বেড়ানোর আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি কি শরীরচর্চাও করা যায়? ছবি: সংগৃহীত।
বেড়াতে যেতে কে না ভালবাসেন? কিন্তু সমস্যা হয় বেশ লম্বা ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর। প্রতি দিন যাঁর জিমে যাওয়ার অভ্যাস ছিল, তিনিও সে মুখো হতে চান না। শরীরচর্চার নামেই গায়ে জ্বর আসে। আসলে লম্বা বিরতির ফলে শরীরচর্চার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যায়।এমনকি যিনি শরীরচর্চা করতে একান্তই ভালবাসেন, নতুন জায়গায় ঘোরার সময় তাঁকেও আলসেমি পেয়ে বসে। এই সমস্যার সমাধান কী ভাবে সম্ভব?
ফিটনেস প্রশিক্ষক অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেউ লম্বা ছুটি নিয়ে কোথাও গেলে, ঘুরে আসার পর আবার শরীরচর্চার জন্য মনকে প্রস্তুত করতে সময় লাগে। আমরাও দেখি কেউ বেশ কয়েক দিন ছুটি নিয়ে ঘুরতে গেলেন, ফিরে এসে বলেন, ভাল লাগছে না। আরও কয়েক দিন কেটে যায় শরীরচর্চায় ফিরতে। আমরা তাই পরামর্শ দিই, বাইরে কোথাও গেলেও সময় বার করে অন্তত ১৫-২০ মিনিট ব্যায়াম করতে।’’
শরীরচর্চা বন্ধ হলে কোনও সমস্যা হয় কী?
অনিকেতের কথায়, ২-৩ দিন বন্ধ থাকলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু টানা শরীরচর্চার পর বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকলে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, যিনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা ওজন তোলেন, তিনি একটি নিয়মের মধ্যে থাকেন। খাওয়া, বিশ্রাম, ঘুম সব কিছুই সময়ে ও নিয়মে বাঁধা থাকে। খাওয়াও তালিকা মেনে হয়। টানা সাত-আট দিন বা তার বেশি শরীরচর্চায় বিরতির ফলে সমগ্র অভ্যাসে তার প্রভাব পড়তে পারে। অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া করলে কিছুটা ওজন বাড়তে পারে। যিনি পেশি গঠনের ব্যায়াম করেন, তাঁর পেশি কিছুটা শিথিল হয়ে যেতে পারে। তবে বিশেষ কিছু সমস্যা এতে হয় না।
বেড়ানোর মধ্যেই শরীরচর্চা
বেড়াতে গিয়েও কি শরীরচর্চা করা যায়? বেড়ানোর আনন্দের সঙ্গেই যদি শরীরচর্চাকে জুড়ে ফেলা যায়, কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হতে পারে। যেমন কেউ পাহাড়ে ট্রেকিং করতে পারেন। সুইমিং পুল, সমুদ্র বা নদীতেও সাঁতার কেটে ব্যায়ামের অভ্যাস চালু রাখা যায়। ।
কী কী ভাবে ব্যায়াম করা যায়?
ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ়
অনিকেতের পরামর্শ, বেড়াতে গেলেও মিনিট ১৫ সময় বার করা কঠিন নয়। হোটেলের ঘরেই ফ্রি হ্যান্ড কিছু এক্সারসাইজ় করে নেওয়া যায়। তবে জায়গাটি যদি বেশি উচ্চতার স্থান হয়, তা হলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না, বুঝে শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। বয়স্ক ব্যক্তিরাও একই ভাবে শরীরচর্চা করতে পারেন। তবে তাঁদের শরীরের উপযোগী ব্যায়াম করতে হবে। মেঝেতে কাপড় পেতে ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে নরম বিছানায় একেবারেই নয়।
জগিং, হাঁটা
সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলে সৈকতেই ভোরবেলায় খানিক হেঁটে বা দৌড়ে নিতে পারেন। সময় পেলে বিকেলেও। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে জগিং করতে বা হাঁটতে নেহাত মন্দ লাগবে না। এক জায়গায় বসে থাকার চেয়ে এই শরীরচর্চায় স্বাস্থ্য ভাল থাকবে ও অভ্যাস বজায় থাকবে। এক মিনিট আস্তে ছুটে, পরের ২ মিনিট জোরে ছোটা ও তার পরের মিনিটে গতি কিঞ্চিৎ কমিয়ে ছুটলে বা জগিং করলে বেশি ক্যালোরি ঝরবে।পাহাড়ি এলাকায় চড়াইতে হাঁটলেও ভাল ব্যায়াম হবে। তবে বয়স্কদের এ ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন। শরীর যতটা নিতে পারছে, ততটাই করতে হবে।
রেজ়িস্ট্যান্স টিউব বা ব্যান্ড
অনিকেত বললেন, ‘‘এটি খুব হালকা একটি ব্যান্ড বা টিউব। সহজেই ব্যাগে নেওয়া যায়। যাঁরা পেশি গঠনে নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাঁরা এই ব্যান্ডটি কোনও হুকে বা জানলার গ্রিলে লাগিয়ে এটি ব্যবহার করেও ব্যায়াম করতে পারেন। এতে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ়ের চেয়ে ক্যালোরি বেশি ঝরে, শরীরও সুঠাম হয়।’’
সাঁতার
সাঁতার অত্যন্ত ভাল ব্যায়াম। সমগ্র শরীরের সঞ্চালনা হয় এতে। সুইমিং পুল থাকলে বেড়াতে গিয়ে বেশ কিছু ক্ষণ সাঁতার কাটলে মনও ভাল থাকবে, শরীরচর্চাও হবে। সমুদ্রসৈকতে গেলে সমুদ্রস্নানও করা যেতে পারে। ঢেউয়ের তালে লাফানো, লবণাক্ত জলে স্নানেও শরীর ভাল থাকে।