আগের ‘ইউয়িংস সারকোমা’ থেকেই ঐন্দ্রিলার মস্তিষ্কে দেখা দেয় ‘মেটাস্টেসিস’। ছবি: ফেসবুক
‘ইউয়িংস সারকোমা’-র রোগী ছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। রোগকে হারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেও এসেছিলেন। কিন্তু ক্যানসার পিছু ছাড়েনি। তৃতীয় বার ফিরে এসেছিল মারণরোগ। হাওড়ার যে বেসরকারি হাসপাতালে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা ভর্তি ছিলেন, সেখান থেকে জানানো হয়েছে, নীরবে সেই রোগ মাথায় ছড়িয়ে পড়েছিল। সম্ভবত সেই কারণেই একাধিক বার স্ট্রোক হয় অভিনেত্রীর।
১ নভেম্বর স্ট্রোক হয় ঐন্দ্রিলার। ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। প্রথম থেকেই অভিনেত্রীর অবস্থা ছিল সঙ্কটজনক। ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। সিটি স্ক্যানে দেখা যায় মাথার বাঁ দিকে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হয়েছে তাঁর। জরুরি ভিত্তিতে করতে হয় অস্ত্রোপচার। বায়োপসিতে দেখা যায়, আগের সেই ‘ইউয়িংস সারকোমা’ থেকেই মস্তিষ্কে দেখা দিয়েছে ‘মেটাস্টেসিস’। অর্থাৎ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়েছে ক্যানসার।
হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয়, এই মারণরোগে রোগীর প্রাণরক্ষা করা খুবই কঠিন। তবু স্নায়ু চিকিৎসক, ক্যানসারের চিকিৎসক, রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট-সহ চিকিৎসকদের একটি গোটা দল চেষ্টা করে তাঁকে সুস্থ করে তোলার। বাইরের হাসপাতালের চিকিৎসকেরও পরামর্শ নেওয়া হয়। কিন্তু সফল হয়নি চেষ্টা। অস্ত্রোপচারের ১০ দিনের মাথায় ফের মাথার বাঁ দিকে গুরুতর স্ট্রোক হয় তাঁর। পরে স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কের ডান দিকেও। চিকিৎসকদের ধারণা, ক্যানসারের কারণেই ঘটে এই ঘটনা। ক্রমাগত কমতে থাকে চেতনার মাত্রা। শেষে একাধিক বার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। ২০ তারিখ দুপুরে ফের ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয় তার। বেলা ১২টা ৫৯-এ চলে যান ঐন্দ্রিলা।
ক্যানসার ফিরে আসা নিয়ে চিকিৎসক ইন্দ্রনীল ঘোষ বলেন, “এই সব ক্যানসার খুবই আক্রমণাত্মক হয়। ফিরে আসারও আশঙ্কাও বেশি। প্রথম বার চিকিৎসা করে সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে মনে হলেও, কিছু দিন পর আবার ফিরে আসতে পারে ক্যানসার। বিশেষ করে ব্লাড ক্যানসার, সারকোমা, ব্রেন টিউমার, সবগুলিরই ৫ বছরের মধ্যে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। আর এক বার ফিরে এলে তা নির্মূল করা খুবই কঠিন।”
ব্লাড ক্যানসার, সারকোমা, ব্রেন টিউমার, সব গুলিরই ৫ বছরের মধ্যে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। —ফাইল চিত্র
চিকিৎসক অদ্রিজা রহমান মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কেমোথেরাপি ক্যানসারের খারাপ কোষগুলিকে নষ্ট করে দেয়। ভাল কোষগুলিকে বাঁচিয়ে রাখে। অনেক সময় কিছু খারাপ কোষ ঘাপটি মেরে বসে থাকে। যেগুলি কেমোথেরাপিতেও মরেনি। সেই কোষগুলির রক্তস্রোতে প্রবাহিত হয়ে ফুসফুস, মস্তিষ্ক এবং দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
২০১৫ সাল, ৫ ফেব্রুয়ারি ঐন্দ্রিলা প্রথম বার জানতে পারেন ক্যানসার বাসা বেঁধেছে দেহে। তখন তিনি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। অস্থিমজ্জায় ধরা পড়ে ক্যানসার। ‘ইউয়িংস সারকোমা’ এক ধরনের হাড় ও হাড়সংলগ্ন নরম টিস্যুর ক্যানসার। লড়াইয়ের সেই শুরু। দিল্লির ‘এমস’-এ শুরু হয় চিকিৎসা। টানা দেড় বছর চিকিৎসা চলার পর ২০১৬ সালে সুস্থ হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী। ফের ছন্দপতন ঘটে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ডান ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। ফের ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে। কেমো, রেডিয়েশন, অস্ত্রোপচার— আবার সেই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় অভিনেত্রীকে। আবারও লড়াই করে ফিরে এসেছিলেন বটে। তৃতীয় বার আর পারলেন না। দাঁড়ি পড়ল দীর্ঘ লড়াইয়ে।