অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিজ্ঞানের এক অমোঘ দান। এক জনের দান করা অঙ্গ দিয়ে অপরের জীবন দান। তবে সব ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটা কিন্তু খুব সহজ নয়। মূলত জীবিত দাতাদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইনি ঝক্কি রয়েছে। সহজ ভাষায় আইনি অস্ত্রপ্রচার অতন্ত্য জরুরি চিকিৎসা শল্যপ্রচার করার অনুমতি পাওয়ার পূর্বে।
অঙ্গ প্রতিস্থাপন অনেক রকম হয় যেমন কিডনি, লিভার, হার্ট প্রতিস্থাপন ইত্যাদি। ভারতের মতো দেশে সব রাজ্যে একজন কিন্তু চাইলেই যখন খুশি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে পারেন না। তার জন্য ভারতে রয়েছে ‘দ্য ট্রান্সপ্লান্টেশন অফ হিউম্যান অরগ্যানস অ্যাক্ট’ আইন। এই আইনের আওতায় পরে সব অঙ্গ প্রতিস্থাপন।
অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রধানত দু’রকমের হয়।
ক। নিকট আত্মীয়ের মধ্যে প্রতিস্থাপন বা নিয়ার রিলেটিভ ট্রান্সপ্লান্ট। এই ক্ষেত্রে কিডনি দাতাকে পরিবারের মধ্যে থেকে একজন হতে হবে, যেমন বাবা, মা, স্বামী, স্ত্রী, দাদু, দিদা, ভাই অথবা বোন।
খ। দূরের আত্মীয়ের মধ্যে প্রতিস্থাপন বা নন নিয়ার রিলেটিভ ট্রান্সপ্লান্ট। এই ক্ষেত্রে দাতা রোগীর পরিবার বর্গের বাইরের লোক হয়ে থাকেন।
তবে ক্যাডেভেরিক ট্রান্সপ্লাট বা মৃত ব্যক্তির শরীরের থেকে অঙ্গ নিয়ে রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে আইনি ঝক্কি নেই বললেই চলে। আমাদের রাজ্যে এখন মৃত ব্যক্তির থেকে অঙ্গ নেওয়া ও তার প্রতিস্থাপন ভালোভাবেই হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পূর্বে যার প্রচলন কম ছিল সাম্যক সচেতনতার অভাবে।
অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন সংশোধিত বিধিমালা ২০১৪ অনুযায়ী এই অঙ্গদানের ক্ষেত্রে রোগী এবং কিডনি দাতার মধ্যে কোনও রকম আর্থিক লেনদেন একেবারে বাঞ্ছনীয় নয়। অঙ্গ দাতা এবং তার অভিভাবকে কিডনি দানের আগে আদালতে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হলফনামা সম্মতিপত্র দাখিল করতে হবে। অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার জন্য জরুরি উল্লিখিত ডাক্তারের শংসাপত্রগুলি এবং অন্যান্য প্রভুত নথি। জীবিত এবং নিকট আত্মীয় দাতা হলে প্রয়োজন ডাক্তারের সই করা ফর্ম নম্বর ৪, ৫ বা ৬ এবং ১১ প্রয়োজন। আর জীবিত কিন্তু যদি দাতা অনাত্মীয় হয় তা হলে ফর্ম নম্বর ৪ এবং ১১ পূরণ করা আবশ্যিক।
এর পরে দাতা, গ্রহীতা এবং তাঁদের অভিভাবকদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড,প্যান কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি ছবি-সহ প্রমাণপত্র এবং উপরের উল্লেখিত নথিগুলির প্রয়োজন। তার সঙ্গে সমস্ত প্যাথোলজিকাল রিপোর্ট ও এইচএলএ রিপোর্ট নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে জমা করতে হয়। প্রত্যেক মাসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে নৈতিক কমিটির মিটিংয়ে রোগী এবং দাতা-সহ তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে সব কাগজপত্র খতিয়ে দেখে তবেই প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ নিবাসী নিকট আত্মীয়দের ক্ষেত্রে এই অনুমতি হাসপাতালের কমিটি প্রদান করে থাকে। এই হাসপাতাল কমিটিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিতি আবশ্যক।
ভিন রাজ্যের রোগী হলে সেই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র প্রয়োজন। রোগী যদি বিদেশে বসবাস করেন কিংবা বিদেশ থেকে এই দেশে আসেন, তা হলে দাতাকেও হতে হবে সেই দেশের এবং সেই দেশের কনস্যুলেট জেনারেলের অথবা এমব্যাসি অথবা হাইকমিশন দফতর থেকে ছাড়পত্র প্রয়োজন হয় সঙ্গে চাই অনেক আইনি নথিপত্র।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কে ধন্যবাদ তাদের অতুলনীয় সহায়তার জন্য। তাঁদের নির্দেশিকা অনুযায়ী মানুষের মৃত্যুর পরেও তাঁর হৃদয়(হার্ট), বৃক্ক(কিডনি) এবং যকৃৎ(লিভার) প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। মৃত ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ফর্ম ৮ পূরণ করা আবশ্যিক। তবে মনে রাখবেন যদি রোগী ব্রেন স্টেম ডেড বা মস্তিষ্কের মৃত্যু হয় কেবল সেই ক্ষেত্রেই মৃতদেহের থেকে অঙ্গ নিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
মনে রাখবেন, যথাযথ আইন মেনেই অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন অন্যথায় সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে পারে রোগী এবং তার পরিবারবর্গ। সেই কারণে অভিজ্ঞ আইনজ্ঞের আইনি সহায়তা নেওয়া আবশ্যক। মনে রাখা প্রয়োজন যে সাম্প্রতিককালে কিছু অসাধু ব্যক্তি এই অঙ্গ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত মানুষ থেকে সাবধান! অঙ্গ বেচা এবং কেনা দুটোই কিন্তু মারাত্মক অপরাধ।অন্যথায় দুই থেকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড সহ জরিমানা হতে পারে।
অন্যকে নতুন জীবন দিন। এগিয়ে আসুন এবং অঙ্গীকার করুন অঙ্গদানের। ক্লিক করুন পাশের লিঙ্কে— bit.ly/47a6kLV