কেবল গরম নয়, ঘামে দুর্গন্ধ হতে পারে শারীরিক অসুস্থতার কারণেও। ছবি: সংগৃহীত।
শরীরের দুর্গন্ধের কারণে অস্বস্তিতে ভোগেন অনেকেই। বিশেষ করে এই গরমে কারও কারও বেশি ঘাম হয়। নিজেকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে তাঁরা ব্যবহার করেন বিভিন্ন ডিওডোর্যান্ট, সুগন্ধি।
শরীরের অতিরিক্ত জল এবং কিছু খনিজ উপাদান ও বর্জ্য পদার্থ ঘাম হিসাবে বেরিয়ে যায়। প্রত্যেকের শরীরে নিজস্ব কিছু গন্ধ আছে। কিন্তু তা যদি অন্যের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা হলেই সমস্যা।
ঘাম থেকে সরাসরি দুর্গন্ধ বার হয় না। ত্বকে ঘাম জমার কারণে তৈরি হওয়া ব্যাক্টেরিয়াই মূলত দূর্গন্ধের কারণ। তবে ঘাম ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে শরীর থেকে এমন অবাঞ্ছিত গন্ধ বার হতে পারে। জেনে নিন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সত্ত্বেও কেন শরীরে দুর্গন্ধ হয়?
১. অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়: অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ও অনেক সময় শরীরের গন্ধে পরিবর্তন আসতে পারে। এর অন্যতম কারণ হল, শরীরে হরমোনের পরিবর্তন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে ঘাম বেশি হয়। এই সমস্যার মোকাবিলা করতে শরীর আর্দ্র রাখা প্রয়োজন। বেশি করে জল খাওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে ঢিলেঢালা ও হালকা কাপড়ের পোশাক পরাও প্রয়োজন।
২. গোপনাঙ্গে সংক্রমণের কারণে: সাধারণত সঠিক পরিচ্ছন্নতার অভাবে যৌনাঙ্গে সংক্রমণ দেখা দেয়। নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে যৌনাঙ্গের চামড়ায় মৃত কোষ জমতে থাকে। দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকার ফলে ত্বকে ক্ষত তৈরি হয়। সেখান থেকেই বার হয় দুর্গন্ধ। শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই দুর্গন্ধ। এ রকম হলে ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার না করাই ভাল। এতে ক্ষত বেড়ে যাতে পারে।
৩. মূত্রনালি সংক্রমণ থেকে: প্রস্রাব করতে গেলে জ্বালা ভাব, ব্যথা কিংবা পিন ফোটার মতো সমস্যা দেখা যায়। প্রস্রাবের বেগ থাকা সত্ত্বেও প্রস্রাব হয় না। জল কম খেলে প্রস্রাবের রঙেও পরিবর্তন আসে। বার বার জল দিয়ে ধোয়ার পরেও সমস্যা আয়ত্তে আসে না। চিকিৎসকেরা বলেন, এই জল কম খাওয়ার অভ্যাসই কিডনি বা মূত্রসংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার মূলে। শরীরে এই রোগ বাসা বাঁধলে প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হয়, এর পাশাপাশি শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে দুর্গন্ধ।
মানসিক অবসাদ দূর করার ওষুধ নিয়মিত খেলেও অনেক সময় গায়ে দুর্গন্ধ হয়। ছবি: সংগৃহীত।
৫. কিছু অসুখ ও ওষুধের কারণে: মানসিক অবসাদ দূর করার ওষুধ নিয়মিত খেলেও অনেক সময় গায়ে দুর্গন্ধ হয়। এ ছাড়া কিডনি বা লিভারের অসুখ আছে, এমন রোগীদের এবং ডায়াবেটিকদেরও অনেক সময় গায়ে দুর্গন্ধ হয়। ত্বকে ব্যাক্টেরিয়া কিংবা ছত্রাকের সংক্রমণ হলেও দুর্গন্ধ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি, পরিধানের ক্ষেত্রেও ঢিলেঢালা পোশাক বাছাই করা দরকার।
৬. মুখের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা: দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করা ছাড়াও শরীরের দুর্গন্ধ কমানোর জন্যেও মুখের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা জরুরি। খাবারের টুকরো এবং ব্যাক্টেরিয়া দাঁতের ফাঁকে জমে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। নিশ্বাস থেকেও বার হয় দুর্গন্ধ। নিশ্বাসে দুর্গন্ধের কারণেও শরীর থেকে বার হতে পারে অবাঞ্ছিত গন্ধ। খাবারে থাকা সালফার থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। তাই শরীর থেকে দুর্গন্ধ বার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে দিনে দু’বার দাঁত মাজা জরুরি। মুখের ভিতরটা ভাল করে পরিষ্কার করা জরুরি।