মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে কোন কোন বিষয় অনুশীলন করা দরকার? ছবি: সংগৃহীত।
বয়স হলে স্মৃতি ঝাপসা হয়ে আসে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও কমে যায়। কিন্তু তাই বলে কম বয়সে যে কোনও সমস্যাই হয় না, তা নয়। অনেক সময় অতিরিক্ত কাজের চাপ, উদ্বেগ, এমনকি পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবেও কোনও কিছু মনে রাখায় বা কাজ করতে গিয়ে মনঃসংযোগের অভাব হতে পারে। পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা দেখা দেয়। তবে দৈনন্দিন যাপনে বেশ কিছু কাজ ও অভ্যাস মস্তিষ্ককে সচল রাখতে ও তার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজে আসতে পারে। চাইলে সেগুলি অনুশীলন করতে পারেন।
নতুন শেখা
ছাত্রজীবন হোক কিংবা বেশি বয়েস, নতুন কিছু শেখার অভ্যাস মস্তিষ্ক সচল রাখতে সাহায্য করে। নতুন খেলা, ভাষা শেখা, শিল্পচর্চা— সেই তালিকায় অনেক কিছুই থাকতে পারে। কোনও কিছু শিখতে হলে মাথা ঘামাতে হয়। মস্তিষ্ককেও নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
সঙ্গীতচর্চা
গানবাজনা, বাদ্যযন্ত্রের চর্চা যেমন মন ভাল রাখে, তেমনই মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আমেরিকা এবং জাপানে এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। তাতেই দেখা গিয়েছে, সঙ্গীত শ্রবণ ও গান গাওয়া মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশকে সক্রিয় করে তুলতে পারে। এই অংশই মনে রাখা, যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে কথা বলতে পারা, আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দু’টি গবেষণাতেই দেখা গিয়েছে, বয়স্কদের পুরনো স্মৃতি উস্কে দিতে সুরের চর্চা সহায়ক।
থার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত বাথ ইজ়রায়েল ডিকোনেস মেডিক্যাল সেন্টারে হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্ট্রোক বা অন্য কারণে মস্তিষ্কের বাম অংশ ক্ষতির হয়েছে যাঁদের, তাঁদের সুস্থ করতে সঙ্গীত কার্যকর। বিশেষত কণ্ঠসঙ্গীতের অনুশীলন এই ধরনের রোগীদের সুস্থ হতে সাহায্য করে।
ভাষা শিক্ষা
গবেষণা বলছে, নতুন ভাষা শেখার সময় মস্তিষ্কে বদল হয়। দেখা গিয়েছে, যাঁরা একটি ভাষা জানেন তাঁদের চেয়ে যাঁরা দু’টি ভাষা শিখেছেন তাঁদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বেশি। পড়ুয়াদের উপরেও এ নিয়ে সমীক্ষা হয়েছে। তাতেও দেখা গিয়েছে, নতুন ভাষা শিক্ষা ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনাতেও উন্নতি ঘটিয়েছে। ২০২২ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, একটি ভাষা জানা পড়ুয়াদের চেয়ে, দু’টি ভাষা শেখা পড়ুয়াদের ৯০ শতাংশই সমস্ত বিষয়ে ভাল ফল করেছে। ভাষা শেখায় কথা বলা, ভাবনা, যুক্তিবোধ উন্নত হয়েছে। ভাষা শেখার সময় মস্তিষ্ককে নতুন তথ্য আহরণ, বিশ্লেষণ এবং তা থেকে যুক্তি খুঁজতে হয়।
খেলা
দাবা, সুদোকু, শব্দছক ইত্যাদি খেলার জন্যেও মাথা খাটাতে হয়। এ ক্ষেত্রে, মনঃসংযোগ এবং যুক্তিবুদ্ধির বিশেষ প্রয়োজন হয়। যার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। একাধিক গবেষণা বলছে, যে সমস্ত পড়ুয়া দাবা খেলেন, তাঁদের মধ্যে অঙ্ক কষার ক্ষমতা, যে কোনও বিষয় বোঝা ও ব্যাখ্যার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
শরীরচর্চা, প্রাণায়াম
নিয়মিত শরীরচর্চায় মস্তিষ্কও সতেজ থাকে। এতে শরীরের প্রতিটি প্রান্তে ভাল ভাবে অক্সিজেন পৌঁছয়। ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রাণায়ামও মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং মনঃসংযোগে সাহায্য করে। প্রাণায়ামের নিয়মিত অভ্যাস মেজাজ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।