Hyper Acidity

সময়ে খান, সময় নিয়ে খান! পুজোর আগে অম্বল সারানোর মূলমন্ত্র শেখালেন চিকিৎসকেরা

এক দিন বেশি তেল-মশলাদার খাবার খেয়ে অম্বল হলে তা-ও মানা যায়, কিন্তু এই সমস্যা যদি পাহাড়ের মতো চেপে বসে, তা হলেই মুশকিল। তার জের সরাসরি পড়তে থাকে খাদ্যনালির উপরে। তখনই গলা-বুকের কাছে জ্বালাপোড়ার মতো অনুভূতি হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০৩
Share:

অম্বল সারান অবলীলায়, শুনুন চিকিৎসকদের পরামর্শ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্যাস-অম্বল-বদহজমের সমস্যায় ভোগেননি, এমন মানুষ বিরল। আর বাঙালির তো বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই আছে, সেই সঙ্গে পেটের অসুখও। ফুচকা, ভেলপুরি থেকে ফিশ ফ্রাই, বিরিয়ানি — এক পেটে কত কী! এক দিন বেশি তেল-মশলাদার খাবার খেয়ে অম্বল হলে তা-ও মানা যায়, কিন্তু এই সমস্যা যদি নিয়মিত হয়ে পড়ে, তা হলেই মুশকিল। তার জের সরাসরি পড়তে থাকে খাদ্যনালির উপরে। মনে হয় পেটের খাবার গলা দিয়ে উঠে আসছে। সেই সঙ্গে বুকে ব্যথা, গলার কাছে অসহ্য জ্বালা-যন্ত্রণা।

Advertisement

পুজোর সময়ে এমনিতেও বাইরে ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া হবে। ঘরেও জমিয়ে হবে ভূরিভোজ। তাই গ্যাস-অম্বল এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণে না রাখলে মুশকিল। পুজো নির্ঝঞ্ঝাটে কাটাতে চাইলে কী কী করণীয়, তার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা।

কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “মানুষের শরীরে যে অম্ল থাকে, তার অনেক গুণ। এই অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অম্লের পরিমাণ বেড়ে গেলে তখন হয় অম্বল। ভাজাভুজি, বাইরের খাবার বেশি খেলে তা আরও বেড়ে যায়। তাড়াহুড়োয় খাবার ভাল করে না চিবিয়ে খেলেও কিন্তু হজমের সমস্যা বাড়ে, আর তা থেকে ‘হাইপার অ্যাসিডিটি’ মাথাচাড়া দেয়। তাই খাবার খেতে হবে মেপে এবং সঠিক সময়ে।”

Advertisement

পেট ভাল রাখতে রণবীরবাবুর মূলমন্ত্র হল— ‘‘সময়ে খান এবং সময় নিয়ে খান।’’ প্রথমত, খাবার খেতে হবে সময় ধরে। যেমন, বেলা ১টার মধ্যে দুপুরের খাওয়া সারতে হবে, ৩টেয় খেলে তা হজম হবে না। রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যেই। ঘড়ি ধরে খেলে এবং পরিমিত পরিমাণে খেলে কোনও সমস্যা থাকবে না। আর দ্বিতীয়ত, সময় নিয়ে খেতে হবে। চিকিৎসকের কথায়, টিভি বা মোবাইল দেখতে দেখতে তাড়াহুড়োতে খাওয়া বা খাবার ভাল করে না চিবিয়ে খাওয়ার কারণে হজমের গন্ডগোল হতে বাধ্য। বেশির ভাগ গ্যাস-অম্বলের সমস্যার কারণই হল তাড়াহুড়ো করে খাওয়া। তাই যদি হজমের সমস্যা দূর করতে হয়, তা হলে খাওয়ার সময়ে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ থেকে দূরেই থাকুন।

পুজোর সময় রাস্তার খাবারের প্রলোভন এড়িয়ে চলা অনেকের পক্ষেই মুশকিল। কিন্তু যদি পেট ঠিক রাখতে হয়, তা হলে খেতে হবে নিয়ম মেনেই। এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, “কেবল তেল-মশলা খেলেই যে পেটের রোগ হবে তা নয়, ভাইরাল জ্বরের কারণেও পেটের অসুখ হতে পারে। তাই পুজোয় ভিড়ভাট্টায় গেলে সাবধানে থাকতে হবে। আর সহজপাচ্য খাবারই খেতে হবে। প্রচুর ফল, সব্জি খাওয়া যেমন জরুরি, তেমনই একদম পেট ভর্তি করে খাবার খেলেও সমস্যা বাড়বে। যা-ই খান না কেন, পেট খানিক ফাঁকা রেখেই খাবেন।” চিকিৎসকের পরামর্শ, বিরিয়ানি খেতে মন চাইলে খান, তবে অল্প পরিমাণে খান। পুজোর সময়ে বাড়িতে পোলাও-মাংস হতেই পারে, তাই বলে কি আর খাবেন না! সবই খান, কিন্তু কম পরিমাণে। পেট যেন আইঢাই না করে। খাবার পরেই নরম পানীয় না খেয়ে জলজিরা খেয়ে নিন। যে দিন ভূরিভোজের পরিকল্পনা আছে, তার আগের দিন রাতে মৌরি-মেথি জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে এই পানীয় খেলে পেট পরিষ্কার থাকবে।

পেটের রোগ সারানোর আরও একটা উপায় হল, খেয়ে উঠেই সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না। চিকিৎসক রণবীরের পরামর্শ, খাওয়ার পরে মিনিট খানেক হেঁটে নিলে হজম ভাল হয়। ঘরে বা ছাদেই হাঁটুন। বিশ্রামও নিতে হবে সঠিক সময়ে। অনেকেই ছুটির দিন বলে সারা দুপুর মোবাইল বা টিভি দেখে কাটান, বেশি রাত অবধি জেগেও থাকেন। এমন অভ্যাস থাকলে অম্বলের সমস্যা কোনও দিন কমবে না। প্রতি দিন আধঘন্টা ব্যায়াম করুন। নিদেনপক্ষে ১৫ মিনিট হাঁটুন।ওজন বশে থাকলে পেটও ভাল থাকবে।

জীবনধারাতেও সামান্য বদল দরকার। অরুণাংশুবাবুর পরামর্শ, প্রাতরাশ করতে হবে বেশ গুছিয়ে, পেট ভরে খেতে হবে। কাজের ব্যস্ততায় বার বার চা-কফি না খেয়ে দুটো বিস্কুট বা এক মুঠো মুড়ি খান। একই সময় লাগে খেতে। চা খেলে তাতে এক টুকরো আদা ফেলে খান। দিনে ২-৩ লিটার জল খান। জল শরীরের অম্লকে বার করে দেয়। দুশ্চিন্তা যথাসম্ভব কম করুন, মনকে তাজা ও আনন্দে রাখার চেষ্টা করুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement