বর্তমানে, হৃদশল্য চিকিৎসার এই পদ্ধতিটি ইতিমধ্যেই ৪০০০টিরও বেশি ক্ষেত্রে সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলাফলও চোখে পড়ার মতো।
হৃদশল্য চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতি
কার্ডিয়াক ব্লকেজ এবং বাইপাস সার্জারির মতো শব্দগুলি বেশিরভাগ মানুষের কাছে অত্যন্ত ভয়ের। আর কেনই বা হবে না? ইতিহাস বলেছে, হৃদরোগ এবং হৃদশল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে বরাবরই রোগীর শারিরীক অসুস্থতা বা জটিলতার হার অত্যন্ত বেশি। খরচও কম নয়! অথচ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগীদের সংখ্যাও বেড়ে চলছে। এই পরিস্থিতিতে হৃদশল্য চিকিৎসায় নতুন পথ দেখাচ্ছেন কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের হৃদশল্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক সুশান মুখোপাধ্যায়।
এবার আপনার প্রশ্ন হতে পারে হৃদশল্য চিকিৎসার এই নতুন পথটি কী? চিকিৎসক সুশান মুখোপাধ্যায় জানালেন হৃদশল্য চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতির কথা — মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি বা হার্টের মাইক্রোসার্জারি। এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর বুকে এক বা দু’ইঞ্চি ছিদ্র করে পাঁজরের মধ্য দিয়ে হার্ট অপারেশনটি করা সম্ভব। প্রচলিত ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’র মতো পাঁজরের হাড় কেটে নয়, বরং পেশির অন্তবর্তী স্থান থেকে এই অস্ত্রোপচারটি করা হয়ে থাকে।
আধুনিক হৃদশল্য চিকিৎসায় এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। এর পিছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ৯৫ শতাংশ অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। সুবিধাগুলিও তাৎপর্যপূর্ণ। এই ধরনের শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীকে অপেক্ষাকৃত কম দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। পাশাপাশি, বাইরে থেকে রক্তের প্রয়োজনীয়তাও কম হয়। সর্বোপরি রোগী খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। পাশাপাশি, যে সমস্ত রোগীদের কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সংক্রমণের সমস্যা কমায়।
এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতে তরুণ প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মূলত যাঁরা চান না যে তাঁদের শরীরে অস্ত্রোপচারের দাগ থাকুক। আবার অন্যদিকে, এই পদ্ধতিটি বয়স্ক রোগীদের জন্যও সমানভাবে উপযুক্ত। মূলত তাঁদের ক্ষেত্রে যাঁরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং যাঁদের শরীর ওপেন সার্জারি সহ্য করতে অক্ষম।
একটি সাধারণ প্রশ্ন যা চিকিৎসক সুশান্ত মুখোপাধ্যায়কে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করা হয় তা হল এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ শল্যচিকিৎসা করা সম্ভব কিনা। এর উত্তরে চিকিৎসক জানান, ভালভ অপারেশন, কার্ডিয়াক টিউমার অপসারণ, কার্ডিয়াক হোল মেরামত এবং মাল্টি ভেসেল করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং এবং অন্যান্য অনেক শল্যচিকিৎসায় এই পদ্ধতির ব্যবহার করা যেতে পারে।
বর্তমানে, হৃদশল্য চিকিৎসার এই পদ্ধতিটি ইতিমধ্যেই ৪০০০টিরও বেশি ক্ষেত্রে সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলাফলও চোখে পড়ার মতো। এই চিকিৎসার পরে রোগীরা সুস্থ আছেন এবং সংক্রমণের হারও কম। চিকিৎসক আত্মবিশ্বাসী যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিনিমালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি রোগীদের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।
এই প্রতিবেদনটি অ্যাপোলো হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।