বহু দিন আগে থেকেই শরীর ঠান্ডা রাখতে তামার পাত্রে জল খাওয়ার প্রচলন ছিল। ছবি: সংগৃহীত
শীত কিংবা গ্রীষ্ম— বারো মাসই শরীরের সমান যত্ন নেওয়া জরুরি। সঠিক সময়ে খাওয়াদাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়াও জরুরি। তবে শুধু জল খেলে হবে না। কোন পাত্রে জল খাচ্ছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে তামা কিন্তু দারুণ উপকারী।
তামার পাত্রে জল খাওয়ার চল এখনের নয়। বহু দিন আগে থেকেই শরীর ঠান্ডা রাখতে তামার পাত্রে জল খাওয়ার প্রচলন ছিল। আধুনিক ব্যস্ততাময় জীবনের সেই অভ্যাস অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছিল। পুজোয় তামার বাসন ব্যবহার করা হলেও, তামার পাত্রে জল খাওয়ার সুফল সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। আয়ুর্বেদশাস্ত্র বলছে, তামার জগ কিংবা গ্লাস ব্যবহার করলে শরীরে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। এমনকি, সারা রাত তামার পাত্রে জল রেখে যদি খাওয়া যায়, তা হলেও অনেক শারীরিক সমস্যা দূর হয়। কী কী সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায় তামার পাত্রে জল খেলে?
সারা রাত তামার পাত্রে জল রেখে যদি খাওয়া যায়, তা হলেও অনেক শারীরিক সমস্যা দূর হয়। ছবি: সংগৃহীত
হজমশক্তি উন্নত হয়
গ্যাস-অম্বল, হজমের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। এই সমস্যার চটদলদি সমাধান হতে পারে যদি তামার পাত্রে জল খাওয়া শুরু করেন। তামায় থাকা উপকারী উপাদান খাদ্যনালিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া মেরে ফেলে। হজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলে কমতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও।
থাইরয়েডের সমস্যা
থাইরয়েড হওয়ার একটা অন্যতম কারণ হল শরীরে তামার পরিমাণ কমে যাওয়া। থাইরয়েডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তামার পাত্র থেকে জল খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে তামার পাত্রে জল খেলে উপকার পাবেন।
ক্ষত নিরাময়ে
দেহের ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকোতে সাহায্য করে তামা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও তামার জলের জুড়ি মেলা ভার। তামার পাত্রে জল খেলে শরীরে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমে বলেও মনে করেন অনেকে।
প্রদাহ কমাতে
তামায় থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। রোজ সকালে খালি পেটে তামার পাত্রে জল খেলে প্রদাহের সমস্যায় উপকার মিলতে পারে। যাঁরা বাতের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরাও উপশম পেতে পারেন বলেও মত চিকিৎসকদের।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে
যাঁরা হার্টের রোগী এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য কাজে আসতে পারে তামার জল। এ ছাড়া, ক্যানসারের আশঙ্কা কমাতেও সাহায্য করে তামা। তবে মনে রাখতে হবে, সকলের শরীর সমান নয়, সমান নয় বিভিন্ন মৌলের ঘাটতি ও চাহিদা। তাই যে কোনও অভ্যাস চালু করার আগে এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন। তবে তামার পাত্রে জল খাওয়ার ক্ষেত্রেও একটা রাশ টানা প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, মানুষের শরীরে দিনে অন্তত ০.৪৭ মিলিগ্রামের বেশি তামা যাওয়া ক্ষতিকর। সারা দিনে বার বার তামার পাত্রে জল খেলে শরীরে তামার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তাই তামার পাত্রে জল খেলেও একটু সতর্ক থেকে খাওয়া জরুরি।