আইভিএফ-এর সাহায্যে সন্তানধারণ করলে কী কী বদল আসে শরীরে? ছবি: সংগৃহীত।
বেশি বয়সে বাবা-মা হওয়ার পরিকল্পনা বাড়িয়ে দিচ্ছে বন্ধ্যত্বের সমস্যা। পড়াশোনা শেষ করে কয়েক বছর জমিয়ে চাকরি করার পর অনেক মহিলাই এখন তিরিশ বছরের পর বিয়ে করছেন। তার পর দাম্পত্য উপভোগ করে যখন কেউ মা হওয়ার কথা ভাবেন, দেখা যায়, তাঁর বয়স ৩৫ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বয়স বাড়লে সন্তানধারণের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা হতেই পারে। তা ছাড়া কর্মব্যস্ত জীবনে অত্যধিক মানসিক চাপ ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণেও সন্তানধারণে সমস্যা হয়ে থাকে। ইদানীং আইভিএফ অথবা ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক দম্পতি সন্তানসুখ লাভ করছেন। পদ্ধতিটি বেশ খরচসাপেক্ষ। স্বাভাবিক নিয়মে সন্তানধারণ করতে পারবেন না, এই খবর পাওয়ার পর অনেক দম্পতিই মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যান। সে ক্ষেত্রে আইভিএফ পদ্ধতি বেছে নিলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, ব্যাপারটা তেমনও নয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার আইভিএফও সফল হয় না। তাই আগে থেকেই সে বিষয়ে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনিও কি এই পদ্ধতিতে সন্তানধারণের কথা ভাবছেন? তা হলে জেনে নিন এর খুঁটিনাটি।
১) আইভিএফ পদ্ধতিতে মহিলাদের শরীরে নানা রকম হরমোন ইনজেক্ট করা হয়। এই প্রক্রিয়া সাধারণ পদ্ধিতে সন্তানধারণের তুলনায় অনেক বেশি জটিল ও কষ্টদায়কও। এই প্রক্রিয়ায় মহিলাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। গোটা আইভিএফ চলাকালীন ছয় থেকে আট সপ্তাহে মহিলাদের মেজাজ বিগড়ে যাওয়া, শরীরে ব্যথা-যন্ত্রণা, অস্বস্তির মতো নানা সমস্যা শুরু হয়।
২) প্রথম আইভিএফ চক্র ব্যর্থ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তিনি ভবিষ্যতে আর কোনও দিন অন্তঃসত্ত্বা হতে পারবেন না। চিকিৎসকেরা ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বার করে ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়াকে সফল করার ব্যবস্থা নিতেই পারেন। একটি আইভিএফ চক্র ব্যর্থ হলে সাধারণত খুব বেশি কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে দু’মাসের মধ্যেই আবার নতুন চক্র শুরু করা সম্ভব। চার থেকে পাঁচটি আইভিএফ চক্রের পর মহিলারা সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, এমন ঘটনাও বিরল নয়। তবে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা অবশ্যই মহিলাদের বয়স ও শারীরিক পরিস্থিতির উপর বেশি নজর দেন।
আপনিও কি আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানধারণের কথা ভাবছেন? ছবি: সংগৃহীত।
৩) আইভিএফ পদ্ধতি শুরু করার আগে মানসিক চাপমুক্ত থাকা ভীষণ জরুরি। মানসিক চাপ যে শুধু সন্তানধারণে সমস্যা সৃষ্টি করবে, তা-ই নয়, শরীরে নানা রকম গোলমালের কারণও হতে পারে। চাপমুক্ত থাকতে প্রয়োজনে যোগাসন, ডায়েরি লেখা, প্রাণায়াম, হাঁটা, গান শোনা, কোথাও বেড়াতে যাওয়া— ইত্যাদি করা যেতে পারে। মানসিক ভাবে প্রস্তুত না হলে এই প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব নয়। খুব বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই পেশাদার কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া জরুরি।
৪) অনেকে মনে করেন, আইভিএফ পদ্ধতিতে একাধিক ভ্রূণ স্থানান্তরিত করা হলেই একাধিক সন্তানের জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই ধারণা ভুল। বরং এমনটা করলে সন্তানধারণের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। এমনকি, গর্ভপাতের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। চিকিৎসকেরা সাধারণত একটি ভ্রূণ স্থানান্তরিত করার ক্ষেত্রেই বেশি জোর দেন।
৫) আইভিএফ পদ্ধতি অনেকটাই খরচসাপেক্ষ। কলকাতার কোনও ভাল মানের হাসপাতালে গোটা পদ্ধতিটি করাতে কম পক্ষে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ পড়বে। হাসপাতাল ভেদে খরচ আরও বাড়তে পারে। কোনও নির্ভরযোগ্য হাসপাতালেই এই চিকিৎসা করানো শ্রেয়।