Diabetes Patient

ডায়াবেটিকদের পায়ের যত্ন নেওয়া জরুরি

রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে ডায়াবেটিক ফুট আলসারের ঝুঁকি থাকে। তবে একটু সাবধান হলেই এই আশঙ্কা এড়ানো যায়

Advertisement

ঊর্মি নাথ 

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১১
Share:

পৃথিবী জুড়ে বাড়ছে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা। এই রোগ নিশ্চুপে বিকল করতে থাকে শরীরের নানা অঙ্গ। অনেকেরই হয়তো জানা নেই, কিডনি ও চোখের মতো পায়ের, বিশেষ করে পায়ের পাতার যত্ন নেওয়াও জরুরি ডায়াবেটিক রোগীদের। অসচেতনতা ও অবহেলার জন্য এঁদের পায়ের সামান্য ক্ষত, ফোসকা, ঘা বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে হতে পারে ডায়াবেটিক ফুট আলসার। ‘ডায়াবেটিক ফুট সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র হিসেব অনুযায়ী, ডায়াবেটিক রোগীদের ১০০ জনের মধ্যে অন্তত দশজনের ডায়াবেটিক ফুট আলসারের ঝুঁকি থাকে।

Advertisement

ফুট কেয়ার কেন জরুরি?

“প্রত্যেক ডায়াবেটিক রোগীর প্রেসক্রিপশনে লিখে দিই ‘ফুট কেয়ার’ অর্থাৎ রোজ পায়ের যত্ন নেওয়ার কথা,” বললেন ডা. সুবীর মণ্ডল। কিন্তু হাত, পা, মুখ, চুল ইত্যাদি বাদ দিয়ে ডায়াবেটিকদের পায়ের যত্নের উপরে জোর দেওয়া হয় কেন? এর ব্যাখ্যায় ডা. মণ্ডল বললেন, “গাছের শিকড়ের সঙ্গে তুলনা করা যায় আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরার। খেয়াল করবেন, উপরের দিকে শিকড় বেশ মোটা থাকে, আর নীচের দিকে সরু হতে থাকে। শিরা বা ধমনীর ক্ষেত্রেও তাই। হার্ট থেকে ধমনী বেরিয়ে যত বিস্তৃত হয়, তত সরু হতে থাকে। পায়ের শিরার ডায়ামিটার সবচেয়ে সরু। বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিরা-উপশিরা এমনিই শক্ত হতে থাকে। এর সঙ্গে রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হলে স্টিফনেস বাড়ে। ফলে সাবলীল ভাবে রক্তচলাচল ব্যাহত হয়ে সেই জায়গায় পচন ধরায়।”

Advertisement

এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে স্নায়ুকোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে নিউরোপ্যাথি। এর জন্য ডায়াবেটিকরা চট করে ব্যথা অনুভব করতে পারেন না। ফলে ক্ষত অলক্ষ্যে বাড়তে থাকে। এ দিকে স্টিফনেসের জন্য রক্তপ্রবাহ ঠিক মতো না হওয়ার জন্য ক্ষত সারতেও চায় না, সেপটিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার নিতে পারে যে, পা কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।” স্টিফনেস ও নিউরোপ্যাথির বাইরেও আরও দুটো কারণ আছে। চিকিৎসকেরা ডায়াবেটিকদের রোজকার ডায়েট বেঁধে দেন, ওজন কমাতে বলেন। ওজন কমানোর ফলে শরীরের সর্বস্তরের ফ্যাট কমে। ফলে পায়ের পাতার তলায় যে ফ্যাটের স্তর থাকে, তা-ও কমে। এ দিকে গোটা শরীরের ওজন ধরে রাখার জন্য পায়ের তলার ফ্যাটের লেয়ার থাকা জরুরি। ওই ফ্যাটের লেয়ার যত পাতলা হবে সরাসরি হাড়ে চাপ বাড়বে, এতে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিকদের ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা থেকে ডায়াবেটিক ফুট আলসার হতে পারে।

কিছু অভ্যেস ডায়াবেটিক রোগীদের ফুট আলসারের আশঙ্কা কমায়

  • ডায়েটের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখা। ধূমপান না করা, কারণ নিকোটিন ভাসকুলার স্টিফনেস বাড়িয়ে দেয়।
  • রোজ স্নানের সময়ে পা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষত, পায়ের আঙুলের ফাঁকে, যেখানে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেই জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • বাড়ি হোক বা বাইরে, খালি পায়ে হাঁটা নয়। বিশেষ করে, গরমকালে পাথর বা সিমেন্টের উপরে খালি পায়ে হাঁটবেন না, এতে পায়ে ফোসকা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকেই সকালে ঘাসের উপরে খালি পায়ে হাঁটেন, সেটা ডায়াবেটিকদের করা যাবে না। পায়ে কিছু ফুটলে বিপদ বাড়বে।
  • শীতকালে নিয়মিত ফুট ক্রিম বা তেল মালিশ করে পা, পায়ের পাতার ত্বক নরম রাখতে হবে।
  • নিয়মিত নখ কাটা ও পরিষ্কার করা জরুরি। নখ সমান ভাবে কাটবেন, গোল করে নয়।
  • সপ্তাহে দু’-তিনদিন লবণ মেশানো কুসুম গরম জলে পা কিছুক্ষণের জন্য ডুবিয়ে রাখতে পারলে ভাল।
  • পা-চাপা জুতো পরা যাবে না। নরম জুতো পরতে হবে।
  • যাঁরা ডায়াবেটিক নন, কিন্তু দেখছেন শরীরে ক্ষত হলে তা শুকোতে দেরি হচ্ছে, তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করানো জরুরি। জিনগত কারণে ডায়াবেটিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্রথম থেকে পায়ের যত্ন নেওয়া ভাল।

ডায়াবেটিস হলেই যে ফুট আলসার হবে, তা কিন্তু নয়। এটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য উপরের সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চলাই যথেষ্ট। ‘‘প্রতিটা ভিজ়িটে সম্ভব না হলে বছরে অন্তত একবার পায়ের পাতার চেকআপ করাতে হবে। বায়োথেসোমেন্ট্রি মেশিনের মাধ্যমে বা মনোফিলামেন্ট টেস্টের মাধ্যমে আমরা দেখি, নিউরোপ্যাথি ডেভেলপ করল কি না। পায়ের তলায় রোগী স্পর্শ অনুভব করতে পারছেন কি না, দেখতে হবে,’’ বললেন ডা. মণ্ডল।

তবে পায়ে কোনও ক্ষত হলে বা কেটে গেলেই আতঙ্কিত হবেন না। ডায়াবেটিক ফুট আলসার প্রথমে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে সেরেও যায়। তবে সাবধানের মার নেই। তাই নিয়মিত পায়ের যত্ন নিলে ও সচেতন থাকলে অনেক বড় সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement