এখন জ্বর, সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছে যে শিশুরা, মনে করা হচ্ছে তারা অ্যাডিনো বা অন্য ভাইরাসে আক্রান্ত। ছবি: শাটারস্টক।
শীত শেষে শহরে বসন্তের আগমন। মরসুম বদলের এই সময়ে ভাইরাসঘটিত অসুখের হানা নতুন নয়। প্রতি বছরই এই সময়ে ভাইরাসঘটিত রোগ শিশু থেকে বড়রা, সকলকেই কাবু করে, চাপ তৈরি করে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর, আবার নির্দিষ্ট সময়ের পর স্তিমিত হয়ে যায়। এই বছরও ডিসেম্বর মাস থেকে রাজ্যে অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ বেশ তীব্র ভাবেই অনুভূত হয়েছে। এই অসুখে সর্বাধিক আক্রান্ত দশ বছরের কমবয়সি শিশুরা। এই ভাইরাস প্রাণও কেড়েছে কিছু শিশুর। কোভিড পরবর্তী সময়ে ভাইরাসঘটিত রোগ যেন আরও জাঁকিয়ে বসেছে মানুষের শরীরে। অতিমারির আঘাতে এক বৃহৎ সংখ্যক জনগোষ্ঠীর দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
কোভিডের সঙ্গে অ্যাডিনোভাইরাসর মিল কোথায়?
চিকিৎসকদের মতে, অ্যাডিনোভাইরাসের চরিত্রটা ঠিক কিন্তু কোভিডের মতোই। হাঁচি, কাশির মাধ্যমে কিংবা রোগীর ছোঁয়া কোনও জিনিসের সংস্পর্শে এলেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঠিক যেমনটা কোভিডের ক্ষেত্রে হয়। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার দু’দিন থেকে দু’সপ্তাহের মধ্যেই শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। বায়ুবাহিত অ্যাডিনোভাইরাস সাধারণত চোখ, অন্ত্র, মূত্রনালি ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। এই ভাইরাসের আক্রমণ ঘটলে এতটুকু সময় নষ্ট করা উচিত নয়। যত তাড়তাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করার পক্ষপাতী বিশেষজ্ঞরা। তাই এই মরসুমে শিশুদের জ্বর হলে হালকা ভাবে না নেওয়াই ভাল। জেনে নিন আর কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন।
এই অসুখে সর্বাধিক আক্রান্ত দশ বছরের কমবয়সি শিশুরা। ছবি: শাটারস্টক।
সাধারণ উপসর্গ:
১) ধুম জ্বর। অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও জ্বর না কমা।
২) তীব্র মাথা যন্ত্রণা, সারা শরীরে ব্যথা।
৩) চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
শ্বাসযন্ত্রের উপসর্গ:
১) নাক দিয়ে কাঁচা জল পড়া।
২) গলায় তীব্র ব্যথা, ঢোক গিলতে সমস্যা এমনকি, গলার স্বর বদলে যাওয়া।
৩) দীর্ঘ দিন ধরে কাশি না কমা।
৪) শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি দ্রুত হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা।
পেটের উপসর্গ:
১) কোভিডের মতো অ্যাডিনোভাইরাসের ক্ষেত্রেও ডায়েরিয়া অন্যতম প্রধান উপসর্গ। এ ক্ষেত্রে এক থেকে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত ডায়েরিয়ার সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।
২) এর সঙ্গে পেটে ব্যথাও হতে পারে।
অ্যাডিনোভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া, স্নায়ুর সমস্যা-সহ অন্য রোগেরও প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এই ভাইরসাসে আক্রান্ত হলে সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট ছাড়়া চিকিৎসার উপায় নেই।
স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ (এআরআই), ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস’ (আইএলআই) অর্থাৎ, ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার মতো উপসর্গ থাকলে এবং ‘সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’-এ (এসএআরআই) আক্রান্ত শিশুদের অবশ্যই আরটি পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে। এখন জ্বর, সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছে যে শিশুরা, মনে করা হচ্ছে তারা অ্যাডিনো বা অন্য ভাইরাসে আক্রান্ত। সেই মতো চিকিৎসাও করা হচ্ছে। এমনও হতে পারে, তাদের কেউ আদতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আবার অ্যাডিনো ও কোভিড-১৯, দু’টি ভাইরাস একসঙ্গেই শিশুর শরীরে ঢুকে থাকতে পারে। তাই আদতে কোন ভাইরাস শরীরে হানা দিয়েছে, তা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিরোধের উপায়
সাধারণত ভিড় এলাকা থেকে দূরে থাকুন। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়, তাই তাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই আক্রান্তদের কাছ থেকেও দূরে থাকুন। সুস্থ না হওয়া অবধি তাঁদের ব্যবহারের জিনিসও আলাদা করে দিন। বায়ুবাহিত হওয়ায় রাস্তাঘাটে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করুন। মল-মূত্র ত্যাগের পর শিশু ভাল করে পরিষ্কার হল কি না সে দিকে খেয়াল রাখুন। নিজেও মেনে চলুন স্বাস্থ্যবিধি। শিশুকে ধরার আগে হাত ধুয়ে নিন। খাওয়ার আগে ও পরে ভাল করে হাত ধোয়া আবশ্যিক। শিশুর জ্বর ৭২ ঘণ্টার বেশি থাকলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।