কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকেই রোজের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেন দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার। ছবি: সংগৃহীত
বাইরে থেকে সুস্থ। অথচ হাঁটাহাঁটি করলে বা সিঁড়ি ভাঙলে হাঁপিয়ে উঠছেন। এমন তো হয়েই থাকে ভেবে অনেকেই এই লক্ষণগুলি এড়িয়ে চলেন। কিন্তু জানতেই পারেন না কখন চুপিসাড়ে এসে রক্তে বাসা বেঁধেছে খারাপ কোলেস্টেরল। স্থূলতা, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ তো বটেই কোলেস্টেরলের হাত ধরে ঝুঁকি বাড়ে হৃদ্রোগেরও।
হৃদ্রোগ চিকিৎসকদের মতে, খাবারের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল শরীরে গেলেই বিপদ। বেশি করে শর্করাযুক্ত খাবার খেলে তা পরিণত হয় ফ্যাটে। তখন দেহের কোষগুলি বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল তৈরি করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকেই রোজের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেন দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে দুধের কোনও ভূমিকা নেই।
কোলেস্টেরলের হাত ধরে ঝুঁকি বাড়ে হৃদ্রোগেরও। ছবি: সংগৃহীত
কোলেস্টেরল কেবল চর্বি নয়। এটি এক ধরনের লিপিড স্তর। যেখান ফ্যাট এবং প্রোটিন দুই-ই থাকে। শরীরে খারাপ ও ভাল দুই প্রকারের কোলেস্টেরল থাকে। খারাপ কোলেস্টরলকে বলা হয় ‘লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন’ (এলডিএল) এবং ভাল কোলেস্টেরলকে বলা হয় ‘হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন’ (এইচডিএল)। এটি খারাপ কোলেস্টেরলকে শোষণ করে এবং শরীর সুস্থ রাখে।হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। তাই শরীরে এইচডিএল-এর সঠিক মাত্রা বজায় রাখা জরুরি। খাদ্যতালিকায় এবং জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেই রক্তে এইচডিএল-এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ওবেসিটি’ শীর্ষক গবেষণা পত্রে প্রকাশিত যে দুধ পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে না। গবেষণা পত্রে বলা হয়েছ, যে দুধ শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। সমীক্ষা বলছে, যাঁরা নিয়মিত দুধ খান তাঁদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৪ শতাংস হ্রাস পায়। পরিমিত পরিমাণে দুধ খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ারও কোনও আশঙ্কা থাকে না।
দুধ বিভিন্ন উপকারী পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ দুধ হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। বার্ধ্যকে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও দুধে আছে ভরপুর পরিমাণে ফসফরাস, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১২, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, আয়োডিন যেগুলি শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
কোলেস্টেরলে আক্রান্ত হলে দুধের পাশাপাশি মাংস, ডিমও এড়িয়ে চলেন অনেকে। কিন্তু এই খাবারগুলিতেই আছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ক্যালশিয়াম, প্রোটিনের মতো স্বাস্থ্য উপকারী কিছু উপাদান। চিকিৎসকদের মতে, সবই খাওয়া যেতে পারে। যদি অল্প পরিমাণে খাওয়া যায়। সপ্তাহে ৪-৬টি ডিম, দু’বার মুরগির মাংস, এক গ্লাস দুধ শরীরের উপকারই করে, ক্ষতি করবে না।