এই মরসুমে বাড়ছে ‘সিজনাল ফ্লু’ বা মরসুমি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতীকী ছবি।
একা কোভিডে রক্ষা নেই, ভাইরাল জ্বর দোসর। বর্ষশেষের উৎসবের মধ্যেই চিন্তা বাড়াচ্ছে জ্বর, মাথাব্যাথা। সঙ্গে রয়েছে শুকনো কাশিও। কোভিডের সঙ্গে উপসর্গগুলির মিল রয়েছে। তবে বিশ্বের কোভিড পরিস্থিতি নতুন করে উদ্বেগ বাড়লেও এখনও পর্যন্ত বাংলায় বেশির ভাগেরই কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বরং বাড়ছে ‘সিজনাল ফ্লু’ বা মরসুমি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের কোভিডের নোডাল অফিসার চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, কোভিডের মতো উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। অসুস্থতার দিন কয়েকের মধ্যে জ্বর কমে গেলেও কাশি থেকে যাচ্ছে সপ্তাহ খানেক। মেডিসিনের চিকিৎসক রাহুল জৈন জানান, অনেক রোগীকে পরীক্ষা করে প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনো ভাইরাস, মেটানিউমো ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গিয়েছে।
বাড়িতে বা অফিসে যদি এই জ্বর কারও হয়, তবে এক জনের থেকেই অন্য সদস্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে অসুখ। সিএমআরআই হাসপাতালের ‘ইন্টারনাল মেডিসিন’-এর চিকিৎসক সুজয় মুখোপাধ্যায় জানান, ডেঙ্গু কমতেই ‘আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ও লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট’ অর্থাৎ, শ্বাসনালির সংক্রমণের ঘটনা বাড়ছে।
ভাইরাল জ্বরের মূল উপসর্গগুলি কেমন?
চিকিৎসকেরা বলছেন, ব্যক্তিভেদে উপসর্গ কিছুটা বদলালেও মোটের উপর লক্ষণগুলি একই ধরনের।
১। ১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রি জ্বর
২। সর্দি-কাশি
৩। গলায় ব্যথা
৪। গা, হাত-পায়ে ব্যথা
৫। কাশি বেড়ে গেলে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট
কতটা অসুস্থ হচ্ছেন রোগীরা?
চিকিৎসকদের মতে, ওষুধে জ্বর কমে যাচ্ছে। কিন্তু বেশ কিছু দিন কাশি থেকে যাচ্ছে অধিকাংশ রোগীর। কম বয়সিদের ক্ষেত্রে কাশি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা কম হলেও বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি। হাঁপানি, ডায়াবেটিস বা ফুসফুসে সমস্যার মতো কোমর্বিডিটি যাঁদের রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে অনেকটাই বেশি হচ্ছে ভোগান্তি। কাউকে কাউকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হচ্ছে। প্রয়োজনে আইসিইউতেও রাখতে হচ্ছে। দিতে হচ্ছে অক্সিজেন। কৌশিক চৌধুরী জানান, বেশি দিন কাশি না কমলে সাময়িক ভাবে ইনহেলার ব্যবহার করলে সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।
সুস্থ থাকতে হলে কী কী মেনে চলবেন?
চিকিৎসক রাহুল জৈন জানান, কোভিডের বাড়বারন্ত কিংবা লকডাউনের সময়ে ঘরে ঘরে এই ধরনের জ্বর-সর্দি-কাশির সমস্যা কম ছিল। কারণ, অনেক বেশি মানুষ মাস্ক পরতেন। তা ছাড়া, সামগ্রিক ভাবে দূষণের মাত্রাও কম ছিল। এখন ফের বেড়ে গিয়েছে দূষণ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাপমাত্রার হেরফের। সব মিলিয়ে ভাইরাসজনিত ‘সিজনাল ফ্লু’ থাবা বসাচ্ছে। চিকিৎসকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মাস্ক শুধু কোভিড নয়, ভাইরাস ঘটিত এই জ্বর থেকে বাঁচতেও বড় ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বাড়িতে বয়স্ক মানুষ কিংবা শিশু থাকলে মাস্ক পরে থাকা উচিত। বয়স্ক মানুষদের যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। যাঁদের হাঁপানি, ডায়াবিটিস কিংবা সিওপিডির মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। কোভিড ছাড়াও সম্ভব হলে নিউমোনিয়া কিংবা নিউমোকক্কাল টিকা নিয়ে নেওয়া যেতে পারে বলেও মত চিকিৎসকদের।