২০২১ সালে অভিনেত্রীর ডান দিকের ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। ছবি: ফেসবুক।
শিশুদের ক্যানসার ও প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণীদের ক্যানসারের মধ্যে সত্যিই সেই অর্থে কোনও প্রভেদরেখা টানা যায় না। তবে মোটামুটি করে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সি ব্যক্তিদের দেহে যে ক্যানসারগুলি বেশি দেখা যায় সেগুলিকেই তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যানসার বলা হয়।
সাধারণ ভাবে শৈশবে যে ক্যানসারগুলি বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে অনেকগুলিই জিনগত সমস্যা থেকে তৈরি। আবার বেশি বয়সে যে ক্যানসার দেখা যায়, সেগুলির পিছনে অনেক সময় থাকে অতিরিক্ত ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও পরিবেশগত বিভিন্ন রিস্ক ফ্যাক্টর। কিন্তু অল্পবয়সি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যে ক্যানসার কম দেখা যায়, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশেষ কোনও ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ থাকে না। আনন্দবাজার অনলাইনকে এমনই বলছিলেন ক্যানসার চিকিৎসক ইন্দ্রনীল ঘোষ। চিকিৎসক বলেন, “খুব অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রে, বংশে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে, কিংবা কোনও কারণে রেডিয়েশনের সংস্পর্শে এলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসার দেখা দিতে পারে। কিন্তু সেই সংখ্যা শতাংশের বিচারে নামমাত্র। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও কারণ জানা যায় না।”
‘আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি’ বলছে, বয়স ৪০ ছোঁয়ার আগেই হতে পারে একাধিক ক্যানসার। ২০ থেকে ৩৯ বছরের মদ্যে সবচেয়ে বেশি যে ক্যানসারগুলি দেখা যায় সেগুলি হল—
১। স্তন ক্যানসার
২। লিম্ফোমা বা লসিকাগ্রন্থির ক্যানসার (নন-হজকিন্স এবং হজকিন্স)
৩। মেলানোমা বা ত্বকের ক্যানসার
৪। সারকোমা বা পেশি এবং হাড়ের মতো সংযোগকারী টিস্যুর ক্যানসার
৫। মহিলাদের যৌনাঙ্গের ক্যানসার (সারভিক্স বা জরায়ুমুখ এবং ডিম্বাশয়)
৬। থাইরয়েড ক্যানসার
৭। শুক্রাশয়ের ক্যানসার
৮। কোলোরেক্টাল ক্যানসার বা মলাশয় ও বৃহদন্ত্রের ক্যানসার
৯। মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের টিউমার
শৈশবে ক্যানসার দেখা দিলে সেই ক্যানসার অল্প বয়সে ফিরে আসতে পারে। —ফাইল চিত্র
এর মধ্যে কিছু ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে কিংবা বেড়ে যেতে পারে। যেমন— ২৫ বছর বয়সের আগেই লিম্ফোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। উল্টো দিকে স্তন, জরায়ুমুখের ক্যানসার এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসার দেখা দেওয়ার আশঙ্কা ২৫ বছর বয়সের পরে আরও বেড়ে যায়। তবে এই সবই পরিসংখ্যানের কথা। ক্যানসার এমন একটি রোগ যা কার্যত যে কোনও বয়সে যে কোনও মানুষের হতে পারে। অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা ২০১৫ সালে প্রথম জানতে পারেন, তাঁর অস্থিমজ্জায় কর্কটরোগ বাসা বেঁধেছে। ২০১৬ সালে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন অভিনেত্রী। তবে সুস্থতা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০২১ সালে আবার অভিনেত্রীর ডান দিকের ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে।
অনেক সময়ে শৈশবে ক্যানসার দেখা দিলে সেই ক্যানসার অল্প বয়সে ফিরে আসতে পারে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্যানসার নিয়ে চিকিৎসক ইন্দ্রনীল ঘোষ বলেন, “এই সব ক্যানসার খুবই আক্রমণাত্মক হয়। আবার ফিরে আসারও আশঙ্কা থাকে। প্রথমে দেখা গেল চিকিৎসা করে সব কিছু ঠিক হয়ে গেল, কিন্তু কিছু দিন পর আবার ফিরে আসতে পারে ক্যানসার। বিশেষ করে ব্লাড ক্যানসার, সারকোমা, ব্রেন টিউমার, সবগুলিরই ৫ বছরের মধ্যে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। আর ফিরে এলে তা নির্মূল করা খুবই কঠিন।” শুধু ক্যানসারই নয়, অনেক সময়ে ক্যানসার যখন ফিরে আসে, তখন আনুষঙ্গিক লক্ষণ হিসাবে নানা সমস্যা দেখা দেয়। দেখা দিতে পারে রক্তবাহের সমস্যাও, আর তা থেকে স্ট্রোক হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।