নাক ডাকার সঙ্গে হৃদ্রোগের কী সম্পর্ক? ছবি: সংগৃহীত।
ঘুমের ঘোরে অনেকেই সশব্দে নাক ডাকেন। কেউ ব্যাপরটা নিয়ে লজ্জিত হন, কেউ আবার বেমালুম বিষয়টি অস্বীকার করে যান! চিকিৎসকদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার ফলে ঘুমের ঘোরে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা ছাড়াও নাক ডাকার অন্য একটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হল, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। রাতে নাসিকা গর্জন কিন্তু হতেই পারে স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্তদের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এমনিতেই শরীরে অতিরিক্ত মেদ, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার কারণে ঘুমের মধ্যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়়ে যায়। এর পাশাপাশি নাক ডাকার অভ্যাসকেও খুব একটা ‘নিরাপদ’ বলে ভাবতে রাজি নন চিকিৎসকেরা। শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা ছাড়াও স্লিপ অ্যাপনিয়াকেও এই অতিরিক্ত নাক ডাকার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করছেন তাঁরা। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের ঘুমের সময়ে শ্বাসনালির উপর চাপ বেশি পড়ে। ফলে স্লিপ অ্যাপনিয়া হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। মদ্যপান ও ধূমপানের মতো জীবনযাত্রাগত কিছু কারণও এই অসুখের আশঙ্কা বাড়ায়। আবার অনেকেই ঘুম ভাল হচ্ছে না ভেবে ঘুমের ওষুধ খান। তাতেও সমস্যা বাড়ে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিসের মতো রোগ থাকলেও এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, টনসিল ও অ্যাডেনয়েড গ্ল্যান্ড বড় থাকলে শিশুদেরও স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
১) অতিরিক্ত নাক ডাকা এই সমস্যার প্রধান উপসর্গ। হালকা নয়, এই রোগে আক্রান্ত হলে নাক ডাকার গর্জনের তীব্রতা অনেক বেশি হয়।
২) ঘুম থেকে ওঠার পর গলা শুকিয়ে শুকিয়ে আসে? এটিও কিন্তু স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্ত হলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। তাই মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয়। ফলে গলা শুকিয়ে আসে। নিশ্বাসে দুর্গন্ধও হয়।
অতিরিক্ত নাক ডাকা এই সমস্যার প্রধান উপসর্গ। ছবি: সংগৃহীত।
৩) স্লিপ অ্যাপনিয়ার ফলে রাতে ঘুম ঠিকঠাক হয় না। তাই সারা দিন শরীরে ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাব, ঝিমুনি, খিটখিটে মেজাজও এই অসুখের লক্ষণ হতে পারে। রাতে ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখাও এর উপসর্গ হতে পারে।
৪) ঘুম থেকে উঠে প্রায়ই মাথা যন্ত্রণা করে বা মাথা ঘোরে? নিয়মিত এমনটা হলে সতর্ক হোন। স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হলে ঘুমোনোর সময়ে শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ ঠিক মতো হয় না। তাই মাথা যন্ত্রণা হতে পারে।
৫) রাতে ঘুমোনোর সময় ঘাম হয়, এই উপসর্গ কিন্তু স্বাভাবিক নয়। শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে ঘাম হতে পারে। তাই এমন উপসর্গ দেখলেই সতর্ক হোন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কী ভাবে সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাবেন?
স্লিপ অ্যাপনিয়ার উপসর্গ বুঝলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ওজন বেশি হলে, সবার আগে তা নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিতে হবে। খাওয়ার ঠিক পরেই শুয়ে না পড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় যোগব্যায়াম করুন। হজমের সমস্যা কমলে নাক ডাকার সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্ত হওয়া যায়। শোয়ার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন। চিত হয়ে না শুয়ে এক পাশ ফিরে শুলে শ্বাসযন্ত্রের উপর চাপ কম পড়ে।