রাজু শ্রীবাস্তব। ছবি- সংগৃহীত
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন জনপ্রিয় হাস্যকৌতুকশিল্পী রাজু শ্রীবাস্তব। জিমে শরীরচর্চা করার সময় হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন বছর ৫৮-র এই শিল্পী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই চেতনা হারিয়ে ফেলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ফিটনেস প্রশিক্ষক তাঁকে দিল্লির এইমসে ভর্তি করেন।
তাঁকে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই দু’বার কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) দেওয়া হয়েছে। সিপিআর একটি জীবন রক্ষাকারী কৌশল যা মূলত হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
রাজুর ম্যানেজার সাংবাদিকদের জানান, সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ ট্রেডমিলে দৌড়ানোর সময় রাজুর হার্ট অ্যাটাক হয়। তবে এখন তিনি অনেকটাই ভাল আছেন। এই মুহূর্তে চিন্তার কোনও কারণ নেই।
কমবয়সি হোক বা পঞ্চাশোর্ধ্ব— হার্টের ব্যামো যেন কাউকে ছাড়ছে না। প্রতীকী ছবি
গতকাল বাঁশদ্রোণীর সোনালি পার্ক এলাকায় এক তরুণীরও জিম করতে করতে মৃত্যু হয়। নেতাজি নগর মহিলা কলেজে তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী বিগত কয়েক মাস ধরেই জিম করছেন। অনুমান করা হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকের কারণেই মৃত্যু হয় তাঁর।
কয়বয়সি হোক বা পঞ্চাশোর্ধ্ব— হার্টের ব্যামো যেন কাউকে ছাড়ছে না। যে কোনও বয়সে, যে কোনও সময়ে এমন অঘটন ঘটেই চলেছে। নিয়মিত শরীরচর্চা করেও কেন লাভ হচ্ছে না? প্রশ্ন উঠছে অনেকের মনে। ওঠাও স্বাভাবিক।
জিম করার সময় কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন?
শহরের বিশিষ্ট শরীরচর্চা প্রশিক্ষক সুমনা দত্ত বর্মণের মতে, ‘‘আপনি রোজ নিয়ম করে শরীরচর্চা করছেন মানেই যে আপনি ফিট, সেই ধারণা ভুল। এমন হতেই পারে হার্টের রোগ আপনার শরীরে চুপিসাড়ে বাসা বেঁধে রয়েছে। আপনি যখন জানতে পারছেন, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যাচ্ছে। জিমে ভর্তি হওয়ার আগে প্রশিক্ষকদের আপনার শারীরিক কোনও অসুস্থতা আছে কি না সবটা খুলে বলতে হবে। ইদানীং অনেক জিমেই ভর্তির আগে মেডিকাল পরীক্ষা করানোর কথা বলা হয়। বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে প্রত্যেক ছ’মাস অন্তর সব রকম মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর বিষয়ে আমরা বার বার জোর দিয়ে থাকি। কোভিড-পরবর্তী সময়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। জিম করার সময় অতিরিক্ত ঘাম হলে, শ্বাসকষ্ট হলে, বুকে ব্যথা হলে সেই মুহূর্তেই সতর্ক হতে হবে। সময় নষ্ট না করে ওই ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
শরীরচর্চার সময় হৃদ্রোগের ঝুঁকি এড়াতে কী করণীয়?
কলকাতা মেডিকেল কলেজের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদের মতে, ‘‘বাড়িতে যদি কারও হৃদ্রোগ থেকে থাকে, বা নিজের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, কোলেস্টেরলের সমস্যা বা হার্ট সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, শরীরচর্চা বাছাই করার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। ভারী শরীরচর্চা করার সময় অনেক বেশি সতর্ক থাকা জরুরি। শুরুতেই অনেক ক্ষণ ধরে ব্যায়াম করা অনুচিত। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় বাড়াতে হবে। শরীরকে সময় দিতে হবে মানিয়ে নেওয়ার। যাঁর যেমন ক্ষমতা সেই অনুযায়ী শরীরচর্চা করতে হবে। যদি দেখেন আগে যে ব্যায়ামগুলি করার সময় সহজে হাঁপাতেন না, কয়েক দিন ধরে সেই ব্যায়াম করার সময়ই হাঁপ ধরছে তা হলে দ্রুত চিকিৎসকরের পরামর্শ নিন।’’
ইমরান আরও বলেন, ‘‘যদি জিম করতে গিয়ে কেউ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তা হলে সময় অপচয় করা একেবারেই চলবে না। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর দু’ থেকে তিন ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তা ছাড়া এই সময় ৩০০ মিলিগ্রাম অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে এই ওষুধের প্রভাবে রোগী খানিকটা আরাম পাবেন।’’