পুজোর আগে কী ভাবে ঝরঝরে হবে শরীর? প্রতীকী ছবি
ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখার জন্য যদি অলিম্পিক্সের মতো পদক পাওয়া যেত, বাঙালির আলমারি তবে এত দিনে স্বর্ণপদকে থিকথিক করত। চিঁড়ে-চ্যাপ্টা ভিড়ে সুড়ুৎ করে এগিয়ে যাওয়ার শৈলী দেখার মতো। ভিড়ে সাজ বাঁচিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হিউ-এন-সাঙের মতো পদযাত্রা সহজ ব্যাপার তো নয়। সঙ্গে আবার দেদার খানাপিনা। সব মিলিয়ে পুজো পরিক্রমার পরিশ্রম নেহাত কম নয়। এত কিছুর মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়লে উৎসবের মজাই মাটি। তাই অনেকে চাইছেন, পুজোর আগে অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলে ফিট হতে। কিন্তু হাতে মাত্র এক মাস। এর মধ্যে কি আদৌ তা সম্ভব?
যাঁরা কোনও দিন শরীরচর্চা করেননি, তাঁদের পক্ষে এক মাসের মধ্যে সব কিছু বদলে ফেলা কঠিন। সবচেয়ে ভাল হত যদি গুপি-বাঘাকে দেওয়া তিনটি বর পাওয়া যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সে সব তো আর নেই। অগত্যা নিজেকেই নামতে হবে কোমর বেঁধে। যদি এখন থেকেই শরীরচর্চা সংক্রান্ত তিনটি বিষয় মাথায় রাখা যায়, তবে পুজোর সময়ে তা হয়ে উঠতে পারে, ‘জবর জবর তিন বর!’ মিলতে পারে চমকপ্রদ ফল।
খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার। প্রতীকী ছবি
শরীরচর্চা প্রশিক্ষক সুমনা দত্ত বর্মন আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, এক মাসে বাড়তি ওজন ঝরানো একেবারে অসম্ভব নয়। পুজোর আগে বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফিট হয়ে উঠতে হলে চাই ত্রিমুখী পরিকল্পনা। কোন তিন দিকে নজর দিতে হবে? সুমনার বক্তব্য, যথার্থ শরীরচর্চার সঙ্গেই জরুরি যথাযথ খাদ্যাভাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম।
প্রথমেই আসা যাক খাওয়াদাওয়ার কথায়। পুজোর সময়ে গুপি-বাঘার মতো যেমন খুশি খেতে চাইলে আগের এক মাস কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করতেই হবে। ওজন কমানোর যাত্রা শুরু হয় রান্নাঘর থেকেই। তাই ফিট হতে চাইলে পুজোর আগে পেটপুজো থেকে কিছুটা বিরত থাকা ছাড়া উপায় নেই। প্রশিক্ষকের কথায়, অল্প সময়ে বাড়তি ওজন ঝরাতে চাইলে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’। যাঁরা আগে এই পদ্ধতিতে খাওয়াদাওয়া করেননি, তাঁদের জন্য সুমনার পরামর্শ, “দিনে আট ঘণ্টা খাবার খেতে হবে, আর ১৬ ঘণ্টা বিরতি নিতে হবে। কেউ যদি দুপুর ১২টা থেকে খাবার খাওয়া শুরু করেন, তবে রাত আটটায় বন্ধ করে দিতে হবে খাওয়া। রাত আটটার পর চা-কফিও খাওয়া চলবে না।” পাশাপাশি, যখন খাবার খাবেন, তখনও বাইরের তেলমশলা-সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়াই ভাল বলে মত তাঁর। খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার।
অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর চক্করে ‘ক্র্যাশ ডায়েট’ করেন। দিনভর স্যুপ বা তরল খাবার খেয়ে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ এই ধরনের কাজ করলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বলে মত প্রশিক্ষকের।
দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যিক। প্রতীকী ছবি
নোলা সামলে উদর বিজয় সম্ভব হলে এ বার আসুন দ্বিতীয় ধাপে। ঘুম। ভাবছেন এ কী প্রলাপ? ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আবার মেদ ঝরানো যায় নাকি! অষ্টপ্রহর মাথায় বালিশ বেঁধে রাখলে যেমন ফিট হওয়া সম্ভব নয়, তেমনই এ কথাও সত্যি যে পর্যাপ্ত ঘুম ছাড়া বাড়তি ওজন ঝরানোও অসম্ভব। কারণ, “আমাদের দেহের স্বাভাবিক প্রবণতা মেদ সঞ্চয় করে রাখা। রাতে ঠিক মতো ঘুম না হলে কর্টিসোল নামের একটি হরমোনের মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে। তার প্রভাবে বাড়ে ইনসুলিন হরমোনের পরিমাণ। ইনসুলিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে ওজনও বেড়ে যায়,” বলেন সুমনা। দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যিক বলেই মত তাঁর। দেহ সার্কাডিয়ান চক্রে চলে। চোখ বন্ধ করে রাখলেও দেহ বুঝতে পারে দিন না রাত। তাই পুজোর আগে বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফিট হতে চাইলে রাত না জাগাই বাঞ্ছনীয় বলে মত ফিটনেস প্রশিক্ষকের।
‘স্কোয়াট’, ‘পুশ আপ’, ‘পুল আপ’, ‘শোল্ডার প্রেস’, ‘বেঞ্চ প্রেস’ করা শিখতে হবে সবার আগে। প্রতীকী ছবি
প্রথম দু’টি বিষয় সামলে ফেলেছেন মানে অর্ধেক কাজ হাসিল। বাকি অর্ধেক সারতে এ বার দরকার কিছুটা কায়িক শ্রম। অর্থাৎ, নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে। যাঁরা আগে থেকেই শরীরচর্চা করছেন, আর যাঁরা পুজোর আগে প্রথম ঘাম ঝরাবেন ভেবেছেন, তাঁদের জন্য আলাদা আলাদা পরামর্শ দিলেন প্রশিক্ষক। সুমনা বলেন, “যাঁরা আগে থেকেই শরীরচর্চা করছেন, তাঁদের বাড়াতে হবে শরীরচর্চার তীব্রতা। ধরুন, কারও যদি ১০টি স্কোয়াট করতে সাধারণ ভাবে ২০ সেকেন্ড সময় লাগে, তবে এই ক’দিন চেষ্টা করতে হবে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই তা সেরে ফেলতে। অনেকে ‘সার্কিট ট্রেনিং’ করেন। এই পদ্ধতিতে সাধারণত চারটি, পাঁচটি কিংবা ১০টি ব্যায়াম পর পর করা হয়। এই ব্যায়ামগুলি করার ক্ষেত্রে অনেকে ব্যায়ামের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কয়েক মিনিটের বিরতি নেন। কমিয়ে ফেলতে হবে সেই বিরতির সময়। নিশ্বাস নিয়ে পরের ব্যায়ামে যেতে যতটুকু সময় দরকার, তার বেশি সময় না নেওয়াই ভাল।”
যাঁরা আগে কখনও শরীরচর্চা করেননি, তাঁদের অবশ্য চটজলদি রাস্তায় হাঁটা অনুচিত বলেই মত প্রশিক্ষকের। অনেকেই ইন্টারনেট কিংবা ইউটিউব দেখে আচমকা শরীরচর্চা করা শুরু করেন। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। ‘স্কোয়াট’, ‘পুশ আপ’, ‘পুল আপ’, ‘শোল্ডার প্রেস’, ‘বেঞ্চ প্রেস’ করা শিখতে হবে সবার আগে। এগুলি ঠিক মতো শেখার পর শুরু করতে হবে ওজন নিয়ে শরীরচর্চা করা। সবার শরীর সমান নয়। তাই প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানেই করা উচিত শরীরচর্চা। তাঁরাই দেখে বলতে পারবেন কার শরীর কতটা সক্ষম, মত সুমনার।
এই এক মাস ছোটবেলায় অঙ্ক কষার মতো করে তিনটি বিষয় মেনে চলতে পারলে পুজো আসতে আসতে দেখবেন, দরকার পড়বে না ভূতের রাজার বর। যেখানে খুশি যাওয়ার সময়ে ফুরিয়ে আসবে না দম। যেমন খুশি সাজতে পারবেন। যেমন খুশি খেতে চাইলেও বিদ্রোহ করবে না পেট।