স্পন্ডিলোসিস আসলে শিরদাঁড়ার হাড়ের সমস্যা। ছবি: শাটারস্টক।
কখনও পেশার তাগিদ আবার কখনও বা নিজের স্বভাবদোষে অকালেই শিরদাঁড়ার হাড়ের ক্ষয় দেখা যায়। সহজ ভাষায় বললে স্পন্ডিলোসিস বাসা বাঁধছে শরীরে। অফিস ডেস্কে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই টনটন করে উঠছে পিঠ, কাঁধ। বাড়িতেও একটানা টিভির সামানে বসলে বা ঘুম থেকে উঠে ঘাড় ঘোরাতে গেলেই মালুম হচ্ছে, কলকব্জা ঠিক নেই!
এমন সমস্যা আপনার একার নয়। দৈনন্দিন দৌড়ঝাঁপের সময়ও মাঝেমধ্যে অনেকেই এমন ব্যথা টের পান। স্পন্ডিলোসিস আসলে শিরদাঁড়ার হাড়ের সমস্যা। আমাদের শরীরে হাড়ের যে সংযোগস্থল বা অস্থিসন্ধিগুলি থাকে, তা নিয়েই আমরা বেড়ে উঠি, এ বার সে সব ব্যবহার করতে করতে যন্ত্রের মতোই ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। কখনও আবার অস্থিসন্ধি অঞ্চলে থাকা তরল পদার্থ বাইরে বেরিয়েও আসে। তখনই জানান দেয় ব্যথা। ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সারা ক্ষণের ব্যথা, ঘাড় নাড়াতে অসুবিধা হওয়া এই রোগের মূল কষ্ট। ঘাড়ের দিকের অংশে এই রোগ হলে তাকে আমরা বলি, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস। আবার শিরদাঁড়ার নীচের দিকের অংশে অর্থাৎ পিঠের নীচের দিকে হলে তাকে আমরা বলি লাম্বার স্পন্ডিলোসিস।
চিকিৎসকদের মতে, এই রোগে আক্রান্ত হলে কেবল ওষুধ খেলেই চলবে না। জীবনযাবনেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। কী ভাবে খেয়াল রাখবেন নিজের?
১) এই অসুখে ভুগলে সবার আগে আপনাকে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। এই অসুখ সামলাতে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম আছে, বিশেষ করে কিছু স্ট্রেচিং। মাংসপেশিকে শক্ত রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যায়াম করুন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগীকে বেল্ট, কলার বা বিশেষ ট্রাকশন নেওয়ার ব্যায়াম দেওয়া হয়। যোগাসন করেও এই রোগ দূর করা সম্ভব।
নিয়মিত গরম জলে স্নান করার অভ্যাস করুন। ছবি: শাটারস্টক।
২) ঘাড় বা পিঠ বেঁকিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ বসার অভ্যাসে বদল না আনলে কিন্তু বিপাকে পড়তে হবে। পেশার তাগিদে তেমন ভাবে বসতে হলে মাঝেমাঝেই উঠে হাঁটাহাঁটি করতে হবে। খানিক ক্ষণ ঘাড়ের ব্যায়াম করে নিতে পারেন। চোখ ও কম্পিউটারের স্ক্রিন যেন সোজাসুজি থাকে, সেই ব্যবস্থা করুন।
৩) আপনি কী ভাবে ঘুমোচ্ছেন, সেটাও কিন্তু ভীষণ জরুরি। উপুড় হয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করুন। বালিশ ব্যবহার করা নিয়েও সচেতন হতে হবে। অনেকেই স্পন্ডিলোসিসের সমস্যায় বালিশ ছাড়া ঘুমোন। কখনওই বালিশ ছাড়া ঘুমোবেন না। নরম দেখে একটা বালিশ নিন, দেখবেন বালিশ যেন খুব বেশি উঁচু না হয়। ঘুম ভাঙার পর পাশ ফিরে উঠুন। সোজা উঠলে মেরুদণ্ডের উপর আরও চাপ পড়তে পারে।
৪) নিয়মিত গরম জলে স্নান করার অভ্যাস করুন। এতে ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়। ব্যথার জায়গায় এক বার গরম জলের সেঁক দিন, সঙ্গে সঙ্গেই আবার ঠান্ডা জলের সেঁক দিন। এই পদ্ধতিতেও ব্যথায় উপশম মেলে।
৫) ব্যথার তীব্রতা যদি অনেক বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে আকুপাংচার পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারেন। ব্যথা উপশমে এই পদ্ধতি আদতে অব্যর্থ দাওয়াই।