ঋতুস্রাবের নানা কষ্ট দূর করতে ওষুধের ভূমিকা তো রয়েছেই, পাশাপাশি দারচিনিও দারুণ কার্যকরী। ছবি: সংগৃহীত।
স্বাভাবিক নিয়মে ঋতুস্রাব হলেও শারীরিক নানা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে থাকতে হয় মাসের কয়েকটি দিন। শারীরিক দুর্বলতা এতটাই থাকে যে, বিছানা ছেড়ে ওঠার ক্ষমতা থাকে না। সাধারণ কথায় মনমেজাজ বিগড়ে যায়। পিসিওএস থাকলে এই উপসর্গগুলি আরও কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। এই সবের নেপথ্যে রয়েছে হরমোনের হেরফের।
এই সমস্যা সমাধানে ওষুধ তো আছেই, তবে এই ধরনের কষ্টের নিরাময়ে বহু কাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দারচিনি। আয়ুর্বেদেও এই মশলাটি সমান গুরুত্বপূর্ণ। হেঁশেলে থাকা এই মশলাটি কী উপকারে লাগে?
১) ঋতুস্রাবের কষ্ট কমায়:
দারচিনি আসলে প্রদাহনাশক একটি মশলা। ২০১৫ সালে ‘ইরানিয়ান রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, দারচিনি শরীরে প্রোস্টাগ্ল্যানডিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এই প্রোস্টাগ্ল্যানডিনের মাত্রায় হেরফের হলে ঋতুস্রাব চলাকালীন জরায়ুর পেশিতে সঙ্কোচন-প্রসারণ জনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। ঈষদুষ্ণ জলে এক চিমটে দারচিনি মিশিয়ে খেলে এই কষ্ট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
২) অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে:
ঋতুস্রাবের সময়ে কারও অতিরিক্ত রক্তপাত হয়। এই সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে দারচিনি। এই মশলায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যেগুলি ঋতুস্রাব চলাকালীন শিথিল রক্তবাহিকাগুলি মজবুত করতে সাহায্য করে। ফলে রক্তপাত খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত খেলে ঋতুচক্র স্বাভাবিক থাকে।
৩) হজম সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে:
ঋতুস্রাব চলাকালীন অনেকেরই পেটফাঁপা, বমি, হজমের সমস্যা দেখা যায়। হজমে সহায়ক গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরণে সাহায্য করে দারচিনি। ২০২৩ সালে ‘রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি’-তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এই মশলায় রয়েছে ‘সিনাম্যালডিহাইড’ এবং ‘কৌমারিন’ নামক দু’টি উপাদান। যেগুলি হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৪) হরমোনের সমতা বজায় রাখে:
হরমোনের হেরফেরে ‘পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম’ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ২০১৮ সালে ‘রিপ্রোডাক্টিভ বায়োলজি অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজি’-তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, দারচিনি রক্তে ইনসুলিন হরমোনের সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রজননে সাহায্যকারী এই হরমোনগুলি স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলে ‘পিসিওএস’-এর লক্ষণগুলো সামাল দেওয়া যায়।
৫) মনমেজাজ ভাল রাখে:
ঋতুস্রাব চলাকালীন অনেকেরই মনমেজাজ বিগড়ে থাকে। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় দারচিনি খেলে। শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, রক্তে শর্করার মাত্রাও স্বাভাবিক রাখে এই মশলা। ফলে মনমেজাজের উপরেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।