মা হতে চলেছেন, সেই খবর ঘোষণার পর থেকেই দীপিকার স্ফীতোদর নিয়ে কটাক্ষের শেষ নেই। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
বলিপাড়ায় সদ্য সুখববর শুনিয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন ও রণবীর সিংহ। কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন দীপিকা। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগের দিনই সবুজ বেনারসি পরে সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে নজর কেড়েছিলেন নায়িকা। ছিপছিপে চেহারায় স্পষ্ট স্ফীতোদর। স্বামী রণবীরের হাতে হাত রেখেই মন্দিরে দেখা গিয়েছিল দীপিকাকে। সেই দিনও নায়িকাকে শুনতে হয়েছে কটাক্ষ! অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ৯ মাসেও শরীরে মেদের চিহ্নমাত্র নেই, তাঁর স্ফীতোদর নিশ্চয়ই নকল, নেটমাধ্যমে এই নিয়ে চর্চাও তুঙ্গে।
মা হতে চলেছেন, সেই খবর ঘোষণার পর থেকেই দীপিকার স্ফীতোদর নিয়ে কটাক্ষের শেষ নেই। নিজে অবশ্য সেই সব ট্রোলিংয়ের কোনও দিনও কোনও রকম জবাব দেননি অভিনেত্রী, বরং হাসিমুখেই সবটা সামলেছেন তিনি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শরীরে মেদ না জমাটা কি স্বাভাবিক? দীপিকার মা হওয়ার পরে এই প্রশ্ন যেন আরও জোরালো হয়েছে।
প্রত্যেক মহিলার অন্তঃসত্ত্বাকালীন সফর আলাদা হয়, সকলের শরীরে একই রকম বদল হবে, এমনটা নয়। পুষ্টিবিদ ও যাপন সহায়ক অনন্যা ভৌমিক বলেন, ‘‘সাধারণত অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ৯ থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়তে পারে। পুরো ওজনের বেশির ভাগটাই বাড়ে পেটের দিকে। এক জন অভিনেত্রী আর পাঁচ জনের তুলনায় নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি সচেতন থাকবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। তিনি নিশ্চয়ই নিয়ম মেনে ডায়েট করেছেন। অন্তঃসত্ত্বাকালীন যোগাসনও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, দীপিকাও নিশ্চয়ই ফিটনেসবিদের পরামর্শ নিয়ে শরীরচর্চা করতেন। সব মিলিয়ে তিনি যে নিজের শারীরিক গঠন আগের মতোই ধরে রাখতে পেরেছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আমি যদি আমার কথা বলি, প্রথম সন্তানধারণের সময়ে আমার ওজন ২৫ কেজি বেড়ে গিয়েছিল, যদিও পরবর্তী সময় নিজেকে সঠিক নিয়মে বেঁধে আমি চার-সাড়ে চার মাসের মধ্যেই ২০ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছিলাম। দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রেও আমার ২৩ কেজি ওজন বেড়েছিল। অনেকেই দেখে আমাকে বলেছিল, তুই আর কোনও দিনও নাচ করতে পারবি না। তবে আমি দিব্যি নিজের ওজন কমিয়ে ফেলতে সফল হয়েছি। তাই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ওজন খুব বেশি বেড়ে যাওয়া যেমন অস্বাভাবিক কিছু নয়, তেমনই দীপিকার মতো ছিপছিপে শরীরে থাকাও খুব স্বাভাবিক।’’
দীপিকার ‘নকল স্ফীতোদর’ নিয়ে কী বললেন চিকিৎসকেরা? ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
অন্তঃসত্ত্বাদের রোগী ভাবার কোনও কারণ নেই, এমনটাই মত স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সাধারণত ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন বৃদ্ধি হয়। প্রতি মাসের হিসাবে ১ থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়ে হবু মায়েদের। আমরা যদি ওজনটা ঠিক কী ভাবে বাড়ে সেটা লক্ষ করি, তা হলে দেখা যাবে ৯ মাসের শেষে, ২ থেকে আড়াই কেজি ওজন হয় শিশুর, জলের পরিমাণ থাকে ১ থেকে দেড় কেজি, জরায়ুর ওজন হয় প্রায় ৪ কেজি, প্লাসেন্টার ১ থেকে দেড় কেজি, স্তনের ওজন বাড়ে ১ কেজি। সুতরাং বাকি ১ থেকে দেড় কেজি মেদ শরীরে জমা হয়। অভিনেত্রীরা এমনিতেই নিজেদের ওজন নিয়ে বেশ সচেতন থাকেন। দীপিকার শরীরে এমনিতেই মেদ কম, সে ক্ষেত্রে পেটের দিকে ওজন বেড়েছে বলেই স্ফীতোদর স্পষ্ট। ওঁর ছিপছিপে শরীরে অল্প অল্প মেদ জমলেও তিনি আগে থেকেই যে হেতু খুব ফিট, তাই খুব বেশি কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েনি।’’
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মূলত দু’ভাবে জরায়ুর পরিবর্তন হয়। অ্যান্টি-ভার্টেড ও রেট্রো ভার্টেড। অ্যান্টি-ভার্টেডের ক্ষেত্রে জরায়ু সামনের দিকে হেলে থাকে, সে ক্ষেত্রে ৩-৪ মাসের মধ্যেই স্ফীতোদর স্পষ্ট হয়ে যায় এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে হবু মায়ের পেটের আকার খুব বেশি বেড়ে যায়। রেট্রো ভার্টেডের ক্ষেত্রে জরায়ু পিছনের দিকে হেলে থাকে, তাই স্ফীতোদর খুব তাড়াতাড়ি স্পষ্ট হয় না। ‘বেবি বাম্প’ ছোট হয়। তাই স্ফীতোদর বড় হবে না কি ছোট হবে, সেটাও নির্ভর করে শারীরিক পরিবর্তনের উপর। দীপিকার বড় ‘বেবি বাম্প’ নিয়ে যে ট্রোল কা হচ্ছে, তা নিয়ে ট্রোলারদের কটাক্ষ করেছেন চিকিৎসক মল্লিনাথ। তিনি বলেন, ‘‘মহিলাদের বডি শেমিং করার অধিকার কারও নেই। দীপিকা নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে খুব বেশি সচেতন। উনি যে ভাবে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিজের যত্ন করেছেন, সেটাই স্বাভাবিক ও প্রশংসার যোগ্য। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর মহিলাদের নিজেকে অসুস্থ ভাবার কোনও কারণ নেই, বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজের কাজের মধ্যে থাকাই ভাল। প্রয়োজনের বেশি খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চা বন্ধ রাখা এ অবস্থায় ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। বরং সঠিক ডায়েট, সাঁতার কাটা, হাঁটাহাঁটি করা, যোগাসন করার অভ্যাস করতে হবে। তা হলেই কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’’