• এ বার পায়ের পাতা ও হাতের তালুতে ভর দিয়ে নিতম্ব যতটা সম্ভব উপরের দিকে তুলতে হবে। শরীরের সম্পূর্ণ ভার থাকবে হাতের তালু ও পায়ের পাতার উপর।
• এ বার ধীরে ধীরে মাথা নিচু করুন এবং নিতম্ব আরও উপরে তুলুন। সুবিধে মতো হাত ও পায়ের অবস্থান ঠিক করে নিন। খেয়াল রাখবেন, হাঁটু যেন ভাঁজ না হয় এবং হাত যেন সোজা থাকে।
• অবশেষে ইংরেজি এ আকৃতির মতো শরীরের বিভঙ্গ হলে বুঝবেন, আসনের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এই অবস্থানে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ১০–২০ বার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে নিতে এই অবস্থান ধরে রাখুন। এই অবস্থানে সমস্ত শরীরে টান অনুভব করবেন।
• এ বার ধীরে ধীরে হাঁটু মাটিতে নামিয়ে শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। ৩–৫ বার পর্বতাসন অভ্যাস করতে পারলে ভাল হয়।
সতর্কতা
যাঁদের মাথা ঘোরা, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, স্লিপ ডিস্ক, কোমর, পিঠ বা হাঁটু, হাত ও কাঁধে খুব বেশি ব্যথা আছে, তাঁরা এই আসন করবেন না।
কেন করবেন?
পর্বতাসন অভ্যাস করলে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীরের পেশি ও অস্থিসন্ধি প্রসারিত হয় বলে ক্লান্তি ও জড়তা দূর হয়। সমস্ত শরীর টান টান হয় ও ঝরঝরে লাগে। আসনটি অভ্যাস করার সময় মেরুদণ্ডের সংলগ্ন স্নায়ুতে রক্ত চলাচল বাড়ে, ফলে ক্লান্তি কেটে যায় ও চনমনে বোধ হয়। কাঁধের পেশি সচরাচর বেশি ব্যবহার করা হয় না বলে পেশি শক্ত হয়ে ব্যথা হতে পারে। সেই সমস্যা চলে যায়। মাথা নিচু করে আসনটি অভ্যাস করা হয় বলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ে। ফলে দুশ্চিন্তা দূর হয় ও মন ভাল থাকে।