টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবিটিস কোথায় আলাদা? ছবি: সংগৃহীত।
ডায়াবিটিস এমন একটি রোগ, যা একা আসে না, এই একটা রোগ সঙ্গে ডেকে আনে হাজার রকম সমস্যা। জীবনযাত্রায় নানা অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এই রোগের আশঙ্কা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কোন বয়স থেকে ডায়াবিটিস পরীক্ষা করা দরকার? অনেকেই মনে করেন, ৪০ বছরের উপরের মানুষের ক্ষেত্রে উপসর্গ না থাকলেও প্রতি বছর ডায়াবিটিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন। আমেরিকান ডায়াবিটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, তিন দশক আগেও শিশু ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই রোগ ছিল অত্যন্ত বিরল। কিন্তু এই তিন দশকে ছবিটি আশঙ্কাজনক ভাবে বদলে গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, ভারতে প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে এক জনের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
শিশুদের ক্ষেত্রেও ডায়াবিটিস রোগ মূলত দু’ ধরনের হয় টাইপ-১ ও টাইপ-২। টাইপ ১ ডায়াবিটিস মূলত জিনগত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনেক বেশি দেখা যায়। অপর দিকে টাইপ ২ ডায়াবিটিস খাদ্যাভ্যাস বা ওজন সংক্রান্ত কারণে হওয়ার সম্ভবনা থাকে, যার লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়।
অনেকেই জানেন না টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবিটিসের এর মধ্যে আসলে পার্থক্য কোথায়?
টাইপ ১ ডায়াবিটিস কী?
টাইপ ১ ডায়াবিটিসকে অটোইমিউন রোগ বলা হয়। অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার ফলে যখন মানুষের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়, সে অবস্থাকে টাইপ ১ ডায়াবেটিস বলা হয়।
টাইপ ২ ডায়াবিটিস কী?
টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু শরীর ইনসুলিন গ্রহণে বাধা দেয়। অন্য ভাবে বলা যায়, টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে মানুষের শরীর ইনসুলিনের পূর্ণ ব্যবহার করতে অক্ষম হয়ে যায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক হারে বেড়ে যায়।
বাবা-মায়ের ডায়াবেটিক হলে শিশুদের শরীরেও ডায়াবিটিস রোগ বাসা বাঁধার ঝুঁকি থাকে। তাই পরিবারে কারও ডায়াবিটিস থাকলে শিশুদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জেরেই শিশুদের শরীরে বাসা বাঁধছে মধুমেহ রোগ। শিশুদের মধ্যে কোন লক্ষণ দেখলেই অভিভাবকেরা সতর্ক হবেন?
১) শিশু কি ঘন ঘন জল খাচ্ছে? এটি কিন্তু ডায়াবিটিসের লক্ষণ। ডায়াবিটিসের কারণে জিভে লালার পরিমাণ কমে যায়, গলা শুকিয়ে যায়। ডায়াবিটিসের মাত্রা অত্যধিক হারে বেড়ে গেলে গলায় জ্বালা, আলসার, এমনকি ঘন ঘন সংক্রমণও হতে পারে।
২) বোর্ডের লেখা পড়তে সমস্যা হচ্ছে খুদের? কেবল টিভি দেখার বা মোবাইল ঘাঁটার ফলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা না-ও হতে পারে। ডায়াবিটিস শরীরে বাসা বাঁধলে চোখের সমস্যাও শুরু হয়, তাই সাবধান হতে হবে।
৩) খুদের মধ্যে চনমনে ভাবের অভাব দেখছেন? সে সারা ক্ষণ ঝিমিয়ে থাকছে? এমনটা দেখলে সতর্ক হোন। ডায়াবিটিসের কারণে শিশুর শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। শিশুর ওজন কোনও কারণ ছাড়াই অনেকটা কমে গেলেও এ বিষয় সতর্ক হতে হবে।
৪) বার বার প্রস্রাব করাও কিন্তু ডায়াবিটিসের লক্ষণ। সন্তান যদি বার বার শৌচাগারে দৌড়য়, তা হলে তা তার রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
৫) শিশুর শরীরে মাঝেমধ্যেই র্যাশ বেরোচ্ছে? গা-হাত-পায়ে কালো ছোপ পড়ছে? তা হলে কিন্তু সতর্ক হতে হবে। শিশুর মুখের ভিতরের অংশ, জিভে ঘন ঘন ঘা হলে বা জ্বালা করলে বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না। ডায়াবিটিস বাসা বাঁধলে এমনটা হতেই পারে।