শ্রীজিতা পাল, বিনোদিনী গার্লস হাই স্কুল। নিজস্ব চিত্র।
গত বছর স্কুলে একটি ওয়ার্কশপের মাধ্যমে প্রথম জানতে পারি আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে ‘শব্দ জব্দ’ নামক অভিনব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। বাংলা ভাষা, বানান, উচ্চারণ নিয়ে এই খেলার কথা শুনে তৎক্ষণাৎ আগ্রহ জাগে আমার এবং বন্ধুদের মনে। স্কুল টিমের অন্যতম সদস্য হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। এক এক করে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছই আমরা। প্রথমে একটু ভয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
চূড়ান্ত পর্বের আয়োজন করা হয়েছিল রবীন্দ্রসদনে। দিনটা ২৭ জুলাই। প্রতিযোগিতার এত বড় মঞ্চের চূড়ান্ত পর্বে এসে যতই আত্মবিশ্বাস থাকুক না কেন, বুক দুরুদুরু যেন থামতেই চাইছিল না! আর তার কারণও ছিল! প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছে দেখি, দু’টো-চারটে নয়, রাজ্যের ১৫৩টি বিদ্যালয় বাংলা ভাষার বৈচিত্র্যকে ঘিরে শব্দের এই মহা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। তা দেখেই ভয় আর দুশ্চিন্তা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল! তবে সেখানকার সমস্ত ব্যবস্থাপনা, মানুষজন ছিলেন অত্যন্ত সহমর্মী। তাই ধীরে ধীরে একটু শান্ত হই।
এর পর নির্ধারিত সময়ে শুরু হয় চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা। ধীরে ধীরে এক একটি ধাপ পেরোতে থাকি। কিন্তু তখনও ভাবতেই পারিনি যে এই স্থানে আমরা পৌঁছতে পারব। ভাল খেললেও একটু চিন্তা ছিলই। প্রতিযোগিতার শেষে যখন ষষ্ঠ স্থানাধীকারী হিসাবে যখন বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়ের নাম ঘোষণা করা হল, তখন শেষমেশ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম আমরা। সকলেই খুব আনন্দ পেয়েছি।
‘শব্দ জব্দ’ শুধুমাত্র একটা প্রতিযোগিতা নয়, এটি বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এক অসাধারণ উদ্যোগ। বাঙালি যেখানে বাংলায় কথা বলতে ভুলে যাচ্ছে, ভুলে যাচ্ছে যে এটা তার মাতৃভাষা, সেখানে দাঁড়িয়ে মাতৃভাষার এই শোচনীয় পরিস্থিতিতে ‘শব্দ জব্দ’-এর মতো উদ্যোগ সত্যিই অভূতপূর্ব।
তবে প্রতিযোগিতা থেকে সবচেয়ে বড় পাওনা এবং একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হল, স্বয়ং শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে আসা এবং তার অটোগ্রাফ পাওয়া। গুণী মানুষদের সান্নিধ্যে বাংলা ভাষা চর্চার এই প্রতিযোগিতা এক রকম কর্মশালার মতোই। যেখানে অংশ্রগ্রহণ করার অনুভূতি ভোলার নয়। সব মিলিয়ে দিনটা ছিল স্বপ্নের মতো। আমাদের এমন এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার অংশীদার করার জন্য আনন্দবাজার অনলাইন ও ‘শব্দ জব্দ’-কে জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।