শরীরে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কী? ছবি: শাটারস্টক।
ঘরে-বাইরে বাড়তে থাকা কাজের চাপ, উদ্বেগজনিত সমস্যা নতুন নয়। সরকারি-বেসরকারি যে সংস্থাতেই কাজ করুন না কেন, মানসিক টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় কম-বেশি সকলকেই। শুধু কর্মক্ষেত্রই নয়, পারিবারিক জীবন, সাংসারিক জীবন, কারও কারও ক্ষেত্রে আবার শারীরিক সমস্যাও মানসিক চাপ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। শারীরিক অন্যান্য জটিলতার মতো মানসিক সমস্যা চোখে দেখা যায় না বলে তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না অনেকে। কিন্তু এই চাপ বাড়তে থাকলে তার প্রভাব পড়ে ব্যক্তিগত জীবনেও। মানসিক চাপের অন্যতম কারণ হল শরীরে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি। মানসিক চাপ বাড়লে বাড়তে থাকে অনিদ্রাজনিত সমস্যা। আর এই সমস্যার হাত ধরেই ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো অসুখ বাসা বাঁধতে শুরু করে শরীরে। শরীরে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বেড়েছে, বুঝবেন কী করে?
১) শরীরে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে ত্বক অনেক বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। কোনও বস্তু কিংবা ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে ত্বকে বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ ছাড়া ত্বক অবশ হয়ে যাওয়া, চুলকানির সমস্যাও দেখা যায়।
২) কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে ঘুমের চক্রের উপর তার প্রভাব পড়ে। কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না।
৩) কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে ফুসফুসের চারপাশে ডায়াফ্রাম পেশির কার্যকারিতা কমে যায়। এর ফলে ঘন ঘন হেঁচকির সমস্যা শুরু হয়।
৪) কর্টিসল হরমোনের প্রভাব পড়ে কিডনির উপরেও। এর ফলে ঘন ঘন মূত্রের বেগ আসে।
এই সমস্যাগুলির সঙ্গে মোকাবিলা করতে ওষুধ নয়, ভরসা রাখুন দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক কিছু অভ্যাসের উপর। ঘুম থেকে উঠেই খানিকটা সময় নিজের জন্য বরাদ্দ করুন। সকালের কিছু অভ্যাস আপনাকে সারা দিন মানসিপ চাপ থেকে মুক্ত রাখতে পারে। জেনে নিন, ঘুম থেকে উঠেই কী কী করতে হবে আপনাকে।
১) সকালে মোবাইলের অ্যালার্মে ঘুম ভাঙে অনেকের। তার পর চোখ খুলেই ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপে নজর। খানিক ক্ষণ সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন পাতায় ঘাঁটাঘাঁটি করে তার পর অফিসে কী কাজ রয়েছে, তাতে চোখ বুলিয়ে নিলেন। তা শেষ করে মোবাইলেই সংবাদমাধ্যমের পাতায় নজর। সবার আগে এই অভ্যাসে বদল আনুন। ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটির অভ্যাস বন্ধ করুন। এই প্রবণতা আপনার মানসিক চাপ, উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে।
২) ঘুম থেকে উঠে খানিক ক্ষণ প্রাণায়াম করুন। প্রাণায়াম করলে মন শান্ত হয়। সকালে উঠে নিয়ম করে প্রাণায়াম করলে মানসিক চাপ কমে, মেজাজ ফুরফুরে হয়।
৩) নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীরে এন্ডরফিন হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়। যা মন ভাল রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে যোগাসন ভীষণ উপকারী।
৪) ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সামনে বাগানে কিংবা বারান্দায় সময় কাটান। সকালের সূর্যরশ্নি আপনার ঘুমের চক্র স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। অনিদ্রার সমস্যা দূর করে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ কমায়।
৫) মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে খাবারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তাই প্রতি দিনের খাবারে টাটকা শাক-সব্জি, ফল, দানাশস্য রাখার চেষ্টা করুন। ক্যাফিনজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত চিনি আছে এমন খাবার না খাওয়াই ভাল। ঘুম থেকে উঠেই কফিতে চুমুক দেবেন না। প্রাতরাশ সেরে কফি খান।