মনের প্রতি আর অবহেলা নয়। ছবি: সংগৃহীত।
শরীরের মতো মনও নানা ভাবে জানান দেয়, সে ভাল নেই। যদিও শরীর নিয়ে কম-বেশি সচেতন হলেও মনের হাল নিয়ে অনেকেরই কোনও রকম মাথাব্যথা থাকে না। শরীরের অনেক নিয়ন্ত্রকের মধ্যে অন্যতম হল হরমোন, তেমনই কিছু নির্দিষ্ট হরমোনের কম-বেশি প্রভাব সরাসরি পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। সেরোটোনিন, ডোপামিন, অক্সিটোটিন, এন্ডরফিন্স ও নরএপিনেফ্রিনের মতো পরিচিত নামগুলি আদতে মস্তিষ্ক ও শরীরের উপরে কতটা কার্যকর, তা সমস্যায় পড়ার পরে আমরা উপলব্ধি করি। এদের কার্যকারিতা খুবই সূক্ষ্ম অথচ প্রভাবশালী। এই নিউরোট্রান্সমিটারগুলির ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার।
মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কিছু হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা ভীষণ জরুরি। হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেই মুশকিল।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন?
কখনও যদি মনঃসংযোগে সমস্যা হয়, অবসন্ন লাগে, যে কোনও কাজের প্রতি অনীহা আসে, ধরে নেওয়া হয়, মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা কমে গিয়েছে। সেরোটোনিনের নেতিবাচক প্রভাব খুব বেশি। যেমন, হাল ছেড়ে দেওয়া, অপরাধবোধে ভোগা, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি উপসর্গ বোঝায় সেরোটোনিনের মাত্রার হেরফের। এর প্রকাশও অনেক বেশি। ঘুমের চক্র বিঘ্নিত হওয়া, যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়াও এর অন্যতম উপসর্গ। নরএপিনেফ্রিনের ক্ষেত্রে শারীরিক উপসর্গ বেশি প্রকট। সারা শরীরে ব্যথা বা জ্বালা করা, চিনচিন করার মতো লক্ষণ দেখা যায়।
কোনও কোনও দিন মনে হতেই পারে, একদম কাজ করতে ইচ্ছা হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে মনখারাপ হওয়াটাও স্বাভাবিক। তার মানেই কিন্তু অবসাদ বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়। যদি সেই মনোভাব দু’সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, সঙ্গে পাল্টে যায় শরীর-মনের আরও কিছু ব্যবহার— তবেই মনে করা হবে, আপনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এবং এর নেপথ্যে রয়েছে কিছু হরমোনের তারতম্য।
শরীরে হরমোনের সমতার এই পরিবর্তনের কারণগুলি কিন্তু লুকিয়ে থাকে আমাদের জীবনযাত্রার মধ্যেই। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঋতুবন্ধের সময়, খাদ্যাভাসের অনিয়ম, অতিরিক্ত মদ্যপান ও কিছু বিশেষ ওষুধের কারণেও মহিলাদের শরীরে হরমোনের তারতম্য হয়। এমনটা হলে কোন কোন অভ্যাসে বদল আনবেন, রইল তার হদিস।
১) ঘুম থেকে উঠে ফোন ঘাঁটা বন্ধ করুন। ঘুম থেকে উঠলে শরীরে কর্টিসল হরমোনের (স্ট্রেস হরমোন) ক্ষরণ বাড়ে। বেশির ভাগ লোকেই ঘুম থেকে উঠে আগে ফোন ঘাঁটেন। এই অভ্যাসে মানসিক চাপ আরও বাড়ে। ঘুম থেকে উঠে অন্তত ৪৫ মিনিট ফোন থেকে দূরে থাকুন। বারান্দায় গিয়ে রোদে বসুন। প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করুন। মেজাজ ভাল রাখতে পছন্দের গান শুনতে পারেন।
২) শরীরচর্চা করলেও কিন্তু হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ঘুম থেকে উঠে হালকা শরীরচর্চা করতে পারেন। স্ট্রেচিং, যোগাসন করলে শরীরের সংবহনতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র ও বিপাকহারের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সব মিলিয়ে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে।
৩) ঘুম থেকে উঠেই অনেকে কফিতে চুমুক দেন। শরীরে হরমোনের সমস্যা থাকলে খালি পেটে কফি না খাওয়াই ভাল।
৪) ঘুম থেকে উঠে অনেক ক্ষণ খালি পেটে থাকেন? এই অভ্যাসও হরমোন ভারসাম্য বিঘ্নিত করে। তাই সকালে ঘুম ভাঙার ৯০ মিনিটের মধ্যে প্রাতরাশ সেরে ফেলাই ভাল। প্রাতরাশে প্রোটিনে সমৃদ্ধ খাবার বেশি রাখতে হবে।
৫) খালি পায়ে হাঁটলেও শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ভোরবেলা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটলে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ কমে, রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে, বিপাকহারও বাড়ে। তাই রোজ নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস শুরু করতে পারেন।