ধূমপানের ফলে ফুসফুসের দফা রফা হয়ে ক্যানসারের আশঙ্কা তৈরি হয়। প্রতীকী ছবি।
ধূমপানের অভ্যাস একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়, কমবেশি তা সকলেই জানেন। তবু ধূমপান শুরু করা যতটা সহজ, বললেই কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যায় না এই অভ্যাস। ছাড়ব বললেই তামাকু সেবনের সুখ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা যায় না। ধূমপান ছাড়তে চাইছেন, কিন্তু পারছেন না, এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তবে চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ দিনের ধূমপানের অভ্যাস হঠাৎ ছেড়ে দিলে শরীরের অন্দরে যে ক্ষয় হয়েছে, তা কিছুটা হলেও মেরামত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ধূমপানের ফলে ফুসফুসের দফা রফা হয়ে ক্যানসারের আশঙ্কা তৈরি হয়। সেই অবস্থা থেকে আবারও সুস্থ অবস্থায় ফিরতে পারে ফুসফুস। অন্তত এমনটাই আশ্বাস চিকিৎসকদের। তবে ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার পরেই ফুসফুসের পূর্বক্ষমতা ফিরে আসে। টানা অনেক বছর ধরে যাঁরা প্রতি দিন ধূমপান করছেন, এই অভ্যাস ছাড়ার পর তাঁদের ফুসফুসের ক্ষেত্রেও এই সুফল প্রযোজ্য। গবেষণা তেমনটাই বলছে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ধূমপান ত্যাগের ন'মাসের মধ্যে সিলিয়া স্বাভাবিক কাজ করতে শুরু করে। প্রতীকী ছবি।
সিগারেটে থাকা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ফুসফুসের প্রতিটি কোষের ‘ডিএনএ’কে ধ্বংস করে ক্যানসারের জমি প্রস্তুত করে। ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণা নিবন্ধ বলছে, যে সব মানুষ ধূমপান ত্যাগ করেছেন, তাঁদের ফুসফুসের কোষের গঠন, কখনও ধূমপান না করা মানুষের ফুসফুসের মতো হয়ে যেতে পারে। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার প্রথম মাসের মধ্যেই ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হবে। বাড়বে রক্তসঞ্চালনও। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ধূমপান ত্যাগের ন'মাসের মধ্যে সিলিয়া স্বাভাবিক কাজ করতে শুরু করে। কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলিও কম হয়।
ধূমপানমুক্ত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে মূত্রাশয়, কিডনি, ফুসফুস, মুখ এবং গলার ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেগযোগ্য ভাবে কমতে শুরু করে। ‘নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি' (এনআরটি) ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে সাহায্য করে।
ধূমপান ছাড়তে কী কী উপায় অবলম্বন করতে পারেন?
১) ধূমপান যিনি করেন, তাঁর স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থেকে যায়। তেমনই পরোক্ষ ধূমপানের ফলে আশপাশে থাকা মানুষেরও স্বাস্থ্যহানি ঘটে। যা একেবারেই কাম্য নয়। ধূমপান ত্যাগ করে নিজেকে এবং চারপাশের মানুষজনকে সুস্থ রাখুন।
২) গবেষণা বলছে, আমিষ এবং মাংসজাতীয় খাবার খাওয়ার পরই মূলত ধূমপান বেশি উপভোগ্য হয়ে ওঠে। তাই ধূমপান ত্যাগ করতে চাইলে কিছু দিন বেশি করে ফলমূল ও শাকসব্জি খেতে পারেন। এ ছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। বিশেষ করে যোগাসন, প্রাণায়ামের অনুশীলন বেশি করে করুন।
৩) অ্যালকোহল মিশ্রিত পানীয়, নরম পানীয়, চা বা কফি খাওয়ার পরে যোগ্য সঙ্গত হিসাবে ধূমপান করে থাকেন অনেকেই। ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে চাইলে প্রথমে এই ধরনের পানীয় এড়িয়ে চলুন।
৪) ধূমপানের অভ্যাস বদলে ফেলুন চকলেট খেয়ে। চকলেট বা চিউইংগাম খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হলে ধূমপানের আগ্রহ চলে যাবে।
৫) যে কোনও অভ্যাস থেকে বেরোতে খানিক সময় লাগে। তবে নিজের চেষ্টায় ধূমপানের আসক্তি ত্যাগ করতে না পারলে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।