ফল না ফলের রস, কোনটি খাবেন? ছবি: ফ্রিপিক।
ফল খেতে ইচ্ছে করে না। অথচ রকমারি ফলের রসে চুমুক দিতে ভাল লাগে, এমন অনেকেই আছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর ভেবে যা খাচ্ছেন, তাতে আদৌ উপকার মিলছে তো? পুষ্টিবিদেরা কিন্তু বলছেন অন্য কথা। তাঁরা বলছেন রস নয়, ফল খাওয়াই ভাল।
রস নয়, ফল কেন?
বিভিন্ন ফলে থাকে ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার। এই সমস্ত উপকরণই শরীর সুস্থ রাখতে দরকার হয়। শরীর যাতে ফলের মধ্য থাকা ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার পায়, সে কারণেই চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ ফল খেতে বলেন। প্রশ্ন আসতেই পারে, ফলের বদলে সেই ফলের রস খাওয়ায় আপত্তি কোথায়। অনেকেই বলবেন, বাজারচলতি ফলের রসে প্রক্রিয়াজাত রাসায়নিক থাকতে পারে। কিন্তু টাটকা ফলের রস খেলে তো সে ভয় নেই।
তবে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘রস করে খেলে ফলে থাকা ফাইবার বাদ চলে যায়। ভিটামিন এবং খনিজের পরিমাণও কমে যায়। রসে পড়ে থাকে শুধু কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা আর জল।’’
ফলের খোসা
শুধু ফল নয়, তার খোসাতেও থাকে পুষ্টিগুণ। আপেল, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, আঙুর খোসা-সহই খাওয়া হয়। এতে থাকে ক্যারোটিনয়েডস, ফ্লাভোনয়েডসের মতো উপাদান, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ফলের রস করার সময়, খোসা বাদ পড়ে যায়। তা ছাড়া ফল নিংড়ে রস বার করার সময় বাদ পড়ে যায় অন্যান্য পুষ্টিগুণও।
গুণ চলে গেলে রস খেয়ে কী হবে?
মনে হতেই পারে ফলের আসল গুণ বাদ পড়লে রস খেয়ে কী হবে? তা হলে রস কারা খাবেন? পুষ্টিবিদ বলছেন, ‘‘এই তালিকায় শিশু এবং বয়স্কদের রাখা যায়। যিনি বা যাঁরা চিবিয়ে খেতে পারবেন না, তাঁরা ফলের রস খাবেন।’’
আর কারা খাবেন?
অস্ত্রোপচার হয়েছে, মুখে ঘা, গিলতে পারছেন না, ডায়েরিয়া, অরুচি— এমন অনেকেই ফলের রস খেতে পারেন। ফলের কার্যকারিতা কমে গেলেও ফলের রস শরীরে প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেটের জোগান দেয়। তার সঙ্গে জলও যায় শরীরে।
সুস্থ কেউ কি খাবেন না?
শম্পার কথায়, অবশ্যই খেতে পারেন। সকালের জলখাবারেও ফলের রস রাখা যায়। কিন্তু এতে যে হেতু কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি, তাই ক্যালোরির হিসাব-নিকাশ করে খেতে হবে। সকালে যতটা ক্যালোরি খাওয়া দরকার, ততটাই খেতে হবে। ফলের রস রাখলে সে ক্ষেত্রে অন্য খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। কারও যদি তাড়াহুড়ো থাকে, বসে ধীরে-সুস্থে খেতে না পারেন, তিনি ফলের রস খেতে পারেন। তবে ক্যালোরির নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার।
এ ছাড়াও যাঁদের শরীরে ক্যালোরি প্রয়োজন, গরমে ঘেমে ক্লান্ত তাঁরাও শরীরে দ্রুত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জোগান দেওয়ার জন্য ফলের রসে চুমুক দিতে পারেন। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে ক্যালোরির হিসাব করতে হবে।
একটি গোটা লেবু খেলে যত কার্বোহাইড্রেট, রসেও তো সম পরিমাণই থাকবে। তা হলে?
পুষ্টিবিদ বলছেন, ‘‘একটি লেবু খেলে তার সঙ্গে ভিটামিন, ফাইবার যাচ্ছে। ফলে পেট ভরছে। কিন্তু একটি লেবু থেকে যেটুকু রস হবে, তা খেয়ে পেট ভরবে না। অনেকে কাপ অথবা গ্লাস হিসাবে রস খান। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটির বদলে দু’টি লেবু লাগছে। এ ভাবেই ক্যালোরি বেড়ে যেতে পারে।’’