ওজন এবং ডায়েট একই মুদ্রার দুটো পিঠ। বাহ্যিক সৌন্দর্য হোক বা নিজেকে ফিট রাখা, উচ্চতা এবং ওজনের ভারসাম্য রাখাটা খুবই জরুরি। তাই ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিভিন্ন রকম ডায়েট নিয়ে আলোচনা হয়েই থাকে। আজ বরং জেনে নেওয়া যাক ভলিউমেট্রিক ডায়েট বিষয়ে।
এই ধরনের খাদ্যাভাসে মূলত কম ক্যালরি যুক্ত খাবারের সঙ্গে বেশি পরিমাণে জল খাওয়ার কথা বলা হয়। এতে খিদে কমার সঙ্গে পেট ভর্তি থাকে দীর্ঘক্ষণ। এর ফলে এই ডায়েট শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এর ইতিবাচক দিক হল, স্বল্পমেয়াদি সমাধানের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেওয়া হয় এই ধরনের ডায়েট প্ল্যানে।
কী খাবেন, কী ভাবে খাবেন?
এক্ষেত্রে সাধারণত বেশি পরিমাণে তাজা ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন ডায়েটিশিয়ানরা। তবে কোনও ধরনের ফলের রস বা ড্রাই ফ্রুটস চলে না একেবারেই। এই ডায়েট অনুযায়ী সকালের কিংবা সন্ধের জলখাবারে খাওয়া যেতে পারে এক বাটি ফল। যে কোনও মরসুমি সবজি, সিদ্ধ করা শাক এবং ডাল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা ছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ কম ক্যালরির হোলগ্রেন সিরিয়াল যেমন— ডালিয়া, আটা, সুজি, বা কিনোয়াও খেতে পারেন।
ধরা যাক কোনও ব্যক্তি সকালে গ্রিন টি-এর সঙ্গে একটি বা দু’টি বিস্কিট, জলখাবারে কিনোয়া, ওটস, সুজি বা ব্রাউন ব্রেড যে কোনও কিছুই খেতে পারেন। সঙ্গে অল্প কিছু সবজি, এগ হোয়াইটও রাখতে পারেন। বেলার দিকে এক বাটি ফল খেতে পারেন। দুপুরের বা রাতের খাবারে চলতে পারে ডালিয়া বা আটার রুটি কিংবা ব্রাউন রাইস। সঙ্গে একবাটি ডাল এবং সবজি। মাছ বা মাংস খেতে চাইলে ৫০ থেকে ৭৫ গ্রামের বেশি না খাওয়াই ভাল। প্রয়োজনে বিকেলের দিকে এক বাটি ফল বা কখনও ছোলা, শসা, পেঁয়াজ দিয়ে খেতে পারেন।
কী খাবেন না?
এই ধরনের ডায়েটে চর্বি জাতীয় খাবার, চিনি এবং কোনও রকম প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া চলবে না। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীর মতে, “এই ধরনের ডায়েটের ক্ষেত্রে মাংস খেতে হলে বাদ দিতে হবে তার চর্বি জাতীয় অংশটা। ডালিয়া খেলে তা বানাতে হবে একটু পাতলা করে। এবং খাবারে তেলের পরিমাণ হবে খুব সামান্য।”
ভলিউমেট্রিক ডায়েটের গুণাগুণ
ওজন কমানোর জন্য অনেকেই কম ক্যালরিযুক্ত খাবারের দিকে ঝোঁকেন। বেশির ভাগ ডায়েট প্ল্যানই এই যুক্তিতে পরিকল্পনা করা হয়। এক্ষেত্রেও কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার সহযোগে ডায়েটে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়, ফলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হয় না। ডায়েটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরীর কথায়, “এই ডায়েট পরিকল্পনায় জল বেশি থাকায় শরীরে ডি-হাইড্রেশন হয় না। তবে কেবল কম ক্যালরি যুক্ত খাবারই নয় অনেক সময় উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবারকেও নিয়ন্ত্রিত ভাবে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।” কেবল ওজন কমানোর জন্য নয়, ডায়বিটিসের রোগী বা হৃদ্্রোগের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁদেরও অনেক সময়ে এই ভলিউমেট্রিক ডায়েট মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা। পাশাপাশি সুবর্ণা বলছেন, “কমপক্ষে দু’ থেকে চার মাস অনুসরণ করতেই হবে এই ডায়েট। তবেই ফলাফল দেখা যাবে।” তবে কেটো ডায়েট যেমন খুব বেশি দিন অনুসরণ করা উচিত নয়, এক্ষেত্রে কিন্তু সে ধরনের কোনও সমস্যা নেই।
সুবর্ণা এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, “ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে এই ধরনের ডায়েটে সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তে উচ্চ শর্করার পরিমাণের কারণে অনেক ধরনের ফলই খাওয়া তাঁদের বারণ। তা ছাড়া দিনে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রামের বেশি ফল দেওয়াও যায় না তাঁদের। ফলে সমস্যা হয় স্বাভাবিক ভাবেই।” তা ছাড়া শরীরে ফাইবারের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট, জল, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল প্রয়োজন থাকে সবেরই। সারাদিনের ডায়েটে মোট ক্যালরির ২০ শতাংশ ফ্যাট রাখার পরামর্শ দেন ডায়েটিশিয়ানরা। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসি়ড কিন্তু শরীরের জন্য ভাল, তা সত্ত্বেও এই ধরনের ডায়েটে তা রাখা যায় না। তা ছাড়া, ড্রাই ফ্রুটসের মধ্যে অনেক ধরনের ওমেগা ফ্যাট বা মোনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা শরীরের পক্ষে ভাল। বিশেষত, হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে খুবই ভাল। শরীরের সেফগার্ড বলা হয় এদের। যে কোনও সংক্রমণের হাত থেকেও এরা শরীরকে রক্ষা করে। কিছু ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রেও এই ২০ শতাংশ ফ্যাটের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া ফ্যাট শরীরে ভিটামিন এ, ডি এবং ই খাবার থেকে শুষে নিতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের ফ্যাট শরীরে কম যায় বলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সব দিক বিবেচনা করে তবেই ডায়েট শুরু করা উচিত।
পুষ্টিবিদদের মতে, অনেকেই বিজ্ঞানসম্মত ডায়েট পরিকল্পনা না করে, ইচ্ছেমতো বাদ দিয়ে দেন অনেক খাবার। ফলস্বরূপ আর গুরুত্ব থাকে না ভলিউমেট্রিক ডায়েটের। মনে রাখা প্রয়োজন, ব্যক্তিবিশেষে এই ডায়েট হয় আলাদা আলাদা ধরনের। সবশেষে বলা যায়, কেবল নিয়ম মেনে খাওয়া নয়, ক্যালরি বার্ন করার জন্য নিয়মিত এক্সারসাইজ় করাও জরুরি।